লিখেছেন রিপন দে
সাপ সাধারণত বিভিন্ন রঙের হয়। সবুজ, হলুদ, খয়েরি বা কালো। কিন্তু সাদা রঙের সাপের দেখা সচরাচর মেলে না। তবে এবার সাদা রঙয়ের একটি সাপের দেখা মিলেছে। সাপটি ধরা পড়েছে পাবনায়, যা দেশের প্রথম কোনো সাদা সাপ।
সাপটিকে পাবনার মধুপুর থেকে উদ্ধার করেছে নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটি।
উদ্ধারের পর বিশেষজ্ঞরা জানান, এটি বাংলাদেশে পাওয়া প্রথম কোন সাদা সাপ।
সাপটি বর্তমানে বনবিভাগের কাছে আছে কিছুটা আহত অবস্থায়। সুস্থ হলেই তা অবমুক্ত করা হবে।
সাপটি উদ্ধারের বিষয়ে নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটি প্রতিষ্ঠাতা এহসান আলী বিশ্বাস জানান, আশেপাশে যেখানেই কোনো বন্যপ্রাণী ধরা পড়ে খবর পেলেই ছুটে যায় নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটি নামের পাবনার এই সংগঠনের সদস্যরা। পরে এই প্রাণীগুলিকে সুস্থ অবস্থায় বিভিন্ন বনে অবমুক্ত করা হয়। অর্থাৎ প্রাণ-প্রকৃতির সেবাই তাদের কাজ।
বুধবার দুপুরে একটি কল আসে তার মোবাইল ফোনে। তিনি জানতে পারেন, পাবনা সদরের আতাইকুলা ইউনিয়নের মধুপুরে একটি সাপ আটক করা হয়েছে।
স্থানীয়রা সাপটিকে মেরে ফেলতে চাইলেও সেলিম নামের এক প্রাণিপ্রেমী সাপটিকে আগলে রেখেছেন।
খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান এহসান আলী বিশ্বাস। সেখানে গিয়ে তিনি সাপটিকে দেখে উচ্ছ্বসিত হন। কারণ তিনি দেখেন সাপের রঙ সাদা। যা তিনি এর আগে কখনো দেখেননি। তবে সাপটির গায়ে কিছুটা আঘাত রয়েছে।
সাদা রঙ্গের সাপটি স্থানীয় বাসিন্দা সেলিমের জালে ধরা পড়ে। সেলিম তার বাড়ির পাশের জলাশয়ে মাছ ধরতে জাল ফেলেন আর সে জালে ধরা পরে সাপটি। সাপটিকে দেখতে উৎসুক মানুষ ভিড় করে আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারতে চায়। যার কারণে সাপটির গায়ে কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটি সাপটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং এর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য সাপটির ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খানের কাছে।
এরই মধ্যে সাপটিকে বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয় বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান জানান, এই সাপটি আসলে আলাদা কোনো জাত বা প্রজাতির সাপ নয় এটি একটি নির্বিষ ‘জলঢোরা’ সাপ। মানুষের যেমন শ্বেত রোগ হয়ে চামড়া সাদা হয়ে যায় এই সাপটির বেলায়ও তাই হয়েছে। তার চামড়ায় রঞ্জক পদার্থের অভাব থাকায় চামড়া সাদা হয়েছে। ইংরেজিতে একে বলা হয় অ্যলবিনো।
তিনি আরও বলেন, অ্যলবিনোর কারণে যেকোনও প্রাণির গায়ের রঙ সাদা হতে পারে। তবে বাংলাদেশে অ্যালবিনো অন্য প্রাণিতে পাওয়া গেলেও সাপের বেলায় আমার জানামতে এটাই প্রথম । অ্যলবিনো প্রাণির দেখা পাওয়া খুব বিরল।
পাবনা থেকে উদ্ধার হওয়া সাদা সাপটি জলঢোরা। স্বাভাবিকভাবে যার গায়ের রঙ হলুদ আর কালো। অ্যালবিনো হওয়ার কারণে তার চামড়া সাদা হয়ে গেছে। এটি একটি নির্বিষ সাপ। এর ইংরেজি নাম Checkererd Keelback, বৈজ্ঞানিক নাম Fowlea piscator।
অ্যালবিনো সাপ পাওয়া যেমন বিরল তেমনি প্রকৃতে এদের ঠিকে থাকাও কষ্টকর। কারণ গায়ের রঙ সাদা হওয়ার কারণে ঈগলসহ যেকোনো শিকারির চোখে এরা সহজের ধরা পড়ে।