বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার সেট পিসে মাথা ছুঁইয়ে রাতারাতি বাংলাদেশের তারকা বনে গেছেন সাদ উদ্দিন। কাতার বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাঠে ৪২ মিনিটে গোল করে প্রায় পুরো স্টেডিয়াম দৌড়ে উদযাপন করেন উইঙ্গার সাদ।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন মাত্র ৮ ম্যাচ, তবে এটিই প্রথম গোল সিলেটের এই তরুণের। সাদ উদ্দিনের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুচার গ্রামে।
সাদের গোলের পর কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়াম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত এই লিড ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। তবুও সাদকে নিয়ে আলোচনা চলছেই।
ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচ ড্রয়ের পর সিলেটের এই তরুণ নিয়ে মাতামাতি চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাদের খেলা যেমন দর্শকদের মন জয় করেছে তেমনি তার পেটানো শরীরও ওঠে আসছে আলোচনায়। এই আলোচনায় অনেকেই বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গেও তুলনা করছেন; এমনই শরীর দুজনের!
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নিজস্ব কোনো জিমন্যাসিয়াম নেই। তাই ফিটনেস নিয়ে ফুটবলাররা নিজে থেকেই কাজ করতে বাধ্য হন। এর মধ্যেও যারা ফিটনেস নিয়ে বাড়তি কাজ করে নজর কেড়েছেন তাদেরই একজন এই সাদ উদ্দিন।
“ফিটনেস নিয়ে নিজে নিজেই কাজ করতেন সাদ, আবাহনী ক্লাবে যখন যেতাম তখন দেখতাম অন্য সতীর্থরা সাথে না থাকলেও একাই কাজ করে যাচ্ছেন সাদ উদ্দিন”, বলেন ফুটবল বিশ্লেষক মামুন হোসেন।
ফারহান আখতার অভিনীত ভারতের সিনেমা ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ দেখে অতিরিক্ত পরিশ্রমের অনুপ্রেরণা পেতেন সাদ।
“ফিটনেস নিয়ে কোচের পরামর্শ ছিল কিছু, সেগুলো অনুসরণ করতেন এবং খাবার খুব নিয়ন্ত্রণে রাখতো সাদ।”
সাদ উদ্দিনের জাতীয় দলে আসাটা বয়সভিত্তিক ফুটবলের সিঁড়ি বেয়েই। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব ১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলটি। সেই দল থেকে সিনিয়র পর্যায়ে উঠে আসেন সাদ, নিপু, আতিক। তবে এদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন সাদ। এখন নিজেকে কোচ জেমি ডে’র দলের অপরিহার্য অংশও করে ফেলেছেন তিনি।
আবাহনীর মতো বড় ক্লাবে খেলছে এখন সাদ, এর আগে তার গোড়াপত্তন হয় বয়সভিত্তিক দলে। সাদের এই ওঠে আসার ক্ষেত্রে আরও একজন বড় ভূমিকা পালন করেন, তিনি সিলেটের আরেকজন, ওয়াহেদ আহমেদ। জাতীয় দলে খেলেছেন ওয়াহেদ, খেলেছেন আবাহনী-মোহামেডানেও, তবে এখন স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন ইংল্যান্ডে।
বাংলাদেশ দলের সাবেক ফুটবলার ওয়াহেদ সাদকে সিলেট থেকে ঢাকার ফুটবলে নিয়ে আসেন। ওয়াহেদ বলেন, “সাদের পরিবারের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক, বয়সভিত্তিক দল থেকে ওকে আমি আবাহনী ক্লাবে নিয়ে আসি, তখন থেকেই ওর ফুটবলে শুরু। আমরা একদম আপন ভাইয়ের মতো, এখন নিয়মিত কথা হয়, ভিডিওচ্যাট করি।”
ওয়াহেদ আহমেদ বলেন, ফুটবলে কিন্তু সাদ নিজে থেকেই এসেছে, অনূর্ধ্ব ১৬তে। ও যেভাবে খেলেছে আমার মনে হয়েছে ঢাকায় নিয়ে আসলে ভালো করবে, তখন ভাবি যে ওকে আবাহনীকে নিয়ে আসি, প্রথম বছর টিমে সুযোগ পায়নি কিন্তু তার পরের বছর সে ম্যাচ পেয়েছে এবং ভালো করেছে।”
ভারতের বিপক্ষে এরআগেও গোল করার মধুর স্মৃতি আছে সাদের। তবে সেটা বয়সভিত্তিক দলে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে সিলেটের সেই ফাইনালে টাইব্রেকারে গোল পেয়েছিলেন সাদ উদ্দিন। এছাড়া পুরো আসরে তরুণ স্ট্রাইকার হিসেবে দুর্দান্ত খেলেছিলেন। ২০১৬ সালে ফেনী সকার ক্লাবের বিরুদ্ধে তার ক্যারিয়ারে প্রথম প্রিমিয়ার লীগ গোল করেন সাদ। ২০১৭ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময় ভুটানের বিরুদ্ধে সিনিয়র দলে অভিষেক ঘটে সাদের।
সাদ উদ্দিন স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে আসছেন। এবার ঘরোয়া মৌসুমে আবাহনীতে খেলতে হয়েছে বেশিরভাগ সময় ডিফেন্সে। কিন্তু জাতীয় দলে জেমি ডে তাকে খেলিয়েছেন উইংয়ে। যখন প্রয়োজন হয়েছে প্রতিপক্ষের সীমানায় গিয়ে হানা দিয়েছেন। আবার সময়মতো ডিফেন্সে এসে দাঁড়িয়ে গেছেন।
তাই যে কোনো পজিশনে সাদ মানিয়ে নিয়েছেন অবলীলায়। সাদ বলছিলেন, ‘কোচ আমাকে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে খেলিয়েছেন। আমি তার আস্থার প্রতিদান দিয়েছি। একাদশে খেলা তো কম কথা নয়।’
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘ভারত আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে বেশ এগিয়ে। তাদের বিপক্ষে এক পয়েন্ট পাওয়াটাও বড় সাফল্য। তবে আমরা যদি তিন পয়েন্ট পেতাম তাহলে অনেক ভালো লাগতো। কিন্তু তারপরেও কোনো আক্ষেপ নেই। পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফিরে আসতে পারছি, এটাই বড় কথা।’