লিখেছেন শাহ আলম সাজু
সাদাকালো যুগের সিনেমাকে বলা হয়ে থাকে স্বর্ণালী দিনের সিনেমা। সেই সময়ের নায়ক–নায়িকাদের বলা হয়ে থাকে স্বর্ণালী দিনের নায়িকা, স্বর্ণালী দিনের নায়ক। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও, সাদাকালো যুগের সিনেমার চাহিদা রয়ে গেছে আগের মতোই। স্বর্ণালী দিনের সিনেমাগুলোর আবেদন কমেনি। সেইসব দিনের সিনেমার নায়িকাদের নিয়েই এ ফিচার।
৬০’র দশক দিয়ে বাংলাদেশের সিনেমার যাত্রা শুরু। এই দশকের অন্যতম নায়িকা হলেন সুচন্দা, কবরী, সুজাতা, শবনম, শাবানা, সুমিতা দেবী, সুলতানা জামান প্রমুখ। মূলত ৬০’র দশক বাংলা সিনেমা পায় একঝাঁক নায়িকা। যারা তাদের অভিনয় দিয়ে জয় করে নেন কোটি দর্শকদের ভালোবাসা। তারা এখনও কেউ কেউ বেঁচে আছেন। তাদের কথা বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে চিরদিন থাকবে।
সুচন্দা অভিনীত বহু সিনেমা সুপারহিট ব্যবসা করে। জীবন থেকে নেওয়া সিনেমাটির আবেদন এখনও আছে। অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমার নায়িকা সুচন্দা। সুচন্দা অভিনীত কয়েকটি সাড়া জাগানো সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বেহুলা, নয়নতারা, কাগজের নৌকা, যে আগুনে পুড়ি, শনিবারের চিঠি, অশ্রু দিয়ে লেখা ইত্যাদি।
সুমিতা দেবী সিনেমায় এসে এদেশের দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন। সাধারণ বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজ তাকে গ্রহণ করে বেশ ভালোভাবে। সুমিতা দেবী অভিনীত কয়েকটি আলোচিত সিনেমা হলো- সোনার কাজল, কাঁদের দেয়াল, কখনও আসেনি, ওরা এগারোজন, সুজন সখী।
শবনম ৬০ এর দশকের নায়িকাদের মধ্যে আরেকটি আলোচিত নাম। শবনম তার নিজস্ব একটা সুনাম নিয়ে এদেশের সিনেমা জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন ওই সময়ে। তার অভিনীত প্রচুর সিনেমা রয়েছে, যা ব্যবসাসফল হয়েছে। তার অভিনীত কয়েকটি আলোচিত সিনেমা হচ্ছে- হারানো দিন, হারানো সুর, রাজধানীর বুকে, রাজা সন্ন্যাসী, জোয়ার ভাটা।
৬০’র দশকের অন্যতম আরেকজন নায়িকার নাম শাবানা। ১৯৬৪ সালে চকোরী নামের সিনেমা দিয়ে একক নায়িকা হিসেবে পর্দায় আসেন। স্বর্ণালী দিনের নায়িকা হিসেবে শাবানা দাপটের সঙ্গে বহু বছর অভিনয় করেন। প্রচুর সিনেমা করেছেন তিনি। তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাবানা। শাবানা অভিনীত আলোচিত সিনেমা রয়েছে অসংখ্য। কয়েকটি সিনেমা হচ্ছে- মধুমিলন, অবুঝ মন, চকোরী, ছন্দ হারিয়ে গেল, ঝড়ের পাখি, সমাধান।
৬০’র দশকের আরেকজন নায়িকার নাম সুজাতা। বহু হিট সিনেমার নায়িকা তিনি। ধারাপাত সিনেমা দিয়ে সুজাতার অভিনয় জীবন শুরু। তবে, একক নায়িকা হিসেবে সুজাতা স্বর্ণালী সিনেমায় অভিষেক ঘটে রূপবান সিনেমা দিয়ে। রূপবান ৬০ দশকের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা। সুজাতা অভিনীত আলোচিত কিছু সিনেমা হলো- ডাকবাবু, মধুবালা, মোমের আলো, এতটুকু আশা।
মিষ্টি মেয়ে হিসেবে খ্যাত তিনি। ১৯৬৪ সালে নায়িকা হিসেবে পথচলা শুরু তার। এই প্রজন্মও জানে এদেশে মিষ্টি মেয়ে একজনই। তিনি কবরী। কবরী বাংলাদেশের সিনেমায় আসার পর একটার পর একটা হিট সিনেমা উপহার দিয়ে যান। তার সময়ে তিনি ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয় নায়িকা। ১০৬৪ সালে সুতরাং সিনেমা দিয়ে নায়িকা হিসেবে কাজ শুরু তার। বহু রোমান্টিক ও সামাজিক সিনেমার নায়িকা তিনি। কবরী অভিনীত কিছু আলোচিত সিনেমা হলো- সুতরাং,আবির্ভাব, দ্বীপ নেভে নাই, বিনিময়, সুজন সখী, ময়নামতি, নীল আকাশের নীচে, স্মৃতিটুকু থাক।
