তাকে বলা হয় দ্বিতীয় গাদ্দাফি। তিনি খলিফা হাফতার। পুরো নাম ফিল্ড মার্শাল খলিফা বেলকাসিম হাফতার। তাকে লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে সেই খলিয়া হাফতার মুয়াম্মার গাদ্দাফিকেই ক্ষমতাচ্যুত করার চক্রান্ত শুরু করেন। তাকে হত্যা মিশনে সমর্থন দিতে থাকেন। গাদ্দাফির খুব ঘনিষ্ঠ এমন একজন ব্যক্তি এখন লিবিয়ায় বহুল আলোচিত। তিনি প্রায় চার দশক ধরে লিবিয়ার রাজনীতিতে আলোচিত নাম।
এ সময়ে তার অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। তিনি সাহচর্য পেয়েছেন গাদ্দাফির মতো নেতার। আবার খলিফা হাফতারকে কখনো সরে যেতে হয়েছে দূরে। যুদ্ধবন্দি হিসেবে তাকে জেলে কাটাতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আশীর্বাদ ছিল বা আছে তার ওপর। তাই তিনি আবার আলোচনায় ফিরেছেন। তার অধীনে থাকা বাহিনী এখন লিবিয়ার বড় বড় তেল টার্মিনালগুলো দখল করেছে। ফলে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর তবরুকের পার্লামেন্টের হাতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তেল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ। এত আলোচিত ব্যক্তিকে তুলনা করা হয় লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির সঙ্গে। তাকে বলা হচ্ছে লিবিয়ার সবচেয়ে বড় যুদ্ধবাজ নেতা।
লিবিয়ান-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক খলিফা হাফতার। জন্ম ১৯৪৩ সালের ৭ই নভেম্বর। তিনি লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) প্রধান। খলিফা হাফতারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর এই অংশটি নয়টি মিউনিসিপাল কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উৎখাত করেছে। এসব কাউন্সিল তারা নিয়ে এসেছে সামরিক শাসনের অধীনে। ২০১৯ সালের মে মাসে যখন লিবিয়ায় ‘সেকেন্ড লিবিয়ান সিভিল ওয়ার’ হয় তাতে যুক্ত তার বাহিনী। নির্বাচিত আইনি পরিষদ লিবিয়ান হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর প্রতি অনুগত সেনাবাহিনীর কমান্ডার নিয়োগ করা হয় তাকে ২০১৫ সালের মার্চে।
খলিফা হাফতারের জন্ম লিবিয়ার আজদাবিয়া এলাকায়। প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির অধীনে লিবিয়ার সেনাবাহিনীতে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৯ সালে যে সামরিক অভ্যুত্থানে গাদ্দাফি ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাতে অংশ নিয়েছিলেন খলিফা হাফতার। ১৯৭৩ সালে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধে তিনি লিবিয়ার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। চাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় তিনি ফাঁদে পা দিয়ে ধরা পড়েন এবং যুদ্ধবন্দি হন। এটা তখনকার প্রচণ্ড ক্ষমতাধর গাদ্দাফির কাছে ছিল মারাত্মক এক বিব্রতকর অবস্থা। গাদ্দাফি চাদ নিয়ে যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা করেছিলেন এতে তার সেই পরিকল্পনায় বড় আঘাত লাগে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক চুক্তির মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালে মুক্তি দেয়া হয় খলিফা হাফতারকে। এরপর তিনি প্রায় দু’দশক ভার্জিনিয়ার ল্যাংলিতে কাটান। এ সময়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালীন তার অনুপস্থিতিতে ১৯৯৩ সালে জামাহিরিয়ায় অপরাধের দায়ে তাকে অভিযুক্ত করে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে যে সেনাবাহিনী মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের একটি সিনিয়র পদ দখল করেন খলিফা হাফতার। জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেস মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ক্ষমতা ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল ২০১৪ সালে। এ সময় তাকে বানানো হয় লিবিয়ান আর্মির কমান্ডার। জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেস ও এর ইসলামপন্থি কট্টরবাদী মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন হাফতার। জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নতুন নির্বাচন অনুমোদন দিলেন তিনি। কিন্তু তারপর তা পরিণত হয় এক গৃহযুদ্ধে। ডারনা পুনর্দখলের সময় হাফতার ও তার অনুগতরা যেসব বন্দিকে হত্যা করেছেন তার জন্য খলিফা হাফতারের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনেন ডারনা সিটি কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রামজি আল শায়েরি, আইনজীবী রায়ান গুডম্যান এবং অ্যালেক্স হুইটিং। ওদিকে খলিফা হাফতারকে বর্ণনা করা হতে থাকে ‘লিবিয়ার সবচেয়ে বড় যুদ্ধবাজ’ হিসেবে। তিনি লিবিয়া যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রায় প্রতিটি অংশের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। অদ্বিতীয় সামরিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বলেও তার সুনাম আছে। তা ছাড়া তিনি লৌহমানবের মতো শাসন করেন বলেও সুখ্যাতি আছে তার।
