আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা এখন একমাত্র পুত্র অনীকের টানে কানাডায় রয়েছেন। অনীক সেখানে টরেন্টোর একটি খ্যাতনামা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা ও পড়াশোনা করছেন। ববিতার কথায় এখানে আমি বড় একা, অনীক ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। গতকাল কানাডা থেকে মুঠোফোনে ববিতা তার প্রবাস জীবনের কথা জানান। তার বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
কেমন আছেন, প্রবাস জীবনের গল্প শুনতে চাই-
মহান সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় ভালো আছি। অনীককে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না। আমি থাকি ঢাকায়, আর অনীক কানাডায়। প্রিয় পুত্রকে সব সময় মিস করি। অনীক ছাড়া আমি বড় একা। তাই সময়-সুযোগ পেলেই কানাডায় ওর কাছে ছুটে আসি। এখন অনীকের কাছেই আছি।
প্রিয় পুত্রকে কাছে পেয়ে কেমন লাগছে?
ভালো লাগছে। কিন্তু ওকে তেমন করে কাছে পাই না। সেই সাত সকালে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশে বেরিয়ে যায়। ফেরে সন্ধ্যার পর। আর যখন ও ফেরে তখন ভীষণ ক্লান্ত থাকে। দুটো খাবার মুখে দিয়ে শুয়ে পড়ে। আমি ওর চুলে বিলি কাটতে থাকি। একসময় ও ঘুমিয়ে পড়ে। ওকে গাড়ি ড্রাইভ করে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ইউনিভার্সিটিতে যেতে হয়। যখন তুষারপাত হয় তখন বরফের জন্য গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আমার ভীষণ ভয় করে। নামাজ পড়ে আল্লাহতায়ালার কাছে ওর নিরাপত্তার জন্য দোয়া করি। এভাবেই অনীককে নিয়ে আমার সময় কাটছে।
অনীককে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিল, তাহলে তা কি হচ্ছে না?
না, একদিকে অনীকের ব্যস্ততা, অন্যদিকে এখন এখানে উইন্টার সিজন চলছে। আমি এখানে এলেই মাছ ধরতে যাই। মাছ শিকার করা আমার শখ। এবার যখন মাছ শিকারে গেলাম তখন দেখি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। সামারেই শুধু এখানে মাছ শিকার করা যায়। সামার শেষ বলে মাছ শিকারও বন্ধ। অনীক ব্যস্ত বলে একা একা ঘুরে বেড়াতেও ভালো লাগে না।
তাহলে কানাডায় বলতে গেলে ঘরেই সময় কাটছে?
না, একেবারে ঘরে সময় কাটছে বললে ভুল হবে। বের হই সুইমিং করি। চিকিৎসকদের কথায় সুইমিং করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়ম করে এখানে সুইম (সাঁতার) করছি। আর কাঁচাবাজার করতে বের হতে হয়। বাসায় এসে অনীকের জন্য মজার সব রান্না করি। আমি না থাকলে ওকে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার ক্লান্ত শরীর নিয়ে রান্না করা থেকে শুরু করে ঘর মোছাসহ সবই করতে হয়। এখানে কাজের মানুষ খুব একটা পাওয়া যায় না। এখন আমি সব করছি। জীবনে কখনো ঘর মোছার মতো কাজ করিনি। এখন পুত্রের জন্য এসব করতে খুব আনন্দ লাগছে।
কখন দেশে ফিরছেন?
এখনো ঠিক করিনি। হয়তো বছরের শেষদিকে ফিরতে পারি। নিজ দেশে ফিরতে পারলে খুব ভালো লাগে। কারণ জন্মভূমির মতো প্রিয় স্থান আর কিছুই নেই। মাতৃভূমি সবার কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়। আমার কাছেও তাই।
ঢাকার বাসায় ফুল-পাখি নিয়ে বেশ আনন্দে সময় কেটে যায় তাই না?
ফুল-পাখি বলি আর অন্য যা কিছুই বলি, আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমার আদরের ধন অনীক। ওকে ছাড়া চারদিকে শুধুই অসীম শূন্যতা। ঢাকায় এলে অনিকবিহীন একাকিত্ব আমাকে ভীষণভাবে গ্রাস করে। আমি আবার ছুটে যাই অনীকের কাছে। এবার ঢাকা ফেরার সময় অনীকের জন্য কমপক্ষে তিন মাসের খাবার একসঙ্গে রান্না করে ডিপ ফ্রিজে রেখে আসব। যাতে তিন মাস পর আবার আমার কানাডা আসা পর্যন্ত ওকে রান্নাবান্না নিয়ে আর কষ্ট করতে না হয়।
অভিনয় বা নির্মাণে আর ফিরবেন না?
ফেরার ইচ্ছা যে নেই তা কিন্ত নয়, তবে একদিকে মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ খুবই কমে গেছে। সিনেমা হলের সংখ্যা অল্প-স্বল্প যা আছে তাতে দর্শক ফিরছে না। কারণ সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো নয়। আমি মনে করি, এখন বিশ্বব্যাপী সিনেপ্লেক্স কালচার চলছে।
তাই চলচ্চিত্রে প্রাণ ফেরাতে মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সিনেপ্লেক্স বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সবসময়ই আমি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমি চাই চলচ্চিত্র জগতের মানুষ আবার
ব্যস্ত হয়ে ওঠুক। দেশীয় এই প্রধান গণমাধ্যমটিতে আবার প্রাণের সঞ্চার হোক।