লিখেছেন গোলাম মাওলা রনি
বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ে একটার পর একটা পিরামিড তৈরি হচ্ছে। একদল দুর্নীতিবাজ অন্য দলের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের দুর্নীতির পিরামিড গগনচুম্বী করার জন্য করছে না এহেন অপকর্ম নেই। নিজেদের দুর্নীতিকে বর্ণাঢ্য জাঁকজমকপূর্ণ এবং ভীতিপ্রদ করার জন্য যত রকম ফন্দি-ফিকির-দুর্বৃত্তপনা এবং নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়ে তারা প্রাচীন মিসরের ফেরাউনদের পিরামিড তৈরির কীর্তি-কাহিনীকেও ম্লান করে দিচ্ছেন। আদিকালের ফেরাউনরা নিজেদের মৃতদেহকে সোনা-রুপা-হীরা-মণি-মুক্তা-জহরত প্রভৃতি দিয়ে আবৃত্ত করে পিরামিডের মধ্যে কবর রচনা করত। অদ্ভুত কৌশলে নির্মিত গগনচুম্বী সেসব পিরামিডের নির্মাণরহস্য নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে তামাম দুনিয়া গবেষণা করে যাচ্ছে- কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। ফলে পৃথিবীর মানুষ পিরামিডের নাম শুনলেই অবাক বিস্ময়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে এবং ফেরাউনদের কথা স্মরণ করে।
মিসরীয় ফেরাউনদের নির্মিত পিরামিডের মতোই বাংলাদেশের দুর্নীতির ফেরাউনদের তৈরি করা দুর্নীতির নিত্যনতুন পিরামিড শুধু হাভাতে বাঙালি নয়, সাহেব-সুবাদের জাত বলে পরিচিত পশ্চিমা দুনিয়াকে অবাক করে দিয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকা-ইতালি প্রভৃতি দেশের মাফিয়া ডন বা গডফাদার অথবা ভারতবর্ষের মরে যাওয়া সুপার ডন হাজী মাস্তান এবং এ কালের জীবিত ডন দাউদ ইব্রাহিম, ছোটা শাকিল-রাজন প্রভৃতিরা অশরীরী আত্মা এবং বাস্তব আত্মার প্লানচেট মিটিং করেও বাংলাদেশের দুর্নীতির এ বি সি ডি রপ্ত করতে না পেরে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছে বলে শয়তানি জগতের মিডিয়াগুলোতে লিড নিউজ বের হয়েছে। অন্য দিকে, আফ্রিকার উগান্ডা-সিয়েরা লিওন থেকে শুরু করে সানি লিওনরা পর্যন্ত তাদের অতীত কর্ম ত্যাগ করে দুর্নীতির নব্য ফেরাউনদের কাছে দুর্নীতির ম্যাজিক শেখার জন্য বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার পাসপোর্ট-ভিসা নিতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি-শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি-হলমার্ক-ডেসটিনি-বিসমিল্লাহ গ্রুপ প্রভৃতি প্রলয়ঙ্করী দুর্নীতির সাগর-মহাসাগরের ওপরে যে বালিশের পিরামিড উঠতে পারে তা কোনো মানুষ তো দূরের কথা, স্বয়ং ইবলিশ শয়তানও চিন্তা করতে পারেনি। বালিশের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির পিরামিডে পর্দার স্পর্শ লেগে তা অতীতের সব পিরামিডের উচ্চতা এবং চকচকে ভাবকে ম্লান করে দেয়। একটি সরকারি হাসপাতালের পর্দার দাম মাত্র ৩৭ লাখ টাকা, এমন সংবাদ এখন অন্যান্য দুর্নীতির ফেরাউনদের রীতিমতো উত্তেজিত করে তুলেছে। কারণ, তারা এখন আফসোস করে আহাজারির মাধ্যমে নিজেদের দুর্নীতির কাঙালিপনা ও ছোটলোকি চিন্তা-চেতনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করা শুরু করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত হোক সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারি অথবা আন্তর্জাতিক, তা নিয়ে ওই খাতের মধু-মেওয়া লুটকারী দুর্নীতির ফেরাউনদের কোনো কালেই মাথাব্যথা ছিল না। তাদের কাছে মনুষ্য স্বাস্থ্য কিংবা পশু স্বাস্থ্য কোনোটাই আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল না। তারা দুর্নীতির জন্য শিয়ালের শরীরে বাঘের ওষুধ অথবা হরিণের শরীরে গণ্ডারের ওষুধ প্রয়োগ করে টাকা কামাইয়ের ধান্ধা করে আসছিল। তারা ডাক্তার নিয়োগ, ডাক্তার বদলি থেকে শুরু করে ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া ওষুধ এবং ভুয়া যন্ত্রপাতির বিরাট এক সিন্ডিকেট খুলে ভৌতিক ও দানবীয় আত্মাগুলোকে পর্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলতে নিত্যনতুন দুর্নীতির রেকর্ড তৈরি করে চলছিল।
