বাংলাদেশ ব্যাংকের বহিষ্কৃত উপপরিচালক তাওফিক উস সামাদ তন্ময়ের বিরুদ্ধে সিরিয়াল ধর্ষণ, প্রতারণা ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটিতে সাগর-রুনী মিলনায়তনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ আনা হয়।
তন্ময়ের সাবেক এক স্ত্রীর খালা রকসি রহমান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১/২/১৯ ইং তারিখে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাওফিক উস সমাদ তন্ময়ের সাথে আমার ভাগ্নির। বিয়ের ১৮ দিন পর ১৮/২/১৯ ইং সহকর্মীর ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হয় তন্ময়। এর পর পরিবারের পরিকল্পিত আকুতি মিনতি দেখে আমরা প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে তন্ময়কে তিন মাস জেল খাটার পর জামিনে বের করি। জেলে থাকাবস্থায় তার সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পারি। সেকারণে আমরা মেয়েকে তার সঙ্গে আর দেবো না বলে সিদ্ধান্ত নেই। তারপরও একাধিকবার পারিবারিকভাবে বসে শর্ত মেনে, প্রতিজ্ঞা করে, ভবিষ্যতে সে এ ধরনের জঘন্য কাজে আর লিপ্ত হবে না বলে গত ২৩/৯/১৯ তার পরিবারের সবাই এসে ভাগ্নিকে নিয়ে যায়।
আবেগতাড়িত কণ্ঠে রকসি রহমান বলেন, ২৯/৯/১৯ তারিখে দুপুর ১টায় কাজের বুয়ার ফোন থেকে ভাগ্নি আমাকে ফোন দিয়ে বলে- ‘খালামনি আমাকে বাঁচাও’। মেয়েকে বাঁচাতে আমরা তার বনানীর বাসায় যাই। বাসায় ঢুকতে দেয়া হয়নি, নিরাপত্তা প্রহরীর সহযোগিতায় বাসায় ডুকে দেখি ভাগ্নি মৃতপ্রায় অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে কাতরাচ্ছে। তাকে উদ্ধার করে বনানী থানায় নিয়ে জিডি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নিয়ে যাই।
এরপর ১/১০/১৯ তারিখে বনানী থানায় নারী ও যৌতুকের মামলা করি। মামলা নং-০১। এরপর গত ১৭/১০/১৯ তারিখে পূর্বের একাধিক বিবাহের কথা গোপন করার কারণে আরেকটি প্রতারণার মামলা করি কোর্টে, মামলা নং সিআর-১২১০/১৯। যা পিবিআইতে তদন্তাধীন।
রকসি রহমান তন্ময়ের অতীত সম্পর্কে বলেন, তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের নামে প্রতারণা করে আসছে অনেক মেয়ে ও তাদের পরিবারের সাথে। দাওয়াত গ্রহণ করে ও উপঢৌকন দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে এবং সেগুলোর ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে হাতিয়ে নিতো মোটা অংকের টাকা।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মহিলা, মেয়ে, সহকর্মী, প্রতিবেশী নারী, স্ত্রীর আত্মীয় ও বান্ধবী, সহকর্মীর স্ত্রী, কাজের মেয়েসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে তন্ময়ের পরকীয়ার লীলাখেলা চলতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে তার পরিবার মেয়ে দেখার নামে দাওয়াত খেয়ে বেড়ায়। তার প্রোফাইল, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ইম্প্রেসিভ কথোপকথন, সরল শিশুসুলভ আচরণের অভিনয় এবং পরিবার সংযুক্ত থাকায় মেয়ে ও মেয়ের পরিবারের লোকেরাও অনায়াসে আস্থা অর্জন করে ফেলে। যেমনটি আমাদের ক্ষেত্রেও হয়েছে।
আশেপাশের সকল নারীই কোনও না কোনভাবে তন্ময়ের যৌন লালসা ও অর্থলিপ্সার শিকার অভিযোগ করে রকসি রহমান আরও বলেন, তার এই অবাধ যৌনাচারের ফলে সে রোগাক্রান্ত হয়েছে। তবে সুস্থ থাকাকালীন এক মহিলার সাথে পরকীয়ায় জড়ানোর পর ওই মহিলা গর্ভবতী হয়। তাদের একটা বাচ্চা আছে। এ ঘটনার কারণে মহিলার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছেন।
আইনগতভাবে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে ‘বিবাহবিডিডটকমে’ রেজিস্ট্রেশন করে বিভিন্ন মেয়ের সাথে প্রতারণার অভিযোগে বিবাহবিডি কর্তৃপক্ষ তন্ময়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তার বিরুদ্ধে জনৈক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে শাস্তিস্বরূপ অফিসে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তন্ময়কে।
প্রাইম ব্যাংকের সিইও এক সিনিয়র মহিলার সাথে রয়েছে তার পরকীয়া সম্পর্ক। ব্র্যাক ব্যাংকের রিলেশনশিপ অফিসার এক মেয়েকে নিয়ে নিয়মিত যায় বনশ্রীতে অবস্থিত বন্ধুর ফ্ল্যাটে। এসব ঘটনা জানাজানি হওয়ায় ফাইনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্টে বদলি হয়ে আসে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এক মেয়ের সাথে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সাবলেট নিয়ে থেকেছে। উত্তরাতে এক বাসায় বিগত কয়েক মাস যাবত যাতায়াত করছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এক মেয়েকে নিয়ে।
রকসি রহমান বলেন, তন্ময় বনানী নিবাসে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ এর পূর্বে একাকী বসবাস করত এবং বিভিন্ন মেয়ে ও মহিলাকে নিয়ে যেত নিয়মিত। নিবাসে এক মেয়ে আত্মহত্যা করারও চেষ্টা চালায়। কোয়ার্টারের সহকর্মীগণ, গার্ড, কাজের বুয়াসহ সকলেই তার ও তার পরিবারের কুকীর্তি জানে। কোয়ার্টারে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কারণে সিকিউরিটি হেড কর্তৃক তাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। তার বাসার এন্ট্রি রেসট্রিকটেড করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। গেল জানুয়ারিতে তার বাসা অফিস কর্তৃক রেইডও করা হয় এবং অফিসে তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়।