লিখেছেন ডেভিড বার্গম্যান
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সালিশি ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক একটি আদেশ লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে চাচ্ছে বাংলাদেশের সরকার। ওই সালিশি মামলার আদেশে বলা হয়েছে যে বিএনপি সরকারের আমলে কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর সাথে গ্যাস উত্তোলন চুক্তি সম্পাদনে কোন দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়নি। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (আইসিএসআইডি) নামক আন্তর্জাতিক সংস্থার আওতাধীন উক্ত সালিশি ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি এই সিদ্ধান্তটি গ্রহন করে। তবে ট্রাইব্যুনালের সাথে জড়িতরা জানিয়েছেন যে বাংলাদেশ সরকার আইসিএসআইডির এই সিদ্ধান্তটি জনসমক্ষে প্রকাশে সম্মতি দেয়নি।সালিশি ট্রাইব্যুনালের এই সিদ্ধান্তটি শুধুমাত্র যে নাইকোর পক্ষে গিয়েছে তাই নয়, নেত্র নিউজের হাতে আসা ৫৭১ পৃষ্ঠার এই আদেশে যেসব বিশদ বিশ্লেষণ ও উপসংহার টানা হয়েছে তাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আরও নয়জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নাইকো মামলায় দুর্নীতি ও ঘুষ আদান-প্রদানের অভিযোগে বাংলাদেশের আদালতে যে ফৌজদারী মামলাটি চলমান আছে তা সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
আদেশে আইসিএসআইডি বলেছে, “[গ্যাস উত্তোলন] চুক্তিতে অনুমোদন লাভে নাইকো প্রধানমন্ত্রীকে [খালেদা জিয়া] ঘুষ দিয়েছে বলে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেসবের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। নাইকো প্রকল্পের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীকে ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে কোন স্বতন্ত্র প্রমাণ বা যুক্তিও নেই।”
সালিশি এই ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশে চলমান ফৌজদারী মামলাটিতে অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিদেরকেও নির্দোষ সাব্যস্ত করেছে। এদের মধ্যে প্রাক্তন আইন মন্ত্রী মওদুদ আহমেদের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, “যৌথ উদ্যোগ চুক্তির অংশ হিসেবে মওদুদ আহমেদের আইনি প্রতিষ্ঠান মওদুদ আহমেদ এন্ড এসোসিয়েটসকে নাইকো যে অর্থ দিয়েছে বা প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রাপ্ত যেসকল আইনি মতামত নাইকো ব্যবহার করেছে তাতে কোন অনিয়ম বা অযাচিত কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। মন্ত্রীর স্বার্থের দ্বন্দ্ব [কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট] বা দুর্নীতির যোগসাজসের কোন প্রমাণও এই ট্রাইব্যুনাল পায়নি।”
আইসিএসআইডির এই সিদ্ধান্তে ২০১৭ সালে নাইকোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হাইকোর্টের একটি আদেশেরও কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে সেই আদেশটি “অনিষ্পন্ন বা বিতর্কিত প্রমাণ” এবং “সুস্পষ্টভাবে ত্রুটিযুক্ত তথ্যগত দাবীর” ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও হাইকোর্টের আদেশটিতে কোন প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন অযাচিত বক্তব্য সন্নিবেশিত হয়েছে বলে সালিশি ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেছে।
এই সালিশি মামলার সূত্রপাত মূলত ২০০৩ সালে দুইটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ও নাইকোর মধ্যে হওয়া যৌথ উদ্যোগ চুক্তি বা জেভিএকে কেন্দ্র করে। ২০০৪ সালে কানাডিয়ান এই কোম্পানিটি সরকারের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে শুরু করে, যদিও গ্যাস ক্রয় ও বিক্রয় চুক্তি বা জিপিএসএ স্বাক্ষর করতে লেগে যায় আরও দুই বছর। সেই চুক্তি অনুযায়ীই সরকার গ্যাসের জন্য কি মূল্য পরিশোধ করবে তা ঠিক হয়।
২০১০ সালে নাইকো মূলত দুইটি বিষয়ে আইসিএসআইডির শরণাপন্ন হয়। কোম্পানিটি প্রথমত দাবী করে যে সরকারী মালিকানাধীন বাপেক্স এবং পেট্রোবাংলার কাছে তারা যে গ্যাস বিক্রি করেছিল তার মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। দ্বিতীয় বিরোধটি ছিল ২০০৫ সালে নাইকোর পরিচালিত একটি গ্যাসক্ষেত্রে দুইটি বিস্ফোরণে ক্ষতির দায় মেটাতে কোম্পানিটি বাংলাদেশ সরকারকে কতো জরিমানা দেবে সেই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে।
এর আগেও এই ট্রাইব্যুনালের একাধিক আদেশ নাইকোর পক্ষে গেছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের একটি আদেশে বলা হয়েছিল যে সরবরাহকৃত গ্যাসের মূল্যবাবদ (সুদসহ) নাইকো বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৩৩.৪ মিলিয়ন ডলার পাবে। বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা এসব আদেশের বিরুদ্ধে নতুন এক যুক্তি ট্রাইব্যুনালের সামনে নিয়ে আসে। যুক্তিটি ছিল যে নাইকোর সাথে বাংলাদেশ সরকারের আলোচ্য দুই চুক্তি (জেভিএ ও জিপিএসএ) হয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে, এবং সেই কারণে এই চুক্তিগুলোর কোন কার্যকারিতা নেই। এই আবেদনের প্রেক্ষিতেই ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন আদেশটি দেয় ট্রাইব্যুনাল।
ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, বাংলাদেশের এমন দাবীর মূল ভিত্তিটি ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মার্কিন সংস্থা এফবিআই ও কানাডিয়ান পুলিশের যৌথ তদন্তে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য। ২০০৭ থেকে ও ২০০৯ সালের মধ্যে এই তদন্তকার্য পরিচালিত হয়। ২০১১ সালে এই তদন্তের ভিত্তিতে কানাডাতে নাইকোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে কোম্পানিটি ২০০৫ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনকে ঘুষ হিসেবে একটি বিলাসবহুল গাড়ী দেওয়ার এবং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কানাডার আইনকর্মকর্তারা যদিও বলেছেন যে নাইকোর সাথে হওয়া চুক্তির ক্ষেত্রে সেই ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি কোন প্রভাব ফেলেছে এমন কোন প্রমাণ তারা পাননি।
আইসিএসআইডির ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় যে দুর্নীতির আরও অনেক প্রমাণ সরকারের কাছে আছে এবং জেভিএ ও জিপিএসএ চুক্তিগুলোও দুর্নীতির মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়েছিল। সালিশি ট্রাইব্যুনাল এই দাবী পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে তার আদেশে বলেছে, “চুক্তিগুলো প্রণয়ন বা সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারী পর্যায়ে কোন দুর্নীতি হয়েছে এমন দাবীগুলো প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”
নাইকো একদল দুর্নীতিগ্রস্থ পরামর্শককে নিয়োগ দিয়েছিল, বাংলাদেশের পক্ষে এমন একটি জোরালো অভিযোগও ট্রাইব্যুনাল প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “দুর্নীতির উদ্দেশ্যে পরামর্শকদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করার যে অভিযোগ নাইকোর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তার কোন প্রমাণ ট্রাইব্যুনাল পায়নি। বরং, সংগৃহীত প্রমাণাদি থেকে দেখা যায় যে চুক্তির দরকষাকষিতে সহযোগিতা পেতে নাইকো যে পরামর্শকদের শরণাপন্ন হয়েছিল, তা অযৌক্তিক কিছু ছিলনা। চারজন পরামর্শক শরিফউদ্দিন আহমেদ (ফোর সিজনস), কাসেম শরীফ (স্ট্রাটাম), গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং সেলিম ভূঁইয়াকে (নেশন ওয়াইড) অবৈধ কোন উদ্দেশ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এমন কোন প্রমাণ বা ব্যাখ্যা ট্রাইব্যুনাল পায়নি। এই চার পরামর্শকের কেউ নাইকোর অর্থ সরকারী কর্মকর্তাদের দিতে ভূমিকায় ছিলেন এমন অভিযোগেও ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হতে পারেনি।”
আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনাল আরও বলেছে যে বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ ভাবে অর্থ দেওয়া হয়েছিলো এমন অভিযোগেরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন খালেদাপুত্র তারেক রহমান। তার ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, “এমন কোন প্রমাণ নেই যে [গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ] তারেক রহমানকে দেওয়া হয়েছে, অথবা জেভিএ চুক্তিতে উপনীত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণে তারেক রহমানের কোন ভূমিকা ছিল।”
নাইকো মামলার তথ্যগত প্রেক্ষাপট সঠিকভাবে বর্ণনা করতেও বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেছে আইসিএসআইডির ট্রাইব্যুনাল। এবং এই কারণে দুর্নীতির অভিযোগগুলোর বাস্তব সত্যতা সম্পর্কে গুরুতর সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। এখানে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কিছু দাবীর অসারতা তুলে ধরে ট্রাইব্যুনাল বলেছে: ওই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে নাইকো যোগ্য ছিল; ছাতক গ্যাসক্ষেত্রকে চুক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা “আইনগতভাবে যৌক্তিক ও নিশ্চিতভাবেই বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার জন্য লাভজনক ছিল”; বাংলাদেশের ক্রয় বিধিমালার কোনো লঙ্ঘন ওই চুক্তিতে হয়নি; গ্যাস বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তিটি সুস্পষ্টভাবেই পেট্রোবাংলার অনুকূলে ছিল, কারণ অন্য সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পেট্রোবাংলা যে দামে গ্যাস কিনতো, নাইকোর কাছে তার থেকেও অনেক কম দামে গ্যাস পেয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠানটি।
সালিশি মামলার অত্যন্ত চমকপ্রদ একটি অংশের মূল চরিত্র বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। আশ্চর্যজনকভাবে, তৌফিক-ই-ইলাহীর বিরুদ্ধেও নাইকো দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স।
