কানাডার কুইবেক প্রদেশের জর্জ ব্রশার্ড তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করেছেন কীটপতঙ্গের পেছনে। আইন পেশার রমরমা জীবন বাদ দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছিলেন পতঙ্গের সন্ধানে। তার সংগ্রহশালায় আড়াই লাখের অধিক প্রজাতি আছে যা বিশ্বের অনেক জাদুঘরেও নেই। এখন মন্ট্রিলে অবস্থিত তার ওই জাদুঘরে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ আসে বিশাল এই সংগ্রহ দেখতে।
বাসাবাড়িতে কোনো পতঙ্গ প্রবেশ করলে মানুষ সেগুলোকে মেরে ফেলে, এমন প্রবণতা স্বাভাবিক। কিন্তু জর্জ টেলিভিশনে নিয়মিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন কোন পতঙ্গ কীভাবে প্রকৃতির জন্য ভালো।
মেক্সিকোর রেইনফরেস্ট অঞ্চলে গিয়ে একবার তিনি দুর্লভ এক পতঙ্গ আবিষ্কার করেন। তার ওই আবিষ্কারের ঘটনা নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হচ্ছে। জর্জের জন্ম ১৯৪০ সালে কুইবেকের লা প্রেইরিতে। তার বাবার হাত ধরেই ব্রশার্ড শহরের উৎপত্তি। ১৯৮৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় সায়েন্স ক্লাসের জন্য দুই প্রজাতির পতঙ্গ রাখা হয়েছিল। আমি ভাবছিলাম ওই পতঙ্গ দুটিকে নিয়ে অনেকটা সময় কাটাতে পারব। তখন থেকেই পোকামাকড়ের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশাল সংগ্রহ যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দেখি তখন খুব ব্যথিত হই। জানি যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমি এ বিষয়ে একজন বড় মাপের সংগ্রাহক। বিপুলসংখ্যক পতঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিজেকে দেখি।’
১৯৮৫ সালের দিকে তিনি মন্ট্রিলের মেয়রের কাছে একটি পতঙ্গ জাদুঘর নির্মাণের আহ্বান জানান। মেয়র জ্যঁ দারপৌ তাকে মন্ট্রিলের বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রধান পিয়েরে বুরকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। ১৯৮৭ সালে জর্জ তার পুরো সংগ্রহ শহর কর্র্তৃপক্ষকে দান করেন যাতে ওই পতঙ্গগুলো মানুষ দেখতে পারে। ১৯৯০ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেনের একাংশে ওই জাদুঘর তৈরি করে সেখানে পতঙ্গগুলো রাখা হয়। জর্জ ওই জাদুঘরের প্রধান হিসেবে ১০ বছর কাজ করেছিলেন।
জাদুঘরটি শুধু দর্শনার্থীদের জন্য বিস্ময়কর নয়, বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু গবেষক প্রতি বছর ওই জাদুঘরে গবেষণার কাজে যান। প্রকৃতির এমন অনেক বিস্ময়কর পতঙ্গ রয়েছে ওই জাদুঘরে যার অস্তিত্ব এখন আর নেই।