বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কে ম্যানহাটন বাংলা কালচারাল স্কুলের বার্ষিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় সময় ৬ অক্টোবর রোববার দুপুরে ম্যানহাটনের পিএস ১৭১ এ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলা স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি অব কলেজের মেডিসিন এর অধ্যাপক ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ।
ম্যানহাটন বাংলা কালচারাল স্কুলের সিইও এবং ইউএসএ বালাদেশি অর্গানাইজেশন ইনকের সভাপতি ইকবাল আহমেদ মাহবুবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের রবার্ট জ্যাকসন ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্কের কনসাল আয়েশা হক।
ম্যানহাটন বাংলা কালচারাল স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক কবি আশরাফ হাসান, আমেরিকান-বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ইনকের সহ-সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল রেজা স্বপন এবং স্কুলের পরিচালক মানিক আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিউ ইয়র্ক স্টেটের সাবেক এসেম্বলিম্যান এরিক এ স্টেভেনসন, সাবেক নিউ ইয়র্ক সিটি এডভোকেট পদপ্রার্থী হেলাল আবু শেখ, বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশন ও বাংলাবাজার জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ গিয়াস উদ্দিন, আমেরিকান-বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ইনকের সভাপতি আব্দুস সহিদ, মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, ইউএসএনিউজঅনলাইন ডটকম এবং সাপ্তাহিক জনতার কন্ঠের সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, নিউ ইয়র্কের হাই স্কুল প্রিন্সিপাল মেজর (অব.) ওয়াজি উল্লাহ, বিশ্বনাথ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি ইউএসএর সভাপতি হাজি মনির আহমেদ, আসসাফা ইসলামিক সেন্টারের সেক্রেটারি মুফতি লুৎফুর রহমান কাশেমী, লংজিভিটি হেলথ সার্ভিসের কর্ণধার রুকন হাকিম, ইউনিয়ন সেটেলমেন্টের কমিউনিটি অর্গনাইজার এঞ্জেলা ডি ডোনাডেলে, সুনামগঞ্জ জেলা সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ, ছাতক উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম আম্বিয়া মাজকুর পাবেল, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট মো. মনির উদ্দিন, দ্বীন ইসলাম, ইমতিয়াজ আহমেদ বেলাল, মান্না মুন্তাসির প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ছাতক সমিতির সভাপতি মো. আবদুল খালেক। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীত শিল্পী মোহর খান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ম্যানহাটন বাংলা কালচারাল স্কুলের পরিচালক প্রশাসন মো. তাজুল ইসলাম। তিনি প্রজেক্টরের মাধ্যমে স্কুলের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউএসএ বালাদেশি অর্গানাইজেশন ইনকের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম সেলিম। স্কুলের শিক্ষার্থীরা অতিথিদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
উৎসবমুখর পরিবেশে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন স্কুলের কর্মকর্তারা। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে এসব বই গ্রহণ করে ছাত্রী-ছাত্রীরা। এ সময় কৃতি শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদান করেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক স্টেট সিনেটের পক্ষ থেকে ম্যানহাটন বাংলা কালচারাল স্কুলকে প্রক্লেমেশন প্রদান করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরও বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ ম্যানহাটন বাংলা কালচারাল স্কুলের কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, স্কুলটি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার যে প্রয়াস নেয়া হয়েছে তা মাইলফলক হয়ে থাকবে। বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মের মাঝে বাংলা ভাষা, সাহিত্য সাংস্কৃতিক বিকাশ সাধনে বাংলা স্কুল নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তিনি এ প্রজন্মের সন্তানদের বাংলা শিক্ষায় উৎসাহ দেয়ার জন্য নিজ পরিবার থেকে অভিভাবকদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্কের কনসাল আয়েশা হক বলেন, এ প্রজন্মের সন্তানদের বাংলা শিক্ষায় উৎসাহ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বই বিনামূল্যে বিতরণের এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা সহজতর হবে।
ম্যানহাটন বাংলা কালচারাল স্কুলের সিইও ইকবাল আহমেদ মাহবুব প্রবাসী বাংলাদশি এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মাঝে ফ্রি স্কুল বই বিতরণ করার জন্য কনসাল জেনারেল ও বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি স্কুলের কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নিতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিগত কয়েক বছর যাবত বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ফ্রি স্কুল বই বিতরণ করা হচ্ছে। এতে তার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা দারুণভাবে উপকৃত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য সংগঠনের সকল সদস্য, শুভানুধ্যায়ী ও সহযোগীদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ইকবাল আহমেদ মাহবুব।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তারা এ ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোরদের জন্য বাংলা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
তারা বলেন, অভিভাবকরা উদ্যোগী হলে প্রবাসে শিশুদের বাংলা শেখানোর কাজ মোটেও কঠিন নয়। এজন্য অভিভাবকদের ঘরে ঘরে নিজ সন্তানদের সাথে সব সময় বাংলায় কথা বলার চর্চা রাখতে হবে। প্রবাসে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে সকল অভিভাবকেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।