গোলাম মাওলা রনি
ইসকন নামটি নিয়ে এ মুহূর্তের বাংলাদেশে যে অন্তহীন বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা যে শেষ অবধি কোন পরিণতি ডেকে নিয়ে আসে তা স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ইসকনকে ঘিরে রাজ্যের সন্দেহ, অবিশ্বাস, ভয়ভীতি এবং আরো বহু অশ্রাব্য গুজব ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দেশের সাধারণ মানুষ তার চিরাচরিত স্বভাব ও অভ্যাস অনুযায়ী, কোনো ধরনের বাছবিচার না করেই ইসকনকে উগ্র হিন্দুত্ববাদের একটি ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন বিবেচনা করে, যার যা মুখে আসে তাই বলে যাচ্ছে। তারা মনে করছে, ভারতের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং বিজেপি যুগপৎভাবে তাদের বাংলাদেশ মিশন সম্পন্ন করার জন্য সব রকম ক্ষমতা এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে ইসকনকে বাংলাদেশের মাটি-মানুষ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে বরবাদ করার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে লেলিয়ে দিয়েছে।
ইসকন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের উল্লিখিত সন্দেহ শুরু হয়ে যায় কয়েকজন অনলাইন কর্মীর জোরালো তৎপরতার কারণে, যারা বহুবিধ বাহারি প্রচারে ইসকন সম্পর্কে মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। অন্য দিকে সরকার, আওয়ামী লীগ ও ইসকন কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না দেখানোর কারণে জনমনে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হতে শুরু করেছে। কারণ জনগণ মনে করছে, ইসকনের পেছনে ভারতের মদদ থাকার দরুন তারা হয়তো সব কিছুকে থোড়াই কেয়ার করছে- অন্য দিকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের ভারতপ্রীতি ও ভারতভীতির কারণে তারা ইসকন নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম নয়। এহেন পরিস্থিতিতে সন্দেহপ্রবণ ভীতু শ্রেণীর লোকেরা সময় সুযোগ পেলেই নিজেদের মধ্যে ইসকন নিয়ে নানাবিধ আলাপ-আলোচনা করে এক দিকে যেমন নিজেদের ভয়ভীতি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে- তেমনি সেই ভয় দিয়ে জ্যামিতিক হারে অন্যান্য মানুষকে আক্রান্ত করে ছাড়ছে।
বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা হয়তো কিছুই জানতাম না, যদি না তারা তাদের নিয়মিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে একটি প্রথাবিরোধী কর্ম না করে বসত। তারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করে এবং ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দিয়ে তাদের হরিনামের কীর্তন গাওয়ায়। শিশুরা তাদের সহজাত কৌতূহল এবং আন্তরিকতা নিয়ে সমস্বরে জয় হরি বা জয় হরিবল ইত্যাদি শব্দের সমাহারে কীর্তন গাইতে গাইতে ইসকনের দেয়া খাবার খেতে থাকে। এই দৃশ্য যখন ফেসবুকের মাধ্যমে সারা দেশে চাউর হয়ে যায়, তখন ধর্মপ্রাণ মুসলমান জনসাধারণ, ইসলামী দলগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং ইসলামপন্থী সাংবাদিক ছাড়াও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা দারুণভাবে ক্ষেপে যান। তারা মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কোমলমতি বালক-বালিকা ও শিশুদেরকে পূজার প্রসাদ বলে কথিত খাদ্য বিতরণ করে শিশুদের মুখে হরিবল বাণী উচ্চারণ করিয়ে তাদেরকে হয়তো হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করছেন বলে সন্দেহ করতে থাকেন।
ইসকন নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন ইসকনের ধর্মগুরু তথা নেতৃবৃন্দের সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের কিছু ছবি, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবী এবং ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক বলে চিহ্নিত লোকজনের অন্তরঙ্গ ছবিগুলো ফেসবুকে চলে আসে। সেসব ছবিতে দেখা যায়, ইসকনের ধর্মগুরুরা নিজেদের মন্দিরে বাংলাদেশের উল্লিখিত লোকজনকে সংবর্ধনা দিচ্ছে- অথবা তারা ওই সব লোকের কর্মস্থলে গিয়ে দেখাসাক্ষাৎ করেছে। ছবিতে ইসকন নেতাদের অঙ্গভঙ্গি, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা এবং ফল-ফুলের সমাহার দেখে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক-সমঝোতা বা বোঝাপড়া রয়েছে। এসব ছবি ব্যাপক হারে প্রচার হওয়ার পর ইসকন সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বাড়তে থাকে।