এসব ফেরাউনের কাছে মা-বোন-মেয়ে-শিশু কিংবা বৃদ্ধ, নারী কিংবা পুরুষ অথবা জীবিত কিংবা মৃতদেহ কোনোটাই প্রাধান্য পায় না। তাদের কাছে একমাত্র আরাধ্য বিষয় হলো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। এ কাজ করার জন্য তারা ইঁদুরের গুকে ক্যান্সারের বড়ি-শুয়োরের মূত্রকে চিকুনগুনিয়ার স্যালাইন অথবা কুকুর-বিড়ালের বমনকে চক্ষু রোগীদের মলম বানাতে দ্বিধা করে না। তারা মৃত ব্যক্তির লাশ দিনের পর দিন আইসিইউতে আটকে রেখে দানবের অট্টহাসি দেয়- আবার সন্তানসম্ভবা মায়ের প্রসব বেদনার আর্তচিৎকার নিয়ে রঙ-তামাশা করতে টাকা-পয়সার হিসাব মেলানোর জন্য পেট কাটার কাঁচি-ছুরি-রামদাতে ধার দেয়া আরম্ভ করে।
স্বাস্থ্য খাতের ফেরাউনরা অসহায় মহিলা রোগীকে কখনো চেতন অবস্থায় ধর্ষণ করে আবার মাঝে মধ্যে অচেতন করে পাশবিক নির্যাতন চালায়। তারা মাঝে মধ্যে নিজেদের মহিলা কর্মীদের বাগে পেলে রুম বন্ধ করে ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি ও এনাটমির সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। ওই সেক্টরের মহিলা ফেরাউনরাও কম যায় না- তারাও সুযোগ পেলে কুকর্মের পিরামিড নির্মাণে নিজেদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে থাকে। ওষুধপথ্য, যন্ত্রপাতি, খাবারদাবার থেকে শুরু করে রোগীদের মল-মূত্র-রক্ত-পুঁজ-হাডিগুড্ডি এবং নাড়িভুঁড়ি নিয়ে দুর্নীতির মহোৎসব করা এসব ফেরাউনকে দেখলে প্রকৃতির বোবা জানোয়ারগুলো পর্যন্ত ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে।
দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে মানুষের নিরন্তর অভিযোগ বহু পুরনো। ১৭ কোটি জনগণের দেশে গরিব মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতাল এবং মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল। উচ্চবিত্ত ও ক্ষমতাশালীরা সাধারণত রঙ দেখানোর প্রয়োজন না পড়লে সাধারণত স্থানীয় হাসপাতালে যান না। তারা আলাদা বিমান ভাড়া করে হলেও ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর-লন্ডন-আমেরিকা চলে যান। কাজেই ধনী ও ক্ষমতাবানেরা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হালহকিকত নিয়ে মাঝে মধ্যে কিছু লোক দেখানো হাপিত্যেশ, কিছু অভিনয়- কিছু হিপোক্রেসি দেখিয়ে এই খাতের ওপর ভর করা দুর্নীতির মহাচক্র এবং রাঘব বোয়ালদের জন্য পোয়াবারোমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেন।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল- ওষুধপত্র, ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন কিছু ডাক্তারদের অমানবিক আচরণ, ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোর রমরমা বাণিজ্য এবং ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য নিয়ে মাঝে মধ্যে এমন সব খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হয় অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, যা দেখলে সেসব প্রাগৈতিহাসিক জাতি-ধর্ম-গোষ্ঠীর কথা মনে পড়ে যায়; যারা কোনো অসুস্থ রোগী, মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা-শিশু বা যুবক-যুবতীর অন্তিমক্ষণের জন্য কাজকর্ম ফেলে বসে থাকত এই আশায় যে, তারা মরে যাওয়া মাত্র যেন তাদের মৃতদেহ রান্না করে গরম গরম ভূরিভোজ করা যায়। মহামতি হিরোডোটাস তার অমর গ্রন্থ হিস্টিরিয়াতে এসব কাহিনী যখন লিখেছিলেন তখন নিশ্চয়ই সুবে বাংলার একবিংশ শতাব্দীর হাসপাতাল ব্যবস্থার কথা কল্পনাও করতে পারেননি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উল্লিখিত অনিয়ম ও অমানবিক ঘটনা যেমন সত্য, তেমনি এসব ঘটনার আড়ালে কিছু ব্যক্তি কিংবা কিছু প্রতিষ্ঠান এমন সব ব্যতিক্রমী মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, যা সমসাময়িক দুনিয়ায় একেবারেই বিরল ঘটনা। