প্রখ্যাত সাংবাদিক-কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিউ ব্লাড দরকার। ৮০ ভাগ অসৎ বর্তমান এমপিকে বাদ দিয়ে তরুণ ও নতুনদের মনোনয়ন দিতে হবে। ভালো, শিক্ষিত ও দুর্নীতি স্পর্শ করেনি- এমন লোকদেরই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। আর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগেও সংস্কার দরকার।
রোববার রাজধানীর বিজয়নগরের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে গাফ্ফার চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি এমন আহ্বান জানান। আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামকে পরিচিত করাতেই এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। যেখানে গাফ্ফার চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একমাত্র দল, যাদের ক্ষমতায় আনা যায়। আওয়ামী লীগের বিকল্পও নেই। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিরা এলাকায় চাঁদাবাজি ও অসৎ কাজ করে দলের অর্জনকে নষ্ট করছেন। তাই দলটির প্রয়োজন নিউ ব্লাড।
৮০ ভাগ এমপি বাদ দেওয়ার পরামর্শ কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান এমপিরা নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন। কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। কেউ কেউ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজি করেছেন। তারা জনপ্রিয় নন, এলাকার লোকের সঙ্গেও মেশেননি। এমপি নির্বাচিত হয়ে একবার ঢাকায় এসেছেন, আর এলাকায় যাননি।
গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ছাত্রশিবির আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করছে। তারা শক্তিশালী হচ্ছে, দলকে বিতর্কিত করছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। দলের ওপর থেকে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাই চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে আধুনিক ও শিক্ষিত তরুণদের মনোনয়ন দিয়ে এমপি নির্বাচিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের তিনটি মূল সম্পদ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা আওয়ামী লীগের জন্মদাতা, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং ৬২ বছরের পুরনো দল। আওয়ামী লীগের অন্তত আরও দু’বার ক্ষমতায় থাকা দরকার। এ জন্য তরুণদের নেতৃত্বে আনতে হবে।
জনপ্রতিনিধি মনোনয়নে আওয়ামী লীগ সফল না ব্যর্থ- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট এ কলামিস্ট বলেন, আওয়ামী লীগকে ব্যর্থ বলব না, আবার সফলও বলব না। তবে সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আওয়ামী লীগে সফল মানুষ দরকার।
২০১৪ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনটিতে মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। জাপার মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন লিয়াকত হোসেন খোকা। তবে আগামী নির্বাচনে এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চান গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বলেন, এই আসনে নৌকা তুলে দেওয়া হোক আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলামের হাতে।
নির্বাচন কীভাবে হওয়া উচিত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি পরামর্শ দিতে পারি, কিন্তু আওয়ামী লীগ শুনবে কি-না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। শনিবারও ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রীদের বলেছি, আপনারা নতুনদের মনোনয়ন দিন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তার নেতৃত্ব নতুনদের মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচন করা উচিত।’
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিকে ভোটে আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র টেকসই হয় না। সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা দরকার। এ জন্য বিএনপিকে নির্বাচনে আনা দরকার। যদিও তারা আসবে কি-না সন্দেহ রয়েছে।
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার পরামর্শ জানতে চাইলে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কারণে জেলে যাননি। তিনি জেলে গেছেন একটি অভিযোগে দণ্ডিত হয়ে। এরপরও সরকার চাইলে বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারে। তাকে সাবজেলে রেখেও নির্বাচনের সুযোগ দিতে পারে। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিলেও কোনো সমস্যা ছিল না। কেন নেওয়া হয়নি, এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা রিপোর্ট কী ছিল- সেটি সরকার ভালো জানে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াসহ তারেক রহমান অনেক সুবিধা নিয়েছেন। তারা সুযোগের অসৎ ব্যবহার করেছেন। তারেক জামিন নিয়ে লন্ডনে গেছেন। তার জামিন অনেক আগে বাতিল হয়েছে। লন্ডনে বসে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছেন। এত টাকা কোথা থেকে আসছে তা তারাই জানেন!
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামও বক্তব্য দেন।