বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ হত্যার শিকার হননি, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজ সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তভার পায় সংস্থাটি।
পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুর পাঁচটি কারণ তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, সালমান শাহ খুন হননি। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, একজন চিত্রনায়িকার সঙ্গে ‘অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা’; স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ; মাত্রাধিক আবেগপ্রবণতার কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা; মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে অভিমানে রূপ নেওয়া এবং দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতার কারণে তিনি আত্মহত্যা করেন।
বনজ কুমার বলেন, “পিবিআই’র তদন্তকালে ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৪৪ সাক্ষীর জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করা হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে থাকাকালে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। এ ঘটনায় তখন অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে পুলিশ।
তবে সালমান শাহের বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী দাবি করেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুলাই অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেওয়ার আবেদন জানান কমরউদ্দিন।
অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করার জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন আদালত।
১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়। সিআইডির সে প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সালমান শাহের বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন।
২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যু নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন।
নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।
এরপর মামলাটির তদন্তভার পায় র্যাব। র্যাবের তদন্ত আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬’র বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। তারপর মামলাটির তদন্তভার পরে পিবিআই’র হাতে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার কথা ছিল। পিবিআই ওই তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ পুনঃতদন্ত প্রতিবেদনটি ১৮ মার্চ জমা দেওয়ার আদেশ দেন।