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় প্রায় চার দশক ধরে ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসাসেবায় যে মানবিকতা এবং উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি দেখেছি, তা যদি আপনাদের বলি তবে আপনারা অবাক না হয়ে পারবেন না। ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণীতে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ক্লাসে অধ্যয়নকালীন ঢাকা মেডিক্যালে বহুবার নিজের ও আত্মীয়পরিজনের চিকিৎসাসেবার জন্য গিয়েছি। পরবর্তীকালে কর্মজীবনে আমার সুযোগ হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যালকে আরো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার। দৈনিক দেশবাংলা নামক একটি সান্ধ্যকালীন পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে সেই আশির দশকের শুরুতে আমি প্রতিদিন ভোর ৪টা-সাড়ে ৪টার সময় রমনা থানা, মতিঝিল থানা এবং ঢাকা মেডিক্যালে যেতাম হতাহতের শিকার লোকজনের খোঁজখবর জানার জন্য। যা ছিল আমার নিত্যকার অ্যাসাইনমেন্ট।
ঢাকা মেডিক্যাল সম্পর্কে আমার প্রথম সংবেদনশীল অনুভূতি সৃষ্টি হয় যেবার আমার মরহুম আব্বা ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। দু-দু’টি সরকারি হাসপাতাল থেকে আব্বাকে যখন চিকিৎসা না দিয়ে বা ভর্তি না করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হলো, তখন আমি বুদ্ধি করে মৃতপ্রায় জনককে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলাম ভোররাতের দিকে। জরুরি বিভাগের ডাক্তার-নার্সদের তৎপরতায় আব্বার বেঁচে থাকার আশা স্পষ্ট হলো এবং পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে তিনি সুস্থতার দিকে এগোতে থাকলেন। প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল আমার বড় ছেলেটির ক্ষেত্রে ২০১২ সালের দিকে। আমি যদি সেদিন ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের জরুরি সেবা না পেতাম, তবে ছেলেটি আমার নির্ঘাত মারা যেত। আমি ও আমার স্ত্রীর গুরুতর দু’টি অপারেশন আমরা গরিবের হাসপাতাল বলে পরিচিত ঢাকা মেডিক্যালে করিয়েছি। ফলে এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমার ধারণা-আগ্রহ এবং শ্রদ্ধাবোধ অনেকের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি।
রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার দরুন আমার কাছে হররোজ অনেক গরিব মানুষ আসেন, যাদের বেশির ভাগই আসেন চিকিৎসা সহায়তার জন্য। আমি তাদের চোখবুঝে ঢাকা মেডিক্যালের বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ অথবা ভর্তির দরকার হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেই। রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে মাঝে মধ্যে ডাক্তার অথবা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ফোন দিই ভর্তি অথবা সিটের জন্য এবং আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় আমি কোনো দিন বিরূপ অবস্থার মধ্যে পড়িনি। তবে অপারেশনের রোগীর জন্য সিরিয়াল পেতে অনেক সময় অনেক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, যার কারণে অনেক রোগী ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। এ বিষয়ে তদবির করার জন্য আমি অনেকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান শল্যচিকিৎসক অথবা হাসপাতাল পরিচালকদের কাছে চলে যাই এবং যথাবিহিত সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে থাকি।
