ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গতকাল দিনভর ছিল থমথমে। আইন শৃংখলা বাহিনীর ব্যপক উপস্থিতি। এর মধ্যেই বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রছাত্রীরা। মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে কোনো কোনো সংগঠন। আবার হামলাকারীদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ অব্যহত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় হামলা ঘটনা তদন্তের জন্য ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থী ও ডাকসুর প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীরা হামলার পর ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করার মনিটর ও হার্ডডিস্ক নিয়ে গেছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেছেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ ছিনতাই হয়েছে বলে শুনছি। এখন সিসিটিভি ফুটেজ কে নিয়েছে তাও আমরা জানি না। এ বিষয়ে আমরা এখন কী করব বলতে পারছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ঢাকসু) মূল ফটক বন্ধ করে আলো নিভিয়ে রড, বাঁশ, লাঠিসোটা দিয়ে ঢাকসু ভবনেই ভিপি নুরুল হক নূরসহ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের পৈশাচিক ভাবে পেটানো হয়। নিষ্ঠুর-বর্বর এই ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ঘটনার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘রহস্যজনক নীরবতা’ সর্বত্রই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। আহতরা বলেছেন, নির্মর্ম পিটুনিতে মেঝেতে পড়ে থাকা ভিপি নুর মারা গেছে ভেবে হামলাকারীরা চলে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ইসলাইলি নিষ্ঠুরতার মতো ডাকসু অফিসের লাইট নিভিয়ে কয়েকজন ছাত্রনেতাকে পেটানোর ঘটনা জাতির বিবেকে নাড়া দিয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদরা তীব্র প্রতিবাদ এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তারা ঘটনার সময় ‘নির্বিকার’ ভূমিকার জন্য প্রশাসনকে ব্যর্থ অবিহিত করেছেন। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ ও ছাত্রলীগের এমন ‘পৈশাচিক ত্রাস’ সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। বিবেকের তাড়নায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা গুরুত্বর আহত নুরকে দেখতে হাসাপাতালে যান। আহত নুরুল হক নূর বলেছেন, ইনকন সদস্য ‘র’ এর এজেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি সানজিদ চন্দ্র দাস আমার ওপর হামলা করেছে। তবে ভিপি নুরকে উদ্দেশ্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, তোমাকে এক ঘণ্টা আটকে রাখছে কেনো? ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছো মনে হয়। তোমাকে আটকে রেখে একটি লাশ চেয়েছিলো বোধহয়।
‘মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ’ নামে সংগঠন করে ত্রাস সৃস্টিকারীর মূল হোতা খ্যাত মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মামুন ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নাম ভাঙ্গিয়ে ত্রাস করার প্রতিবাদ করে ঘাতক দালার নির্মূল কমিটির নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নাম ব্যবহার করে এ ধরণের কাজ করবে তা সমর্থনযোগ্য নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে গড়ে ওঠা কিছু প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত ও গণবিরোধীকর্মকাণ্ড দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের লজ্জায় ফেলছে।
নুরের উপর হামলার প্রতিবাদ করে ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘নুরুল হক নুরের ওপর হামলায় আমি ব্যথিত, বিব্রত, লজ্জিত। দুর্ভাগ্য এ ধরণের ঘটনা ঘটে। তবে যারা ডাকসুর ভিপি হন, তাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যেটাতে প্রতিপক্ষের মনে আঘাত লাগতে পারে। ডাকসু মানে সবার’। ডাকসু ভিপি নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘ডাকসুর ভিপির সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার অধিকার আছে। যত কিছুই হোক যে হামলা হয়েছে এটা নিন্দনীয়। নেত্রী স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা যদি দলীয় পরিচয়েরও হয়, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যারাই এই অপকর্মে থাকুক, যারাই এ ধরনের হামলা করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত। সাংগঠনিকভাবে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী’। ঐক্যফন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামধারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, এবিএম