ইসকন নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে আমি শত শত মানুষের অনুরোধ পেয়েছি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত লেখার জন্য। একটি লেখা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি এ সংগঠনটি সম্পর্কে যা জানতে পারি তা রীতিমতো কৌতূহলোদ্দীপক। তারা এ সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে কিভাবে কোমলমতি শিশু সন্তানদের টার্গেট করে নিজেদের মন্ত্র ওই সব শিশুর মন-মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয় এবং নিজেদের ধর্মে দীক্ষিত করে তা রীতিমত বিস্ময়কর। সংগঠনটির নেতাদের শিশু নির্যাতন, শিশুদেরকে যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি কুকর্মের কারণে তাদেরকে দেশ-বিদেশে বহু মামলা-মোকদ্দমা মোকাবেলা করতে হয়েছে; যার মধ্যে কয়েকটি মামলায় তাদের সাজাও হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তারা যে হিন্দুধর্মের প্রচার-প্রসারের জন্য কাজ করছে; সেই হিন্দুধর্মের প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব ধর্মগুরু-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং হিন্দু রাষ্ট্রশক্তি তাদেরকে দু’চোখে দেখতে পারে না।
আপনি যদি ইসকন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তবে প্রথমেই ইসকন শব্দের পুরো রূপটি জানতে হবে।
ইংরেজিতে আইএসকেসিওএন (ISKCON) শব্দের পুরো রূপটি হলো ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কন্সাসনেস, যা পশ্চিমা দুনিয়ায় হরে কৃষ্ণ মুভমেন্ট বা হরে কৃষ্ণ আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৯৬৬ সালে মার্কিন মুল্লুকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অভয় করনারাভিন্দ নামের একজন হিন্দু ধর্মযাজক এটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সংগঠনটিকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তোলেন। ষাটের দশকের হতাশাগ্রস্ত পশ্চিমা সমাজে যোগব্যায়াম এবং ধ্যান করার প্রাচীন ভারতীয় রীতিকে তিনি হরে কৃষ্ণ কীর্তনের সুরে অনেকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলেন। ভারতীয় কীর্তনের ধ্রুপদী সুরের সাথে তিনি পশ্চিমা ঘরানার জনপ্রিয় সঙ্গীতের তাল-লয়-সুর সংযুক্ত করে তার হরে কৃষ্ণ কীর্তনগুলোকে দারুণ শ্রুতিমধুর করে তোলেন। ষাটের দশকের পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গীতজগতের কিংবদন্তি জর্জ হ্যারিসন এবং জন লেননের সাহায্য নিয়ে অভয় করনারাভিন্দ কয়েকটি জনপ্রিয় কীর্তনের অ্যালবাম তৈরি করেন। বিটল-সখ্যাত জর্জ হ্যারিসনের সুপারহিট অ্যালবাম মাই সুইট লর্ড এবং জন লেননের গিভ পিস অ্যা চান্স অ্যালবামের সাথে হরে কৃষ্ণ লিরিক্স যোগ করার ফলে ইসকন এবং হরে কৃষ্ণ ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের মুখে মুখে ভাসতে থাকে।
মার্কিন পপ তারকাদের কল্যাণে আরো অনেক নামীদামি তারকা, প্রভাবশালী লোকজন এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ইসকন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলে অভয় করনারাভিন্দকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। যে অভয় একদিন শূন্য হাতে মার্কিন মুল্লুকের নিউ ইয়র্ক শহরে পা রেখেছিলেন, সেই তিনি ধর্মের নামে এত বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন; যার আর্থিক মূল্য দেখে দুনিয়া কাঁপানো সফল ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত হতবাক হয়ে পড়লেন। বর্তমানে ইসকন নামের প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মন্দির, ধ্যানগৃহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তীর্থকেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দুনিয়ার শত শত দেশের কয়েক হাজার স্থানে নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে।
আপনি যদি অতি সরলভাবে ইসকনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করেন, তবে দেখতে পাবেন- তারা সনাতন ধর্মের অনুসারী। তারা হরে কৃষ্ণ নামের গুণকীর্তন করে এবং হিন্দু ধর্মের বিধানাবলির আলোকে জীবন পরিচালনা করে। তারা তাদের মন্দিরে কীর্তন-ভজন প্রভৃতি গান গেয়ে নিজেদের ধর্মাচার চর্চা করে। তাদের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অনাথ আশ্রমে দরিদ্র ও অসহায় ছেলেদেরকে আশ্রয় দেয়া হয় এবং শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয়। তাদের মন্দিরগুলোতে যেকোনো ধর্মের যেকোনো বয়সের ক্ষুধার্ত লোক গিয়ে দিনের পর দিন বিনামূল্যে খাবার খেতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কোম্পানি অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস যখন গরিব ছিলেন তখন তিনি প্রায়ই হরে কৃষ্ণ মন্দিরে গিয়ে খাবার খেতেন বলে তিনি স্বয়ং বহু বক্তৃতায় তা উল্লেখ করেছেন। তারা আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে এবং তাদের ফুড ফর লাইফ অর্থাৎ জীবনের জন্য খাদ্য কর্মসূচির আওতায় তারা সারা বছর বিভিন্ন দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাতে গিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে নিয়মিত খাদ্য বিতরণ করে।
