পাকিস্তান সফরে যাওয়ার ব্যাপারে ব্যক্তিগত মতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে—বিসিবি থেকে কত কতবার বলা হয়েছে কথাটি! সে আশ্বাসে নিরাপত্তা নিয়ে পরিবারের আশঙ্কার কারণে মুশফিকুর রহিম যাননি প্রথম দফার পাকিস্তান সফরে। অথচ এর ‘শাস্তি’ হিসেবে এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টেও এই ব্যাটসম্যানকে না খেলানোর চিন্তা ক্রিকেটের হর্তাকর্তাদের। সেটি কেউ সরাসরি না বললেও দুয়ে-দুয়ে চার মেলাতে অসুবিধা হয় না এতটুকুন।
অনুমিত কারণেই এ নিয়ে আলোচনায় অনাগ্রহ মুশফিকের। ইনজুরি সমস্যায় বিসিএলের প্রথম রাউন্ড খেলতে না পারার প্রসঙ্গ টেনে এটুকুই কেবল বলেন, ‘কাল (আজ) আমার ফিটনেস টেস্ট। যদি তাতে পাস করি এবং বিসিএলের পরের রাউন্ডগুলোয় ভালো পারফরম করি, তাহলে জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলার জন্য আমি অ্যাভেইলেবল। এ নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নয় প্লিজ।’
কিন্তু প্রশ্নের জোয়ার যে তাতে থামছে না। যেটির শুরু বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসানের পাকিস্তান থেকে ফেরার পরের সংবাদ সম্মেলনে। অতীতে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের সিরিজ মিস করার সূত্র ধরে মুশফিককে টেনে আনেন তিনি, ‘এভাবে হঠাৎ না করলে তো আমাদের জন্য সমস্যা। এর সমাধান করতে হবে। আমাদের আগে বলতে হবে, আগে মানে ছয় মাস আগে।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো, ২২ জানুয়ারি যে পাকিস্তান সফরে যাবে বাংলাদেশ, সে সিদ্ধান্ত ১৪ জানুয়ারি নিয়েছে বিসিবি। বোর্ড যেখানে আট দিন আগে সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে ক্রিকেটাররা কিভাবে ছয় মাস আগে সিদ্ধান্ত দেবেন? আবার কোচিং স্টাফের পাঁচ সদস্য যে পাকিস্তান সফরে যায়নি, তাঁদের ব্যাপারেও কি অভিন্ন অবস্থান বিসিবির?
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ মুশফিকের জন্য সেদিনই অনিশ্চিত হয়ে যায় বিসিবি সভাপতির আরেক কথায়, ‘মুশফিক বলল, পাকিস্তান যাবে না। এখন সামনের টেস্টে নতুন কাউকে নিলাম। জিম্বাবুয়ের সাথে আবার মুশফিক খেলবে। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের টেস্টের জন্য আবার বদল। প্রতি খেলার আগে পরিবর্তন করা খুব কঠিন।’ কাল কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কথায়ও এর প্রতিধ্বনি, ‘পাকিস্তান থেকে ফেরার পর আমরা নিজেদের মূল্যায়ন করব। মনে রাখতে হবে, সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে মুশফিক রান পেয়েছে। একই সঙ্গে এটিও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, একটি ব্যাটিং লাইনআপ বেছে নেওয়া, এক টেস্ট পর তা বদলানো, পরে তৃতীয় টেস্টের জন্য আরেক দফায় পরিবর্তন করাটা কঠিন। আমি ছেলেদের টানা খেলাতে চাই।’
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এ ব্যাপারে মুশফিকের ফিটনেস ইস্যু নিয়ে আসেন সামনে। তবে তাতে উতরালেই যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে ফিরবেন, স্পষ্ট করেননি তা, ‘মুশফিক আগে ফিট হোক। খেলুক। পারফরম করুক। আর আমরাও পাকিস্তান থেকে ফিরি। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলে কাউকে যোগ করতে চাইলে করা যাবে।’ অধিনায়ক মমিনুল হক অবশ্য ওসব প্যাঁচালো ভাবনায় না নিয়ে নিজের মত জানান সরাসরি, ‘এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুশফিক ভাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলবেন কি না। অবশ্যই খেলবেন। বাংলাদেশে যেহেতু খেলা অবশ্যই খেলবেন।’
কিন্তু বিসিবি সভাপতির কথায় অন্য ভাবনার সুর। সে তালে সম্মতির মাথা নাড়ছেন কোচ, প্রধান নির্বাচকও। বোর্ড হয়তো ভুলে গেছে, পাকিস্তান না যাওয়ার ‘অপশন’টা ক্রিকেটারদের সামনে উন্মুক্ত রেখেছিলেন তাঁরাই। ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে তো বোর্ড ক্রিকেটারদের কাছে জানতে চায় না, তাঁরা যাবেন কি যাবেন না। পাকিস্তান সফরের আগে জানতে চেয়েছে। তাতে যদি শীর্ষ ১০-১৫ ক্রিকেটার না যেতে চাইতেন, তাঁদের ছাড়াই পাকিস্তান যাওয়ার নৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকত বিসিবির। আর একা মুশফিক না যাওয়ায় তাঁকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার নৈতিক অবস্থান বোর্ডের নেই কিছুতেই।
সেটি যে ফর্মুলাতেই হোক না কেন!