সোহেল, হাসান আল মামুন, রাশেদ খান ফারুকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র গুরুতর আহত হয়। দেশবাসীকে দ্ব্যর্থহীন জানাতে চাই তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ যে জঘন্য ও বর্বর হামলা করেছে তা লক্ষ শহীদের প্রতি চরম অবমাননা’। জেএসডির সভাপতি আ স ম রব বলেন, ‘এটা কিসের মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চ? ’৭১ সালে এদের বাবাদেরওতো জন্ম হয়নি। ছাত্রলীগই এই হামলা চালিয়েছে। সারাদেশে এর বিরুদ্ধে অদলীয় ছাত্র পরিষদের যে দাবি আমরা এর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি এবং সমর্থন করছি’। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্র করছে। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা হয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হবে’। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রড, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরুসহ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নারকীয় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এটা ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগের পক্ষ্যেই সম্ভব’।
হাসপাতালের বেডে শুইয়ে সাংবাদিকদের হামলা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, আমি ডাকসুতে উঠেই সবেমাত্র রুমে ঢুকেছি, অর্ধেক ঢুকতে পেরেছি আর অর্ধেক ঢুকতে পারেনি। এর মধ্যেই পেছন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এবং মধুর ক্যান্টিনে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রড, বাঁশ, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছিল নির্বিকার। ঘটনাস্থলে থেকেও ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। আমার রুমে চেয়ার ছিলো, এগুলো নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেই, তখন ওরা সব দৌড় দেয়, নীচে চলে যায়। এরপর আমরা ভেবেছি যে ওরা আর আসবে না। আমরা তখন রুমে বসি এবং তখন দেখছি ওরা বাইরে থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। তখন আমি ডাকসু’র স্টাফদের ডেকে বললাম, কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। তারপরও ওরা আমরা রুমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ অবস্থায় আমি সবাইকে বসতে বলি। তারপর ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র গেটের কলাপসিবল খুলে নেতা-কর্মীদের নিয়ে রুমে ঢুকেই মারধোর শুরু করে। তিনজনকে মেরে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দিয়েছে সাদ্দাম, সনজিত নিজে থেকে। সনজিত নিজেও আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। তখন আমি বলেছি- আপনি ডাকসু’র কে? আপনি আমাকে চার্জ করেন? তখন ও বলেছে, আমি কে? কিছুক্ষণ পরেই টের পাবি। তারপর সাদ্দাম, সনজিত বের হয়ে যাওয়ার পরে লাইট বন্ধ করে ওরা বাঁশ, রড নিয়ে হামলা করে। তখন আমার যারা সহকর্মী ছিলো, ওরা তো আমাকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ওগুলোও ভেঙে গেছে।
এর আগে ২৩ ডিসেম্বর সকালে ভিপি নুরুল হক নুর নিজের ফেসবুক পেইজে লিখেন ‘স্বৈরাচারের বিরোধিতা ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, হত্যাসহ নানা ধরণের বর্বরতার প্রতিবাদ করার কারণেই এ পর্যন্ত নয় বার আমাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ ডাকসুতে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি, ভারতীয় ‘র’ এর এজেন্ট, ইসকন সদস্য সনজিদ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এবং তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী মঞ্চের সভাপতি বুলবুল ও মামুনের নেতৃত্বে ৩ দফায় আমার ওপর হমলা চালানো হয়। সংগঠনের সহযোদ্ধাদের ওপর অসংখ্যবার হামলা চালানো হয়।’ তিনি দেশকে মুক্ত করতে, জনগণকে বাঁচাতে অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তবে ভিপি নুরুল হক নুরকে ঢাকসু ভবনে প্রবেশ করতে না দেয়ার হুমকি দিয়েছেন চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত বিতর্কিত ছাত্রনেতা গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, নুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রকে ডাকসুতে আনেনি। একেবারে বাইরে থেকে নিয়ে এসেছে। তারা কিভাবে রড-চাপাতি নিয়ে ডাকসুতে ঢুকলো। আমাদের কথা হলো মারামারি করলে নুর করুক, তার লোকজন নিয়ে বাইরে করুক। নূর আধলা ইট দিয়ে ডাকসুর কাচ ভেঙেছে, ভেতরে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নুর ডাকসুতে সন্ত্রাসী স্ট্যাইলে বহিরাগতদের নিয়ে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত- নুরের মতো একটা ফালতু ছেলেকে ডাকসুতে আর ঢুকতে দেব না।
নুরের ওপর হামলাকারী ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ ও ছাত্রলীগের নেতাদের এই সময়ের ‘রাজাকার’ হিসেবে অবিহিত করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ডাকসু ভিপি নুর ও সাধারন শিক্ষার্থী পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুনসহ ছাত্রদের ওপর নারকীয় সন্ত্রাসী হামলাকারীদের চিনে রাখুন। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ব্যানার যাই হোক না কেন এরাই এই সময়ের রাজাকার, আল বদর, আল-শামস। মুক্ত-স্বাধীন, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে এসব অপশক্তির বিচার একদিন হবেই।’
লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘ডাকসুতে হামলা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যা একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য কলঙ্কজনক। ছাত্ররা যার যার মত প্রকাশ করবে, সভা সমাবেশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি উন্মুক্ত জায়গা সেখানে হামলা দুঃখজনক। সরকারি দলের যারা বেশি ক্ষমতা দেখায় তারা যেন অন্য সংগঠনের ওপরে হানাহানি না করে। তারা নিজেরাও তো নিজেদের মধ্যে হানাহানি করছে’।
জানা যায়, ডাকসুর ভিপি নুরের উপর গত এক বছরে ৯ বার হামলা করেছে ছাত্রলীগ। নূর প্রতিবারই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু একবারও ঢাবি উপাচার্য ডাকসু সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান দেখতে যাননি। এবারের পরিস্থিতি বুয়েটের মতো অগ্নিগর্ভ হতে পারে সে আশঙ্কায় তিনি প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে নিয়ে প্রথম নুরকে দেখতে হাসপাতালে যান। হাসাপাতালের ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, উপাচার্য ও প্রক্টর হাসপাতালে আহত-রক্তাক্ত নুরের বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর পর আহতরা উপাচার্যকে বলতে থাকেন, ‘স্যার আমাদের চারজনকে পেটানোর পর ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে।’ তখন আহতদের কয়েকজন উপাচার্যকে বলেন, ‘স্যার নুরকে যখন রুম আটকে মারা হচ্ছিলো, তখন আমরা কয়েকজন দৌড়ে প্রক্টর স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম স্যার নুরকে বাঁচান।’ প্রক্টর স্যার উল্টো আমাদের ধমক দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ওখানে গেছো কেনো? তোমাদের বহিষ্কার করে দেবো।’ তখন প্রক্টর বলেন, ‘তোমাদের নিষেধ করেছি যেতে। তোমরা গেছো কেনো?’ আহতরা বলেন, ‘আমরা না গেলে তো স্যার নুরকে মেরে ফেলতো। তারা মনে করেছিলো নুর মারা গেছে। মারা যাওয়া নিশ্চিত হয়ে তারা রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। যারা মেরেছে তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ভিডিওতে সব প্রমাণ আছে।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডাকসুর ভিপির উপর হামলা ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনাটি কেন ও কীভাবে সংঘটিত হল এবং এর সাথে কারা জড়িত, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হবে। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ সুপ্রিয়া সাহা, সিনেট সদস্য অসীম সরকার, স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন, সিন্ডিকেট সদস্য মো. মিজানুর রহমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাঈনুল করিম। ঘটনা তদন্ত করে কমিটিকে ৬ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এবং তাদের অনুসারীদের গ্রেফতারের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী ছাত্র সংগঠনগুলো।
নুরুলদের চিকিৎসায় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক ও অন্য আহতদের চিকিৎসায় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এই বোর্ড গঠন করা হয়। এমনটাই জানালেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম নাসির উদ্দীন ।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রাজিউল হককে। এ ছাড়া অর্থোপেডিক, নাক-কান-গলা (ইএনটি), অ্যানেস্থেশিয়া, নেফ্রোলজিসহ আরও ৮টি বিভাগের ৮ জন চিকিৎসককে নিয়ে এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বৈঠকে বসবে এই বোর্ড। আহতদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর কাকে কী চিকিৎসা দেওয়া হবে এবং কাকে ছেড়ে দেওয়া হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।