আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের সর্বশেষ উদ্ভাবনী সূচকে বিশ্বের সেরা উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে জার্মানি। গত ছয় বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনও দেশ দক্ষিণ কোরিয়াকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করলো।
এই সূচকে মোট ৬০টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো। তালিকাটি তৈরিতে গবেষণা, উন্নয়ন ব্যয়, উত্পাদন ক্ষমতা এবং উচ্চমানের প্রযুক্তি বিকাশে সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতাকে সূচকের মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো।
উৎপাদনে ইতিবাচক রেটিংয়ের কারণে জার্মানি প্রথম এবং উৎপাদনশীলতা কম রেকর্ড হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া দ্বিতীয়স্থানে চলে এসেছে। সিঙ্গাপুর ষষ্ঠস্থান থেকে লাফিয়ে তৃতীয়স্থানে উঠে এসেছে। এছাড়াও, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার তিনটি দেশ জায়গা পেয়েছে সেরা দশে।
জাপানের উদ্ভাবনী র্যাঙ্কিং তিন ধাপ কমেছে (জাপান এখন ১২তম অবস্থানে রয়েছে)। ২০১৩ সালে ব্লুমবার্গের উদ্ভাবনী সূচকে শীর্ষস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান নবম। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন একধাপ এগিয়ে ১৫তম অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ সালে ব্লুমবার্গের উদ্ভাবনী সূচকে সেরা দশে থাকা দেশ:
১০. ফ্রান্স
এই তালিকায় থাকা একমাত্র দেশ ফ্রান্সের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি। গতবারও দেশটির অবস্থান ছিলো ১০ এ। করপোরেট গবেষণা ও উন্নয়ন এবং টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোতে বিনিয়োগের কারণেই শীর্ষে দশে জায়গা পেয়েছে দেশটি। ফ্রান্সের শিক্ষাব্যবস্থাকে এই সূচকের জন্য বিবেচনায় আনা হয়নি।
৯. যুক্তরাষ্ট্র
ব্লুমবার্গের উদ্ভাবনী সূচক প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। প্রথমবারেই সবার শীর্ষে ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এর পরের বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ধারাবাহিকভাবে নিচের দিকে নেমে এসেছে। যদিও বিশ্বে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে উচ্চপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনী কার্যক্রম- দুটি বিষয়ে সবার থেকে এগিয়ে ছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
৮. ডেনমার্ক
ব্লুমবার্গের উদ্ভাবনী সূচকের শীর্ষ দশে রয়েছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ডেনমার্ক। দেশটি বিশ্ব উদ্ভাবনী সূচকেও ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে রয়েছে। মূলধন, গবেষণা, অবকাঠামো এবং ব্যবসার উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ডেনমার্ক।
৭. ফিনল্যান্ড
এ বছর ফিনল্যান্ডের চার ধাপ অবনমন হয়েছে। গত বছর তৃতীয়স্থানে থাকা দেশটি এবার জায়গা পেয়েছে সাতে। ফিনল্যান্ড সূচকের সব বিভাগে ভালো পয়েন্ট অর্জন করলেও শীর্ষ তিনে থাকার জন্য তা যথেষ্ট ছিলো না।
৬. ইসরাইল
মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক শক্তিধর ইসরাইল গত বছরের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়েছে। সূচকের উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে থাকলেও, গবেষণা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রথম অবস্থানে ছিলো দেশটি।
৫. সুইডেন
২০১৮ সালের দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অপর দেশ সুইডেন এবার পঞ্চমস্থানে নেমে এসেছে। দেশটি উত্পাদন বিভাগে ধারাবাহিকভাবে ভালো স্কোর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্ট স্পটিফাইয়ের এর সহযোগিতায় প্রযুক্তি খাতে উন্নতি করেছে সুইডেন।
৪. সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ড ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের শীর্ষ ২০ উদ্ভাবনী দেশের তালিকায় নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
দেশটির ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট নোভার্টিস এবং হফম্যান-লা রোচে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। এ কারণে দেশটির মূল্য সংযোজনীয় উৎপাদনের উচ্চমান নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
৩. সিঙ্গাপুর
গত বছর সব সূচকেই সিঙ্গাপুরে অর্জন ছিলো উচ্চ পর্যায়ের। ফলে দেশটি ২০২০ সালে ৬ষ্ঠ স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজনীয় উৎপাদনের উন্নতি সিঙ্গাপুরকে উপরের দিকে উঠে আসতে সহায়তা করেছে।
২. দক্ষিণ কোরিয়া
সামান্য ব্যবধানে প্রথমস্থান হারিয়েছে এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির প্রযুক্তিভিত্তিক সেরা প্রতিষ্ঠান হলো: স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স, হুন্দাই মোটরস এবং এলজি ইলেকট্রনিক্স।
সিউলের হানিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক চ্যাং সুক-গাউন ব্লুমবার্গকে বলেছেন, “আমাদের কাছে অন্যকোনও প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। আমাদের ব্যবহার করার মতো সম্পদ শুধুই মস্তিষ্ক।”
১. জার্মানি
এই তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে জার্মানি। দেশটি যখন তাদের অর্থনীতি নিয়ে লড়াই করছে, সেসময়ে এমন ফলাফল কিছুটা হলেও অবাক করেছে বিশ্বকে। ২০১৯ সালে তাদের অর্থনীতি গত ছয় বছরে তুলনায় সবচেয়ে ধীর গতিতে বেড়েছে। বাণিজ্য বিবাদ, স্বয়ংচালিত শিল্পের সংকট এবং ব্রেক্সিটের প্রভাব পড়েছে জামানির অর্থনীতিতে। এরপরও দেশটি সেরা উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।