খলিফা হাফতার আজদাবিয়াতে আল ফারজানি উপজাতি গোত্রে জন্মেছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি আজদাবিয়াতে আল হুদা স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করতে ছুটে যান ডারনাতে। সেখানে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেন। এরপরেই ১৯৬৪ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর তিনি বেনগাজি মিলিটারি ইউনিভার্সিটি একাডেমিতে যোগ দেন। সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ১৯৬৬ সালে। ১৯৭০ এর দশকে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে। পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তাদের জন্য তিন বছরের একটি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন সোভিয়েত ইউনিয়নের এমভি ফ্রানজি মিলিটারি একাডেমি থেকে। অধিকতর সামরিক প্রশিক্ষণ নেন তিনি মিশর থেকে।
গাদ্দাফি সরকারে হাফতারের দিনগুলো
১৯৬৯ সাল। তখন খলিফা হাফতার একজন তরুণ সেনা কর্মকর্তা। এ সময় লিবিয়ার রাজা ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। তার এই অভ্যুত্থানে অংশ নেন হাফতার। এর অল্প পরেই হাফতার হয়ে ওঠেন গাদ্দাফির একজন শীর্ষ সামরিক অফিসার। ১৯৭৩ সালে ইসরাইলের সিনাই উপত্যাকা দখল নিয়ে মিশরের সঙ্গে যে যুদ্ধ হয় তাতে মিশরকে সমর্থনকারী লিবিয়ান বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন হাফতার। ফ্রি ইউনিয়নিস্ট অফিসারস-এর অন্য সদস্যদের মতো হাফতারও ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ। অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরেই লিবিয়া শাসন করে রেভ্যুলুশনারি কমান্ড কাউন্সিল। এর সদস্য ছিলেন হাফতার। পরে তাকে বানানো হয় গাদ্দাফির সেনাপ্রধান। ১৯৮০র দশকে চাদ ও লিবিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের লিবিয়ার সেনাদের কমান্ডার ছিলেন খলিফা হাফতার। কিন্তু ওই যুদ্ধে লিবিয়া পরাজিত হয়।
এরপর হাফতারের অধীনে থাকা সেনা সদস্যদেরকে লিবিয়া ফিরে যাওয়ার দাবি তুললেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। কিন্তু এর পরিবর্তে তাদেরকে জায়েরে উড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে হাফতারের অধীনে থাকা সেখানকার সেনাদের অর্ধেক লিবিয়া ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮৭ সালে হাফতার ও তার অফিসারদের একটি গ্রুপ যুক্ত হন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ফর সালভেশন অব লিবিয়ার (এনএফএসএল) সাথে। এটি হলো যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিরোধীদের একটি গ্রুপ। ১৯৮৮ সালের ২১ শে জুন তিনি এনএফএসএলের সামরিক শাখার ঘোষণা দিলেন। এর নাম দেয়া হলো লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি। এর নেতৃত্বে রইলেন খলিফা হাফতার। যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জায়েরে আর অর্থনৈতিক সহায়তা আসার লক্ষণ দেখা গেল না তখন জায়ের থেকে বাকি সদস্যদেরকে কেনিয়া পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তাদেরকে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৯০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সমস্যা সমাধানে মাঠে নামে। তারা মধ্যস্থতা করে। যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী বিষয়ক কর্মসূচির অধীনে হাফতার ও তার ৩০০ সেনা সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথ করে দেয়া হয়।
এরপর আসে ১৯৯৬ সালের মার্চ। খলিফা হাফতারকে সেনা প্রধান বানিয়েছিলেন যে মুয়াম্মার গাদ্দাফি তার বিরুদ্ধে এক উত্তাল আন্দোলনে অংশ নেন হাফতার। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হন তিনি। হাফতার ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানকার ফলস চার্চে বসবাস করতে থাকেন। এরপর চলে যান ভার্জিনিয়ার ভিয়েনাতে। সেখানে অবস্থান করে তিনি সিআইএ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে অব্যাহতভাবে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে থাকেন। মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার বেশ কিছু উদ্যোগে ছিল তার অব্যাহত সমর্থন।
২০১১ সালে লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান শুরু হয়। খালিফা হাফতার এসময় দেশে ফিরে আসেন। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তবে গাদ্দাফির পতনের পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাফতারের কথা আর তেমন শোনা যায়নি। ২০১৪ সালে হঠাৎ আবার খালিফা হাফতারকে দেখা গেল টেলিভিশনে। সেখানে তিনি তার ভাষায়, জাতিকে রক্ষার এক পরিকল্পনা হাজির করলেন এবং নির্বাচিত পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানালেন। তখনও পর্যন্ত জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেস (জিএনসি) নামে পরিচিত লিবিয়ার পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। খালিফা হাফতার এমন এক সময় এই নাটকীয় ঘোষণা দেন, যখন কিনা লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজি এবং পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য শহর কার্যত আল কায়েদার সহযোগী একটি সংগঠন আনসার আল শরিয়া এবং অন্যান্য জঙ্গি ইসলামী সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে। তারা লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল জুড়ে তখন সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করছে, বোমা হামলা চালাচ্ছে।
