লিখেছেন অনির্বাণ
সরস্বতী প্রতিমা মানেই সঙ্গে হাঁস।
শ্বেতপদ্মে আসীন দেবীর পরনে শ্বেতশুভ্র বস্ত্র। সাদা রঙের বীণা, রুদ্রাক্ষ ও পুস্তক দেবীর চার হাতে শোভা পায়। দেবীর পায়ের কাছে অনুগত বাহন রাজহংস। আরও নানা রূপে সরস্বতী প্রতিমা দেখা গেলেও এটাই চেনা রূপ।
প্রত্যেক দেবদেবীরই একটি করে বাহন থাকে। যার পিঠে চড়ে তাঁরা এক স্থান থেকে অন্যত্র চলাফেরা বা ভ্রমণ করেন। দেবী সরস্বতীর বাহনও তেমনই শ্বেতশুভ্র রাজহংস। তবে শুধু বহন করাই নয় হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী প্রতিটি বাহনেরই কিছু তাৎপর্য থাকে।
রাজহংসের বুদ্ধিমত্তা ও জহুরির চোখ সম্ভবত মন জয় করে নিয়েছিল দেবী সরস্বতীর। বলা হয়, শ্বেতশুভ্র হাঁসের সামনে যদি একটি পাত্রে জলের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে রাখা যায়, তাহলে সে নাকি মিশ্রণ থেকে দুধটুকুই শুষে পান করবে। আর পাত্রে পড়ে থাকবে শুধু জল। রাজহংসের এই স্বভাব জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
পণ্ডিতেরা বলেন, বিশ্বচরাচরে সর্বত্র আমরা যা কিছু দেখি, শুনি, শিখি, সবকিছু গ্রহণ করার মতো নয়। নিত্য-অনিত্য, ভাল-মন্দ নিয়েই সংসার। বিচার বুদ্ধি দিয়ে যা কিছু দরকারি, যা কিছু মঙ্গল, সেটুকুই গ্রহণ করতে হবে মানব জাতিকে। তাছাড়া, স্থল, জল ও আকাশ, সব জায়গায় বিচরণ করতে সক্ষম রাজহাঁস। ঠিক তেমন করেই জ্ঞানকে হতে হবে মুক্ত। সর্বব্যাপী হবে তার প্রকাশ।
পণ্ডিতেরা আরও বলেন, হাঁস জলে ভেসে বেড়ালেও তার পাখনা জলে ভেজে না। জল লাগলেও তা ঝেড়ে ফেলে দেয় রাজহাঁস। বিদ্যা অর্জনের পদ্ধতিও হবে অনেকটা এইরকমই। মানুষ যে জ্ঞান অর্জন করবে, তা বিদ্যার্থীকে আসক্তিমুক্ত করে গড়ে তুলবে। তাই বিশুদ্ধ জ্ঞানের বাহন হিসেবে দেবী সরস্বতীর সঙ্গে হাঁসও পুজো পেয়ে থাকে।