আমি যখন সংসদ সদস্য ছিলাম, তখনই আমার বড় ছেলেটি একটি দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। সে যখন ঢাকা মেডিক্যালে প্রায় মাস তিনেক ভর্তি ছিল তখন আমি ও আমার পরিবারের আবাসস্থলে পরিণত হয় ঢাকা মেডিক্যাল। ওই সময় ডাক্তার-নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারী-সিকিউরিটি গার্ড-ট্রলিম্যান থেকে শুরু করে হাসপাতালের দালাল-ফড়িয়া-কন্ট্রাক্টর প্রমুখ অনেকের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই। মানুষের অসীম চাহিদা, সীমিত জোগান-লোকবল এবং অবকাঠামো নিয়ে হাসপাতালটি যেভাবে চলছে; তাতে আমার বারবার মনে হতো- ইস! আমার যদি সামর্থ্য থাকত, তবে আমি হাসপাতালটির সব সমস্যা সমাধান করে দিতাম। হাসপাতালটিতে বর্তমানে গড়ে চার হাজার রোগী ভর্তি থাকে- অথচ এটির শয্যা সংখ্যা দুই হাজারেরও কম।
অন্য দিকে, হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য এটির অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা আরো করুণ। মাত্র এক হাজার বেডের জন্য অনুমোদিত জনবল দিয়ে চার হাজার রোগীর হাসপাতাল কিভাবে চলছে অথবা দুই হাজার বেডের স্থলে কী করে চার হাজার রোগী এবং সেসব রোগীর সাথে থাকা লোকজন ধর্তব্যের মধ্যে আনলে কমপক্ষে আরো হাজার দশেক লোক কিভাবে এতটুকু জায়গায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং সুস্থ হচ্ছে তা ভাবলে ভিরমি খাবেন না এমন কোনো জ্ঞানী-বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া যাবে না।
হাসপাতালটির বর্তমান পরিচালকের নাম ব্রিগেডিয়ার নাসির, যার প্রশংসায় পুরো হাসপাতাল পঞ্চমুখ। পত্রপত্রিকায় দেখেছিলাম, ব্রিগেডিয়ার নাসিরের মতো আরো একজন ব্রিগেডিয়ার দায়িত্ব পালন করছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে পুরো হাসপাতালের সার্বিক চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। আমি ময়মনসিংহ মেডিক্যালে যাইনি- তবে ঢাকা মেডিক্যালে যেহেতু যাই, সেহেতু বুঝতে পারি, প্রশাসক যদি দক্ষ হন তবে সীমিত সম্পদ, সীমিত জনবল কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যে সেবা প্রদানে সমস্যা হয় না; তা ব্রিগেডিয়ার নাসির ছাড়াও ডা: সামন্ত লাল সেন দেখিয়ে দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যালের অন্তর্গত বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে, যা বর্তমানে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের জরুরি সেবা- অন্যান্য বিভাগের সেবা-পরিষেবা এবং দেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবার দিকে লক্ষ রেখে সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ হাজার বেডের হাসপাতালে পরিণত করা হবে। ফলে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। হাসপাতালের বর্তমান প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান বাড়ানোর জন্য যুগান্তকারী কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো জরুরি বিভাগের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার। আমি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জানতাম না এবং এ সম্পর্কে ধারণাও ছিল না। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম, হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নাসির সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এটি করেছেন, যা বাংলাদেশের অন্য কোনো হাসপাতালে তত বৃহত্তর পরিসরে নেই।
কোনো রোগী যখন গুরুতর আহত হয়ে জরুরি বিভাগে আসেন, তখন ওয়ানস্টপ সার্ভিস তার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ, একজন রোগীর হয়তো তৎক্ষণাৎ আইসিইউ দরকার পড়ে- কারো দরকার পড়ে অর্থোপেডিক সার্জারি- কারো বা প্রয়োজন মস্তিষ্কের সার্জারি অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সেবা। এসব দিক বিবেচনা করে ঢাকা মেডিক্যালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে আইসিইউসহ গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ সার্জন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বরত থাকেন দেশের ধনী-দরিদ্র-অসহায় মানবতাকে জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য