রাষ্ট্রীয়-মালিকানাধীন এই দুই জ্বালানি কোম্পানি ট্রাইব্যুনালে দাবী করে যে, ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে, নাইকো জাহাঙ্গির এলাহি চৌধুরীকে ৫৪,০০০ ডলার দিয়েছিল। এই অর্থ তার ভাই, তৎকালীন জ্বালানি সচিব তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর জন্য ঘুষ হিসেবেই দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় যে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর জন্য তার ভাইকে অর্থ দেওয়া হয়েছিল যেন তিনি গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে নাইকোর একক প্রস্তাব সমর্থন করেন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করেন। সরকারের মতে, বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী তা ষড়যন্ত্রের সামিল। এক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স এফবিআইয়ের একজন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে, যিনি বলেন, “এমনটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে ওই অর্থ ছিল নাইকোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিনিময়ে সম্ভাব্য ঘুষ।”
কিন্তু ট্রাইব্যুনাল এই দাবি গ্রহণ করেনি কারণ এমন কোন প্রমাণ নেই যে জাহাঙ্গিরকে আদৌ ওই অর্থ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভাইয়ের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণের অভিযোগে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলেও প্রতীয়মান হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আরও বলেছে যে বর্তমান সরকারে জ্যেষ্ঠ পদে থাকা সত্ত্বেও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে স্বাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়নি।
এছাড়া ঘটনার সময়ক্রমও তৌফিক-ই-ইলাহীর বিরুদ্ধে চুক্তিতে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ সমর্থন করে না। আইসিএসআইডি বলছে, “ট্রাইব্যুনাল এই উপসংহারে উপনীত হয়েছে যে যেসব প্রমাণ হাজির করা হয়েছে তাতে এমনটি প্রতীয়মান হয়না যে নাইকো তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে তার ভাইয়ের মাধ্যমে ৫৪,০০০ ডলার দিয়েছে। আর এই অর্থ আদতে দেওয়া হয়ে থাকলেও, তাতে নাইকোর সাথে চুক্তি সম্পাদন প্রভাবিত হয়নি।”
খালেদা জিয়া ও মওদুদ আহমেদ ছাড়া আরও যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে নাইকো মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন — প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, প্রাক্তন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রাক্তন সচিব খন্দকার শহিদুল ইসলাম, প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসেন, বাপেক্সের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের প্রাক্তন সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া, এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নাইকোর ভাইস প্রেসিডেন্ট কাসেম শরীফ।
চলমান ফৌজদারী মামলাটি প্রথম দায়ের করা হয় ২০০৭ সালে, তবে মামলাটি হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী কয়েক বছর স্থগিত ছিল। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা বিশেষ জজ আদালতে বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের অধীনে অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে আছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। তবে হাইকোর্টে একটি আবেদনের মাধ্যমে তার নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
তিন সদস্যের আইসিএসআইডির সালিশি ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা হলেন: মাইকেল ই. স্নাইডার (ট্রাইব্যুনালের সভাপতি, উভয় পক্ষের নিয়োগ), প্রফেসর ক্যাম্পবেল ম্যাকলাহান কিউসি (বাংলাদেশ পক্ষের নিয়োগ), এবং প্রফেসর য়ান পলসন (নাইকো পক্ষের নিয়োগ)। এই সালিশি ট্রাইব্যুনালের আদেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হয় এবং আপিলের কোন সুযোগ থাকেনা।
ট্রাইব্যুনালে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ফোলে হোয়াগ (ফার্ম), ইমতিয়াজ ইউ আহমেদ আসিফ, মঈন গণি, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এবং পেট্রোবাংলার সচিব। নাইকোর প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ডেনটনস ইউরোপ (ফার্ম), ডেনটনস কানাডা (ফার্ম), রোকনউদ্দিন মাহমুদ, এবং মোস্তাফিজুর রহমান খান।
আইসিএসআইডির আদেশ খালেদা জিয়া ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারী মামলায় কি প্রভাব ফেলবে এই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের আইন মন্ত্রী আনিসুল হক নেত্র নিউজকে বলেন, “আমি সেটা জানিনা। ওরা [আইসিএসআইডি] এটা বলার কে? অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছিল এবং আমরা বাংলাদেশে তার [খালেদার] বিচার করছি। ধন্যবাদ!”
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং ট্রাইব্যুনালের আদেশের ব্যাপারে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বিষয়ে শেক্সপিয়ারের হেমলেট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “তোমাদের দর্শন যা কিছু কল্পনা করতে পারে তার থেকেও অনেক বেশি কিছু স্বর্গ আর মর্ত্যে আছে হে হোরেশিও।”●