হাইতিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা শ’ শ’ শিশুর জন্ম দিয়ে চলে গেছে নিজ দেশে। ওই শিশুর মায়েরা তাদের বড় করছে সামাজিক স্টিগমা, দারিদ্র্য ও একা হাতে। নতুন এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘ অতীতে হাইতি ও অন্যত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী সদস্যদের যৌন শোষণের ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। তবে হাইতির ভুক্তভোগীদের নিয়ে করা এই গবেষণায় উঠে এসেছে, এই ইস্যু দেশটির জন্য কত বড় সমস্যা বয়ে এনেছে।
দুই শিক্ষাবিদের করা গবেষণায় বলা হয়, ১১ বছরের শিশুরা পর্যন্ত শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের হাতে গর্ভবতী হয়েছে। ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হাইতিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী অবস্থান করেছে। পরে সন্তান জন্মদানের পর ওই নারীরা নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েন।
এক হাইতিয়ান নাগরিক বলেন, আপনার পেটে বাচ্চা দিতে তারা আপনাকে কয়েকটা কয়েন দেবে খালি। ওই গবেষকদের গবেষণার ফলাফল প্রথম প্রকাশিত হয় দ্য কনভারসেশন ওয়েবসাইটে।
গবেষণার আওতায় ২৫০০ হাইতিয়ান নারীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে যারা ২০১৭ সাল নাগাদ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটির আশেপাশে বসবাস করেছেন। এর আগে জাতিসংঘ স্বীকার করেছিল যে, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল নাগাদ হাইতিতে মোতায়েনরত শতাধিক শ্রীলংকান শান্তিরক্ষী ৯ শিশুর সঙ্গে যৌন স¤পর্ক স্থাপন করেছিল। ওই শান্তিরক্ষীদের নিজ দেশে পাঠানো হলেও তাদের কোনো সাজা হয়নি।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যাবাইন লি ও কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সুসান বার্টেলসের করা এই গবেষণায় ২৬৫ জনই বলেছেন, তাদের সন্তানের পিতা হলো শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য। তারা মূলত ১৩টি দেশ থেকে সেখানে গিয়েছে। তবে বেশিরভাগই ছিলো উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের। গবেষকদ্বয় লিখেছেন, সাক্ষাৎকার যাদের নেওয়া হয়েছে তাদের ১০ শতাংশই বলছেন এই কথা। তার মানে প্রকৃতঅর্থে সমস্যার ব্যাপ্তি কত ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়। এর আগে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছিল সামান্য অর্থ বা খাবারের বিনিময়ে শিশুদের সঙ্গে যৌন স¤পর্ক স্থাপন করেছে এই শান্তিরক্ষীরা।
এ ধরণের সন্তানের সংখ্যা কেমন হবে, তা গবেষকদ্বয় বলেননি। তবে আইন বিশেষজ্ঞ ও ত্রাণকর্মীরা বলছেন, এই সমস্যা খুবই বিস্তৃত। জাতিসংঘ ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের সহায়তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছুদিন আগে হাইতিয়ান আইনজীবীরা এমন ১০ সন্তানের পক্ষে পিতৃত্বের দাবিতে মামলা ঠুকেছেন। এক সহায়ক আইনজীবী সিয়েনা মেরোপ সিনগি বলেন, তাদের সংগঠন ২০১৬ সালে এই ব্যাপারে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছিল। তবে তখন জাতিসংঘ পাশে দাঁড়ায়নি। তিনি বলেন, জাতিসংঘকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। হাইতির গ্রামে বসবাস করা নারীর পক্ষে উরুগুয়ের ওই পুরুষের বিরুদ্ধে আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।