চিকিৎসা অধিকার রক্ষায় আইনি লড়াইয়ে বিজয় অর্জনের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিশু তাফিদা রাকিব (৫) এখন ইতালিতে।
লাইফ সাপোর্টে থেকেই মঙ্গলবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সযোগে তাফিদাকে নিয়ে তার মা সেলিনা রাকিব ও বাবা মোহাম্মদ রাকিব ইতালির পথে রওনা হয়ে নির্ধারিত সময়েই পৌঁছেছেন ইতালি।
রয়েল লন্ডন হাসপাতালের লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে বিজয় অর্জনের পরই মঙ্গলবার ইতালি নিয়ে যাওয়া হয় তাফিদাকে।
ইতালিতে রওনা হওয়ার আগে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শিশু তাফিদার নতুন চিকিৎসা অভিযানের সাফল্য কামনা করে উড়ানো হয় বেলুন।
এর আগে সোমবার লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন ও কমিউনিটি মতবিনিময়ে ইতালিতে চিকিৎসা ব্যয়ে তাফিদা পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্টরা।
সংবাদ সম্মেলনে তাফিদার মা সেলিনা রাকিব তাফিদার চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, শুরুর দিকে রয়েল লন্ডন হাসপাতাল বলেছিলো, তাফিদা এ অবস্থায় মাত্র কয়েকদিন হয়তো বাঁচতে পারে। তাই কষ্ট না দিয়ে লাইফ সাপোর্ট খুলে তাকে মৃত্যুর হাতেই তুলে দিতে চায় তারা। কিন্তু এখন বলছে, তাফিদা ২০/৩০ বছর বেঁচে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাফিদার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইতালির হাসপাতালে ৭ মাস চিকিৎসা নিলে অনেকাংশে সুস্থ হয়ে উঠার আশা করছেন তারা।
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব হলে ক্লাব সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়েরের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে তাফিদার বাবা কন্সট্রাকশন কনসালটেন্ট মো. রাকিব, চ্যানেল এসের ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আতাউর রহমানসহ বিশিষ্টজন অংশ নেন।
মিডিয়া প্রতিনিধি ছাড়াও তাফিদার চিকিৎসায় সামগ্রিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বক্তৃতা করেন, জিএসসি’র ভাইস চেয়ারম্যান মির্জা আসহাব বেগ, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম, ইউকে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ এমবিই, বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহিব চৌধুরী, চ্যানেল এস-এর হেড অব প্রোগ্রাম ফারহান মাসুদ খান ও বিয়ানীবাজার ক্যান্সার হাসপাতালের ডিরেক্টর আবদুল শফিকসহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে চ্যানেল এস-এর ফাউন্ডার মাহি জলিল ঘোষণা দেন, শিগগির জিএসসি-র চ্যারিটির মাধ্যমে তাফিদাকে বাঁচাতে চ্যানেল এসে লাইভ ফান্ডের জন্য চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় মানবিক বিষয়ে অগ্রসর থাকার চেষ্টা করি। চ্যানেল এস তাফিদার পাশে আছে। এখানে কোনো ধরনের ফি বা খরচ থাকবে না।
তাফিদার মা সেলিনা রাকিব জানান, লন্ডনের কিউসি ব্যারিস্টাররা তাফিদার মানবিক অবস্থান এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রায় ৮০ হাজার পাউন্ড ডিসকাউন্ট দিয়ে কাজ করেছেন। লাইফ সাপোর্ট মেশিন না খুলেই তাফিদাকে নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার আইগত অধিকার তিনি পেয়েছেন। তবে খরচ বিশাল। প্রায় আড়াইশ’ হাজার পাউন্ড। পারিবারিকভাবেই যতটুকু সম্ভব ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। আর গো ফান্ড মি ডটকমের মাধ্যমে ফান্ডরেইজ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড।
উল্লেখ্য, ৫ বছর বয়সের তাফিদা রাকিব চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথায় ব্যথা অনুভব করে। এর একটু পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে স্থানীয় নিউহ্যাম হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলেন, তাফিদার ব্রেইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর তার মাথায় অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সে কোমায় রয়েছে।
এরপর তাফিদাকে নেওয়া হয় রয়েল লন্ডন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। ডাক্তাররা বলেছিলেন, তাফিদার আর সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর জন্য তারা তাফিদার লাইফ সাপোর্ট খুলে দ্ওেয়ার পরামর্শ দেন।
তাফিদার পরিবার এতে রাজি না হয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি চিলড্রেনস হাসপাতালে স্থানান্তর করতে চায়। কিন্তু তাফিদার রয়েল লন্ডন হাসপাতালের ডাক্তাররা তাকে ইতালির হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছিলেন না।
ডাক্তাররা লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার অনুমতি আদায়ের জন্যে আদালতে মামলা করেন। এদিকে, তাফিদার মা সেলিনা বেগমও তার মেয়েকে ইতালির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতির জন্যে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতে যুক্তি তর্ক শেষে ৩ অক্টোবর ব্রিটেনের উচ্চ আদালত তাফিদাকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
তাফিদার গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায়।