৬০’র দশকের আরেকজন নায়িকার নাম আনোয়ারা। বালা সিনেমার নায়িকা ছিলেন তিনি। আজকের টিভি নাটকের নামি অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদও ছিলেন এই দশকের নায়িকা। আবির্ভাব সিনেমার নায়িকা ছিলেন তিনি।
ববিতা ষাটের দশকের শেষ দিকে সিনেমায় আসেন। সেটা ১৯৬৮ সালে। কিন্তু পুরো ৭০’র দশক জুড়ে ছিলো ববিতার রাজত্ব। একজীবনে কতোই না সুপারহিট সিনেমা করে গেছেন। বাংলাদেশের সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছেন এই নায়িকা। বাংলাদেশি কোনো নায়িকা হিসেবে প্রথম সত্যজিৎ রায় এর সিনেমাও করেন ববিতা। ববিতা অভিনীত আলোচিত কয়েকটি সিনেমা হলো- গোলাপি এখন ট্রেনে, টাকা আনা পাই, বাদী থেকে বেগম, লাঠিয়াল, নয়নমণি, অনন্ত প্রেম, কি যে করি, বন্দিনী।
৭০’র দশকের আরেকজন জনপ্রিয় নায়িকার নাম অলিভিয়া। এই দশককে উজ্জ্বল করেছেন সিনেমা দিয়ে এবং স্বর্ণালী সিনেমাকে আরো স্বর্ণালী করেছেন অঞ্জনা, রোজিনা, সুচরিতা প্রমুখ নায়িকারা। অলিভিয়া অভিনীত কয়েকটি আলোচিত সিনেমার নাম– মাসুদ রানা, দি রেইন, ছন্দ হারিয়ে গেল, বে দ্বীন, শাপমুক্তি ইত্যাদি।
সুচরিতা অভিনীত প্রচুর সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা পায় এবং ব্যবসাসফলও হয়। তার অভিনীত কয়েকটি উল্লেখ করার মত সিনেমার মধ্যে রয়েছে- জীবন নৌকা, জনি, ডাকু মনসুর, রকি, দাঙ্গা ইত্যাদি।
অঞ্জনা ৭০’র দশকে অনেক সিনেমা করেছেন। সুপারহিটের তালিকায় এই দশকে যে কজন নায়িকা আছেন, তিনিও তাদের মধ্যে অন্যতম। তার অভিনীত কয়েকটি দর্শকপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে- অশিক্ষিত, সেতু, রূপালী সৈকতে, শাহী কানুন, রজনীগন্ধা, গুনাই বিবি, ডাকু ও দরবেশ।
রোজিনা ৭০’র দশককে আরও রাঙিয়ে দেন নতুন নতুন সিনেমা দিয়ে। সামাজিক গল্পের সিনেমা, লোককাহিনী নির্ভর সিনেমা, অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা- সব ধরণের সিনেমায় সফল একজন নায়িকা রোজিনা। তার অভিনীত কয়েকটি সিনেমার হলো- রাজমহল, জানোয়ার, সুলতানা ডাকু, উসিলা, নালিশ, কসাই, আনারকলি, রাজনন্দিনী।
৮০’র দশকের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকার নাম অঞ্জু ঘোষ। ১৯৮২ সালে তিনি সিনেমায় আসেন। অসংখ্য হিট সিনেমার নায়িকা তিনি। তবে, বেদের মেয়ে জোছনা সিনেমাটি দিয়ে অঞ্জু ঘোষ সব ধরণের দর্শকের মন জয় করে নেন। বেদের মেয়ে জোছনা বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা।
৮০’র দশকের আরেক জনপ্রিয় নায়িকার নাম কাজরী। বিখ্যাত সিনেমা নয়নের আলো’তে কাজরী নায়িকা ছিলেন জাফর ইকবালের সঙ্গে। সুবর্ণা মুস্তাফাও নায়িকা ছিলেন এই সিনেমায়। সুবর্ণা মুস্তাফা অল্প কয়েকটি সিনেমা করেও আশির দশকের আলোচিত নায়িকার সারিতে বেশ ভালো অবস্থানে ছিলেন।
৮০’র দশকের আরেকজন নায়িকার নাম দিতি। তিনিও অনেক আলোচিত সিনেমায় নায়িকা হিসেবে ছিলেন। এছাড়া অরুণা বিশ্বাস, চম্পা, জিনাত, দোয়েল আশির দশকের নায়িকা হিসেবে ছিলেন। এদের সবারই রয়েছে অনেক অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা।