কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি নিয়ে বিএনপির দৃষ্টি এখন উচ্চ আদালতের দিকে। আগামী ৫ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের রায়। একই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদনও জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিএনপির নীতিনির্ধারকসহ আইনজীবী নেতাদের আশা, শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবেন বেগম জিয়া। একই বিবেচনায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন পাবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। নতুন করে কোনো মামলা না হলে তাঁর মুক্তিতে কোনো বাধাও থাকবে না। তবে জামিন না দিলে বিএনপি সারা দেশে একসঙ্গে গণবিক্ষোভ করার চিন্তাভাবনা করছে। ওইদিন হাই কোর্ট এলাকায় ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতিও রয়েছে দলটির। বিএনপি-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সঠিক রিপোর্ট দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আমরা সারা বাংলাদেশের মানুষ এই প্রত্যাশা করব যে, পিজির চিকিৎসকরা যারা মেডিকেল বোর্ডের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা সত্য কথাটা বলবেন। আমরা অন্য কিছু চাই না।’
সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা। এর ৩৫টিতে তিনি জামিনে রয়েছেন। শুধু দুটি মামলায় জামিনের অপেক্ষায় বিএনপি। তা হলো, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা। বিএনপির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বেগম জিয়ার জামিনের জন্য ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা অপেক্ষায় থাকবেন। কোনো কারণে জামিন না হলে সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে প্রভাবের অভিযোগ এনে ওইদিনই সারা দেশে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও বেশ কিছু কর্মসূচি দেওয়া হবে। ডিসেম্বরজুড়েই থাকবে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচি। মাঠ পর্যায়ের নেতারা হরতাল-অবরোধের পরামর্শও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বেগম জিয়ার মামলার আইনজীবী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানবিক কারণেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে জামিন দেবে বলে আমরা আশাবাদী। এ মামলায় কোনো সাক্ষী, তথ্য বা স্বাক্ষর কিংবা বেগম জিয়ার কোনো ভূমিকা নেই। তার পরও আমরা ওদিকে না গিয়ে শুধু মানবিক কারণে তাঁর জামিন চেয়েছি। আশা করছি, সর্বোচ্চ আদালত জামিন দেবে। যদি না দেয় তাহলে বুঝতে হবে, সরকারের প্রভাব বা রাজনৈতিক কারণে তাঁর মুক্তি হচ্ছে না, মানবিক কারণেও তাঁর মুক্তি হচ্ছে না।’ বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়া আবশ্যক। আমরা বিশ্বাস করি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামিন শুনানির প্রশ্নে বেগম জিয়াকে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি তাঁর প্রতি ন্যায়বিচার করবে।’ গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদ দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদ ও ১০ লাখ টাকা অর্থদ দেওয়া হয়। ৬৩৮ দিন ধরে কারাগারে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ৭৪ বছর ঊর্ধ্ব বেগম জিয়া শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিক্ষোভ : খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে গতকাল সকালে ধানমন্ডি এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্বে দেন দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান সুমনসহ দুই শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রিজভী আহমেদ বলেন, ‘সরকার আইন, বিচার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করেছে। গণমাধ্যমকে ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কব্জায় রাখার চেষ্টা করছে। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে বলেই আমাদের রাজপথেই অবস্থান নিতে হবে। সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে।’