লটারি পেয়ে গিয়েছিলেন। ভাগ্যের চাকা যে আচমকাই এই গতিতে ঘুরতে শুরু করবে, স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি।
না চাইতেই প্রায় ১৪৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা! তাও আবার নিজের চাচার সম্পত্তি! লটারিই বটে। কিন্তু ধরুন, লটারির টিকিটটা নিয়ে লটারি অফিসে গিয়ে জানতে পারলেন, তার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে, তখন কেমন লাগবে?
ঠিক এমনটাই লেগেছিল ইতালির ক্লডিয়া মরেটির। ১৪৬ কোটি তার কাছে এখন কাগজের টুকরো ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই টাকা ক্লডিয়া যদিও কোনও লটারির টিকিট কেটে পাননি। একেবারে পুরোটাই নগদ হাতে পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তা লটারির টিকিটই হোক বা নগদ টাকা, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দুটোই কাগজের টুকরো হিসেবেই থেকে যায়।
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন না কী হয়েছে? বিষয়টা খুলে বলা যাক। ক্লডিয়া মরেটি ইতালির আদ্রিয়াটিক উপকূলে পেসারোতে থাকেন। একটা কল সেন্টারে কাজ করেন তিনি। একেবারেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সংসার চলে কোনও মতে।
২০১৪ সালে ক্লডিয়ার চাচার মৃত্যু হয়। চাচা একাই থাকতেন। কারণ, তার নিজের কোনও পরিবার ছিল না।
চাচার বাড়ি গিয়েই ‘লটারি’ পান ক্লডিয়া। সেখানে গিয়ে চাচার আলমারিতে নগদ ১০ কোটি লিরা পান তিনি। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য হিসাব করলে দাঁড়ায় ১৪৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
হাতে যেন চাঁদ পেয়ে যান ক্লডিয়া। চাচার সম্পত্তি তারই পাওয়ার কথা। এতগুলো টাকা পেয়ে ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেক কিছু ভেবে ফেলেন ক্লডিয়া।
কিন্তু ইতালির মুদ্রা বর্তমানে ইউরো। ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই লিরার পরিবর্তে ইউরো প্রবর্তন করা হয়েছে দেশে। ফলে লিরাগুলোকে ইউরোতে বদলাতে হত ক্লডিয়াকে।
চাচার মৃত্যুর যাবতীয় কাজকর্ম সেরে ইতালির সেন্ট্রাল ব্যাংকে ১০ কোটি লিরা নিয়ে হাজির হন ক্লডিয়া।
কিন্তু ভাগ্য যে এইভাবে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তা কি ক্লডিয়া কখনও ভেবেছিলেন! ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন, তার লিরার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।
২০১১ সাল পর্যন্ত যাবতীয় লিরা ইউরোয় বদলে নেওয়ার জন্য সুযোগ দিয়েছিল প্রশাসন। সেই মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে লিরা আর ইউরোয় বদলানো সম্ভব নয়।
এরপর ব্যাঙ্কে ম্যানেজারের সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোনওভাবে নিজের কাজটা করিয়ে নিতে পারেননি। মেয়াদোত্তীর্ণ লিরাগুলো অকেজোই রয়ে গিয়েছে।
ক্লডিয়ার হাতে এখন যে বিপুল অর্থ রয়েছে, সেগুলো নিতান্তই রঙিন কাগজের টুকরো ছাড়া আর কিছুই নয়।