‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ এটাই ছিল সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির শেষ কথা। গত বছরের ২ অক্টোবর ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’–এর কলাম লেখক জামাল খাসোগি তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে খুন হন। শেষ মুহূর্তে জামাল খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছিল, সেটার একটি অডিও রেকর্ড তুরস্কের গোয়েন্দা বাহিনী প্রকাশ করেছে।
বিজনেস ইনসাইডার বলছে, সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের দৈনিক ‘সাবাহ’। দৈনিক ‘সাবাহ’ বলছে, খাসোগিকে হত্যা করে কীভাবে তাঁর দেহ কনস্যুলেটের বাইরে নেওয়া হবে, সেসব বিষয় উঠে এসেছে ওই অডিওতে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে খাসোগিকে হত্যা ও তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করা হয়।
‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ এটাই ছিল সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির শেষ কথা। গত বছরের ২ অক্টোবর ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’–এর কলাম লেখক জামাল খাসোগি তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে খুন হন। শেষ মুহূর্তে জামাল খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছিল, সেটার একটি অডিও রেকর্ড তুরস্কের গোয়েন্দা বাহিনী প্রকাশ করেছে।
বিজনেস ইনসাইডার বলছে, সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের দৈনিক ‘সাবাহ’। দৈনিক ‘সাবাহ’ বলছে, খাসোগিকে হত্যা করে কীভাবে তাঁর দেহ কনস্যুলেটের বাইরে নেওয়া হবে, সেসব বিষয় উঠে এসেছে ওই অডিওতে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে খাসোগিকে হত্যা ও তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করা হয়।
সৌদি নাগরিক খাসোগি যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতেন। ঘটনার দিন তিনি কিছু কাগজ সংগ্রহ করতে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন। সেখানে সৌদির ১৫ সদস্যের একটি দলের হাতে খুন হন।
দৈনিক ‘সাবাহ’ গোয়েন্দা অডিওর উদ্ধৃতি দিয়ে করা প্রতিবেদনে বলেছে, খাসোগি কনস্যুলেটে ঢোকামাত্রই পরিচিত কোনো ব্যক্তি তাঁকে অভ্যর্থনা জানান ও একটি কক্ষে নিয়ে যান। দৈনিকটি বলছে, খাসোগিকে অভ্যর্থনা জানানো ওই ব্যক্তির নাম মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব। মেহের আবদুল আজিজ একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা সদস্য ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষী।
মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব খাসোগিকে বলেন, ‘বসুন খাসোগি। আপনাকে সৌদিতে ফেরত নেওয়া হবে। ইন্টারপোল আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। ইন্টারপোল চায়, আপনি ফিরে যান। তাই আপনাকে নিতে আমরা এখানে এসেছি।’
প্রত্যুত্তরে খাসোগি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমার হবু স্ত্রী বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।’
এরপর মুতরিব খাসোগিকে একটি বার্তা লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। মুতরিব খাসোগিকে বলেন, ‘আপনার ছেলের কাছে এই কথাগুলো লিখুন,“যদি আমার (খাসোগির) সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারো, তাহলে চিন্তা কোরো না।”’
খাসোগি ওই বার্তা লিখতে অস্বীকৃতি জানালে মুতরিব তাঁকে বলেন, ‘আমি বলছি, এটা লিখুন জনাব খাসোগি। দ্রুত এটা লিখুন। আমাদের সাহায্য করুন, তাহলে আমরাও আপনাকে সাহায্য করতে পারব। কারণ শেষমেশ আমরা আপনাকে সৌদিতে ফিরিয়ে নেবই। আর যদি আমাদের সাহায্য না করেন, তাহলে কী ঘটবে তা বুঝতেই পারছেন।’
এরপর খাসোগিকে টেনে নেওয়ার শব্দ শোনা যায়। চেতনা হারানোর আগে খাসোগির শেষ কথা শোনা যায়, ‘আপনার কী করছেন। আমার হাঁপানির সমস্যা আছে। আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না।’
এই সময়ের মধ্যেই খাসোগির মাথায় একটি প্লাস্টিক ব্যাগ পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই অডিওতে বেশ কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধ্বস্তির শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় চারপাশ থেকে হত্যাকারী দলকে খাসোগিকে মাঝে মাঝে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে শোনা যায়।
খাসোগি ওই কনস্যুলেটে ঢোকার আগেই মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব কাউকে প্রশ্ন করছেন, ‘পুরো দেহ কি কোনো ব্যাগের মধ্যে ঢোকানো যাবে?’ এর প্রত্যুত্তরে সালাহ মোহাম্মদ আবদাহ তুবাইগি নামে খ্যাতিমান সৌদি ফরেনসিক চিকিৎসক বলেন, ‘না, খুব ভারী হবে। (খাসোগি) অনেক লম্বা।’ এ সময় আবদাহ তুবাইগিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘যদিও আমি মৃতদেহের ওপর ছুরি চালাই। তবে আমার কাজে আমি খুব দক্ষ।’ তিনি যোগ করেন, ‘কাজের সময় সাধারণত এক পেয়ালা কফি পান করি। একটা সিগারেটে টান দিই। এর মধ্যেই সব কাজ শেষ করে ফেলব। কাজ শেষে আপনারা বিচ্ছিন্ন অংশগুলো প্লাস্টিকে মুড়ে স্যুটকেসে ঢুকিয়ে বাইরে নিয়ে যাবেন।’
গত বছরের ২ অক্টোবর খুন হন জামাল খাসোগি। তুরস্কে থাকা সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকে তিনি আর বের হননি। প্রথম দিকে খাসোগিকে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছিল সৌদি আবর। তবে শেষে তারা স্বীকার করে, কনস্যুলেটের মধ্যে কিছু লোকের সঙ্গে খাসোগির হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় নিহত হন তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বলেছে, খাসোগি হত্যার ঘটনা সৌদি যুবরাজ সালমানের আদেশেই ঘটেছে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ সব সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া, খাসোগির দেহ নিয়ে সৌদি কী করেছে, তা এখনো জানায়নি দেশটি।
খাসোগির হত্যায় সৌদি কর্তৃপক্ষ ১১ জন ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নত করেছে যদিও তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এই ১১ জনের মধ্যে পাঁচজনকে ‘অপরাধ সংগঠন ও আদেশ’ দেওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে পারে।