জুয়েল রাজ, লন্ডন থেকে
যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যক্তির ফিক্স ডিপোজিট (স্থায়ী আমানত) থেকে ব্যাংক কর্মকর্তার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী আব্দুর রউফ। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেনে অবস্থিত লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করেন লন্ডন প্রবাসী আব্দুর রউফ।
তিনি তার লিখিত অভিযোগে বলেন, অনেক কষ্ট ও শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের একটি ব্যাংকে সঞ্চয় করি। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সফরকালে আমাদের পারিবারিক সূত্রে পরিচয় হয় ওয়ান ব্যাংক সিলেটের ইসলামপুর ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা (সেকেন্ড অফিসার) মো. সরফরাজ আলীর সাথে।
আমার সঞ্চিত অর্থের ব্যাপারে জানতে পেরে, তিনি আমাকে তার ব্যাংকে এই অর্থ ফিক্স ডিপোজিট করার ব্যাপারে অনুরোধ জানান। তার অনুরোধে আমি রাজি হয়ে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমার অগ্রণী ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ থেকে ৩০ লাখ টাকা ওয়ান ব্যাংক ইসলামপুর শাখায় জমা রাখি। ওয়ান ব্যাংক থেকে আমাকে একটি চেক প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে লন্ডনে এসে আমি ধাপে ধাপে আরও প্রায় ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওয়ান ব্যাংকের একাউন্টে জমা রাখি।
তিনি আরও বলেন, আমি গত বছর ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সফরে গেলে, দেশে পৌঁছার একদিনের মাথায় ওয়ান ব্যাংকের অফিসার মো. সরফরাজ আলী আমাকে বার বার ফোন করে অনুরোধ জানান, ওয়ান ব্যাংকে যাওয়ার আগেই যেন তিনি আমার সাথে দেখা করার সুযোগ পান। তার এই কথায় আমার সন্দেহ হলে আমি তার সাথে সাক্ষাতের আগেই ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি মো. সরফরাজ আলী আমার নামে ব্যাংক থেকে আরেকটি চেক ইস্যু করে বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে পুরো ৭৬ লাখ টাকা ২৩টি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেই তিনি এই অর্থ উত্তোলন করেন।
ব্যাংকের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর আমি রীতিমতো হতবাক হয়ে যাই। ওই দিনই সন্ধ্যায় আমার বাসায় সরফরাজ আলী তার স্ত্রী, সন্তান, মা বাবাকে নিয়ে হাজির হন। তিনি স্বীকার করে, ওই অর্থ সেই চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন। এ সময় সে আমার অর্থ ফিরিয়ে দিতেও সম্মতি জানান। এবং এই ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেন। তার স্ত্রী, পিতা-মাতার অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি রাজি হলে, তিনি আমাকে ২৬ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। ওই চেকটির অর্থ ব্যাংকে জমা হয়। এর সাথে আরও একটি ৫ লাখ টাকার চেক দিয়ে বলেন এটি আমি যেন লন্ডনে পৌছার পর ব্যাংকে জমা রাখি। বাকি অর্থ তিনি ৬ মাসের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আমি ৫ লাখ টাকার চেকটি আমার বোন জামাইকে দেশে দিয়ে আসি জমা দেওয়া জন্য। পরবর্তীতে এই চেকটি ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। এরমধ্যে বাকি অর্থ পরিশোধের ৬ মাসও পেরিয়ে গেলে, তার সাথে বার বার যোগাযোগ করা সত্বেও কোন সদুত্তর না পেয়ে আমি ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশে গিয়ে সিলেটে আইনজীবী ইশতিয়াক আহমেদ জায়গিরদারের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ প্রদান করি।
আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি আমি ওয়ান ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য। এই তদন্ত এখন পরিচালনা করেছে ওয়ান ব্যাংক। এদিকে ইতিমধ্যে এসব ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে ওয়ান ব্যাংক মো. সরফরাজ আলীকে বরখাস্ত করে। কিন্তু দু:খজনক হচ্ছে, ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত ৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধারের জন্য তিনি আমার বিরুদ্ধে উল্টো সিলেট মাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রতারণা মামলা দায়ের করেন।
তিনি জানান ৫ লাখ টাকা নাকি সে আমাকে লন্ডনে তার আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে নগদ পরিশোধ করেছেন। এখন তিনি তার চেক দাবি করছেন। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি এই চেক আদায়ে আমাকে চাপ প্রয়োগ করলে আমার বোন জামাই‘র মাধ্যমে চেকটি থানার ওসিকে হস্তান্তর করি। তার ভুয়া এই মামলায় এখন আমাকে হাজিরা দিতে হচ্ছে সিলেটে গিয়ে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হতে আমাকে দেশে যেতে হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আমার অর্থ ফেরত পেতে সকল ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিতে আমি রাজি আছি। কিন্তু আমি আশংকা করছি তার পরোক্ষ ভয়-ভীতির কারণে। তিনি হয়তো অর্থ ফেরত না দিয়ে আমার জীবননাশের ষড়যন্ত্র করতে পারেন।
আমি প্রশাসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি কর্তৃপক্ষ যেন তার কাছে পাওনা ৫০ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেন ও এই জালিয়াতের মুখোশ উন্মোচন করেন সমাজে। যাতে আমার মতো আর কেউ সরলতার সুযোগে প্রতারিত না হন।