ধর্মীয় ভাবগম্ভীর ও আনন্দঘন অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়ে মন্ট্রিয়লের হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাঙালিরা তাদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করেছেন। গত ৩ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পাঁচদিন ব্যাপী পূজানুষ্ঠানে বাংলাদেশী হিন্দুদের প্রতিষ্ঠিত দু’টি মন্দিরেই বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে। ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত উৎসবের কর্মসূচীতে ছিল পূজা, অর্চনা, ভোগ, অঞ্জলি, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রসাদ বিতরণ।
মঙ্কস্থ সনাতন ধর্ম মন্দির এবং এলার্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ হিন্দু মন্দির পূজা উপলক্ষে সেজেছিল বর্ণাঢ্য রূপে। দুটি মন্দিরেই সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে স্থানীয় শিল্পীরা নাচ, গান, কৌতুক, নাটিকা, আবৃত্তি ইত্যাদি পরিবেশন করেন। দিনরাত বিরতিহীনভাবে চলে প্রসাদ বিতরণ। স্থানীয় শিল্পীরা ছাড়াও সনাতন ধর্ম মন্দিরে অতিথি শিল্পী হিসেবে শুক্রবার রাতে তমোজিত দাশ গুপ্ত এবং রবিবার রাতে শ্রেয়সী ভট্টাচার্য সঙ্গীত পরিবেশন করেন। উভয় শিল্পীই মধ্যরাত পর্যন্ত মাতিয়ে রাখেন হল ভর্তি দর্শকদের। একই মন্দিরে অম্লান দত্তের পরিচালনায় ‘মহিষাসুর বধ’ এবং তৃপ্তি দাসের পরিচালনায় ‘নমো শিবায়’ মিনি নাটক দর্শকদের প্রচুর আনন্দ দিয়েছে। এছাড়া লোকজ শিল্পী গোষ্ঠী এবং ছোট ছেলে-মেয়ে ও প্রবীণদের দলীয় ও একক গান ও নৃত্য ছিলো উপভোগ্য। সনাতন ধর্ম মন্দিরের পূজায় পৌরহিত্য করেন কল্লোল ভট্টাচার্য। তাঁকে সহযোগিতা করেন প্রকৌশলী কাঞ্চন চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন সনাতন ধর্ম মন্দিরের বোর্ড অব ডিরেক্টরের চেয়ারম্যান মলয় কান্তি বর্মন, সভাপতি অজিত কুমার ধর ও সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার মজুমদার। সনাতন ধর্ম মন্দির থেকে প্রতিবারের মতো এবারও চমৎকার শারদ সংকলন প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু মন্দিরের অনুষ্ঠানগুলোও ছিলো মনোমুগ্ধকর। পুরো পাঁচদিনই মন্দিরে দিনরাত মানুষের ঢল নেমেছিল। এই মন্দিরে পূজায় পৌরহিত্য করেন অজয় চক্রবর্তী ও অলক ভট্টাচার্য। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিলো স্থানীয় শিল্পীদের নজরকাড়া পরিবেশনা। তিনদিন ব্যাপীই সন্ধার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সমবেত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যথাক্রমে ১ম দিন বুলবুল দেব, ২য় দিন নিরোজ বড়ুয়া ও ৩য় দিন অনুজা দত্ত । তিনদিন ব্যাপীই সন্ধার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন যথাক্রমে ১ম দিন সুমী দে, ২য় দিন মল্লিকা পাল ও ৩য় দিন কাকলী ধর ডল ও অজয় পাল । স্থানীয় শিল্পীদের গান ছাড়াও অতিথী শিল্পী হিসাবে গান পরিবেশন করে ইরিনা রায়। মন্দির অঙ্গনে বসেছিল শাড়ি, গয়না ও খাবারের স্টল। পুরো পাঁচদিন ভক্তরা ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খধ্বনি আর প্রিয়জনদের মিলনমেলায় ছিলেন স্বদেশে পূজার আমেজে আচ্ছন্ন। এতে মন্দিরের সভাপতি স্বপন পাল ও সাধারণ সম্পাদক কৃপেশ পাল স্বাগত ভক্তব্য রাখেন।
পাঁচদিন এক অফুরন্ত আনন্দযজ্ঞে নিমজ্জিত থাকার পর গত ৭ অক্টোবর বিজয়া দশমীর রাতে অপরাজিতা, রাখি বন্ধন, সিঁদুর খেলা, ধামাইল নৃত্য, কোলাকুলি ও প্রীতি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
এদিকে গত ১২ ও ১৩ অক্টোবর শনি ও রবিবার ভারত ভবনে সনাতন মাঙ্গলিক পরিষদের উদ্যোগে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়েছে। এখানেও পূজা, ভোগ, অঞ্জলি, আরতি, প্রসাদ ছাড়াও ছিল স্থানীয় শিল্পীদের আয়োজনে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মাঙ্গলিক পরিষদের পূজায় পৌরহিত্য করেন সুকুমার চক্রবর্তী। এই সংগঠনের আয়োজনে এবার পূজার পাঁচ বছর হলো বলে জানিয়েছেন এর অন্যতম উদ্যোক্তা মানু সিং। রবিবার বিজয়া দশমীর রাতে ধামাইল ও সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে দু’দিন ব্যাপি উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
সাপ্তাহিক ভোরের আলো’র ১লা অক্টোবরে সংখ্যাতে মন্ট্রিয়ল ব্যুরো থেকে বিশেষ দুর্গাপূজা সংখ্যা প্রকাশিত হয়। দুই মন্দিরে বাড়তি পত্রিকা দেয়ার পরও অনেক পাঠক পত্রিকার জন্য মন্ট্রিয়ল ব্যুরোতে যোগাযোগ করেন। ভোরের আলো’র এ উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মন্দিরে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ জানান। আগামীতে যেন এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকে সেজন্য সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন দুর্গাপূজায় আগত ভক্তবৃন্দ।