ইসকন সম্পর্কে উল্লিখিত তথ্য পর্যালোচনা করলে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সারা দুনিয়ায় প্রশংসার বন্যা বয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে প্রশংসা তো দূরের কথা, উল্টো তাদেরকে নিয়ে সেই ষাটের দশক থেকে কিরূপ সমালোচনা চলছে তা বুঝতে হলে নিউ ইয়র্কের মার্কিন ফেডারেল কোর্টের কয়েকটি আলোচিত মামলা সম্পর্কে জানতে হবে। ১৯৭৬ সালে নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে People Vs Murphy অর্থাৎ জনগণ বনাম মার্ফি মামলায় যদিও রায় প্রদান করেন, হরে কৃষ্ণ মতবাদ একটি ভালো ধর্মীয় বিশ্বাস; কিন্তু মামলার প্রেক্ষাপট এবং বাদিদের অভিযোগ আজো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ইসকনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। ওই মামলায় দু’জন মার্কিন নাগরিক আদালতে ইসকনের বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ দায়ের করেন যে, ইসকনের ধর্মগুরুরা তাদের কোমলমতি শিশুসন্তানদের ব্রেনওয়াশ করে প্রথমে তাদেরকে পরিবার থেকে আলাদা করেছে এবং পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত করেছে।
উপরোল্লিখিত, ঘটনার পর ১৯৮৭ সালে আরেকটি মামলায় ইসকন নেতা কির্তানন্দের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে হত্যা মামলার চার্জ গঠন হয় এবং তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে বিরাট এক অপরাধী গ্যাং গড়ে তুলেছে যাকে অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় র্যাকেটারিং (Racketeering) বলা হয়। অপরাধী কির্তানন্দ আট বছর জেল খাটার পর বের হয়ে আসেন এই ভিত্তিতে যে, আদালত পরবর্তী সময়ে সন্তষ্ট হয় যে, আসামির সাথে হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তিনি যে অপরাধীচক্রের হোতা এবং নিজস্ব গ্যাংয়ের মাধ্যমে ভয়ভীতিমূলক নানা অপরাধ করে নিজেদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধ মতের লোকদেরকে শায়েস্তা করে, আদালত কির্তানন্দ এবং তার ৫০০ সহযোগীকে প্রতারণার দায়েও অভিযুক্ত করেন।
ইসকন সম্পর্কে উল্লিখিত দু’টি সাড়া জাগানো মামলার বাইরে সত্তর এবং আশির দশকে শিশু নির্যাতন এবং শিশু বলাৎকারের একাধিক মামলা দায়ের করা হয়, যেগুলোর মধ্যে টারলি কেস (Turley Case) সারা দুনিয়ায় হইচই ফেলে দেয়। ২০০৪ সালে এই মামলা নিষ্পত্তি হয়। বাদির পক্ষে আদালতের রায় ছিল যে, ইসকনকে ৯০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী ঢাকায় প্রায় সাত হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাদিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ইসকন এ অবস্থায় নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে এবং দেড় কোটি ডলার, অর্থাৎ ১২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করে রক্ষা পায়। ইসকনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ভারতবর্ষের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। হিন্দুরা মনে করছে যে, ইসকন বিকৃত ধর্মমত প্রচার করে হিন্দুইজমের সর্বনাশ করছে। ইসকন প্রচার করছে, তাদের ধর্মে বর্ণিত ৩৩ কোটি দেবতার মধ্যে প্রধান দেবতা হলো কৃষ্ণ। তাদের মতে কৃষ্ণ হলো আদি ও একক দেবতা। কৃষ্ণ থেকেই বাকি দেবতাদের সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীতে মানবরূপে যত দেবতা এসেছেন, তারা সবাই কৃষ্ণের অবতার বা কৃষ্ণজাত সৃষ্টি। ইসকনের হরে কৃষ্ণ মতবাদের সাথে কোনো হিন্দু সংগঠনই একমত নয়। হিন্দুরা সেই অনাদিকাল থেকে শিবকেই প্রধান দেবতা মেনে আসছে। সুতরাং হরে কৃষ্ণ মতবাদ পুরো হিন্দুইজমের ওপরই আঘাত হেনেছে বলে হিন্দুরা অভিযোগ করছে।
সারা দুনিয়ায় যারা ইসকন পরিচালনা করছেন, তারা সব সময় দেশী-বিদেশী রাষ্ট্রশক্তি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যম এবং পৃথিবীর প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তিদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন, যা পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মীয় সংগঠন কল্পনাও করতে পারে না। ফলে পৃথিবীব্যাপী ইসকনের সদস্য সংখ্যা যেমন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, তেমনি সংগঠন হিসেবে ইসকনের প্রভাব-প্রতিপত্তি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। ইসকন গোঁড়া হিন্দুত্ববাদ পরিহার করে তাদের হরে কৃষ্ণ আন্দোলনকে এতটাই উদারনৈতিক করেছে যে, পৃথিবীর যেকোনো মতবাদের যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইসকনের সদস্য হিসেবে যোগদান করতে পারে। ইসকন তাদের এই মতবাদকে অর্থবিত্ত, ক্ষমতা, সঙ্গীত-বিনোদন এবং খাদ্য-পানীয় দিয়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয় পণ্যরূপে মাশরেক থেকে মাগরেব এবং আমেরিকা থেকে জাগরেব পর্যন্ত জনগোষ্ঠীর দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে একটি মাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে, আর তা হলো- সবাই সমস্বরে গেয়ে উঠুক! হরে কৃষ্ণ! হরিবল।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য