খলিফা হাফতার যে পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছিলেন, সেটি কাজে পরিণত করার মতো যথেষ্ট সমর্থন তার ছিল না। তিনি আসলে তখন লিবিয়ায় যে ব্যাপক জন-অসন্তোষ সেটিরই প্রতিধ্বনি করার চেষ্টা করছিলেন। বিশেষ করে বেনগাজিতে, যেখানে জেনারেল ন্যাশনাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছিল। কারণ তারা জঙ্গি ইসলামী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছিল না।
খলিফা হাফতার নিজের এলাকায় জনপ্রিয় হলেও, লিবিয়ার অন্য অঞ্চলে তার তেমন সমর্থন ছিল না। বরং গাদ্দাফির সঙ্গে যে তার একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তিনি যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের লোক, সেটাই লোকে মনে রেখেছিল।
অন্যদিকে, ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোও খলিফা হাফতারকে পছন্দ করতো না। কারণ তিনি এদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
২০১৪ সালের মে মাসে খলিফা হাফতার বেনগাজি এবং লিবিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ইসলামী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। তার এই অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন ডিগনিটি। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে লিবিয়ার নির্বাচিত পার্লামেন্ট হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ, যা কিনা জেনারেল ন্যাশনাল কাউন্সিলের জায়গা নিয়েছিল, তারা খ০িলফা হাফতারকে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অধিনায়ক নিযুক্ত করে। প্রায় এক বছর ধরে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সঙ্গে বেনগাজির ইসলামী জঙ্গিদের লড়াই চলে। শুরুতে লড়াইয়ে তারা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা বেনগাজির বেশিরভাগ এলাকা থেকে জঙ্গিদের হটিয়ে দেয়। ২০১৬ সালের মে মাসে তারা আরও সাফল্য পায়। ইসলামী জঙ্গিদের তারা এবার শুধু বেনগাজির উপকন্ঠ নয়, ২৫০ কিলোমিটার পূর্বের ডারনা শহর পর্যন্ত হটিয়ে দেয়।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অপারেশন সুইফট থান্ডার শুরু করে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি। উদ্দেশ্য ছিল লিবিয়ার গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনাগুলোর দখল নেয়া। তখন পর্যন্ত এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো ‘পেট্রোলিয়াম ফ্যাসিলিটিজ গার্ড’ নামের একটি বাহিনী। এই সশস্ত্র বাহিনী ছিল জাতিসংঘের সালিশে গঠিত ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল একর্ড’ বা জিএনএ’র অনুগত। লিবিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সব তেল টার্মিনাল এদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় হাফতারের নেতৃত্বে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি।
এর স্বীকৃতি হিসেবে খালিফা হাফতারকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে পদোন্নতি দিয়ে ফিল্ড মার্শাল করা হয়। তবে খালিফা হাফতার নাকি জিএনএ’র কাজ-কর্মে অখুশি ছিলেন। কারণ এই সরকার প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল ইব্রাহিম আল বারগাতি বলে এক অফিসারকে।
মিসরাতা ভিত্তিক যে মিলিশিয়া বাহিনী, তাদের ওপর খুব বেশি নির্ভর করতো জিএনএ। এই মিলিশিয়াদের সঙ্গে নাকি আবার ইসলামী জঙ্গিদের সম্পর্ক ছিল। এনিয়েও অখুশি ছিলেন খালিফা হাফতার।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে লিবিয়ায় একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের জন্য চুক্তি হয়। তাতে বলা হয়েছিল, হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা পার্লামেন্ট নতুন সরকার গঠিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে এটিকে অনুমোদন দেবে। কিন্তু কয়েকবার চেষ্টা করেও কোরামের অভাবে এই পার্লামেন্টের কোন অধিবেশন শুরু করা যায়নি।
গণমাধ্যমের খবরে তখন এজন্যে দোষারোপ করা হচ্ছিল খালিফা হাফতারকে। তিনি নাকি তার অনুগত পার্লামেন্ট সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন পার্লামেন্টে না যেতে, যাতে করে নতুন মন্ত্রিসভা এই পার্লামেন্টের অনুমোদন না পায়।
খালিফা হাফতার অবশ্য বলছিলেন, তিনি পার্লামেন্টের যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন। কিন্তু নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে খালিফা হাফতার খুব খোলামেলাভাবে কখনো কিছু বলেননি। তবে ধারণা করা হয়, তিনি নতুন জাতীয় ঐক্যের সেনাবাহিনীতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখতে চান।