লিখেছেন সুদীপ্ত সালাম
প্রেম মহিমান্বিত-শাশ্বত-অমর। মানব-মানবীর মধ্যকার ঐশী প্রেমের জয়জয়কার অনাদিকাল হতে। দেশ ও জাতির লোককথা, পুরাণ ও সাহিত্য এই প্রেমকে যক্ষের ধনের মতো বুকে আগলে আছে। এক এক দেশ ও জাতির প্রেমের বাস্তব, অতিবাস্তব ও কল্পকাহিনীগুলোর স্রোত ও ধরণ হয়তো এক এক রকম, পাত্র-পাত্রীর চরিত্রে আছে বৈচিত্র্য। কিন্তু কাহিনীগুলোর মর্মকথা এক : সবার ওপরে মানব-মানবীর মানবিক সম্পর্ক, প্রেমই সত্য, সুন্দর। এই চিরন্তন বাণীই প্রেমকাহিনীগুলো যুগ যুগ ধরে প্রচার করছে। প্রেমকাহিনীগুলো তৈরি হয়েছে কখনও সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে, কখনও সত্য ও কল্পনার মিশেলে, কখনওবা শুধুই কল্পনাকে উপজীব্য করে। যে গল্পগুলো শুধুই কল্পনাকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে সেগুলোকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। বরং গল্পগুলোতে বাস্তবতা বা যুক্তি খোঁজা মানে গল্পগুলোর রস আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হওয়া। এমন অনেক গল্পই স্থান পেয়েছে আমাদের কাব্য, মহাকাব্যে। শুধু তাই নয় এমন অজস্র গল্প আজ বিশ্বপুরাণসাহিত্যের অমূল্য রত্ন । বিশ্বপুরাণসাহিত্যের সবচেয়ে ঐশ্বর্যবান ভাণ্ডার গ্রিকপুরাণ ও হিন্দুপুরাণ। এই দুই ভাণ্ডারে পাওয়া যায় অসংখ্য প্রেমকাহিনী। কল্পনা ও মনের মাধুরীমণ্ডিত এই গল্পগুলো হাজারো বছর ধরে আমাদের সাহিত্যে রাজত্ব করছে। দুএকটি গল্প খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
হিরো-লিয়েন্ডার
৪র্থ শতাব্দীর কবি মিউজিয়াউস এর একটি কবিতা থেকে হিরো ও লিয়েন্ডার করুণরসের প্রেমগাঁথা উঠে এসেছে। হিরো একজন ধর্মপরায়ণ যুবতী, হিরো পরিশ্রমী যুবক। হেলেন্সপন্ট নদীর এপাশে একজন আর ওইপাশে আরেকজনের বসবাস। কিন্তু যেভাবেই হোক দুজন দুজনের প্রেমে গভীর ভাবে আসক্ত। রাতের অন্ধকারে তারা লুকিয়ে দেখা করতো। রাতে প্রেমিকা একটি মশাল নিয়ে নদীর ধারে অপেক্ষা করেেতা, প্রেমিক সেই মশাল অনুসরণ করে সাঁতরে প্রেমিকার কাছে চলে আসতো। কিন্তু এক ঝড়ের রাতে হিরোর মশাল নিভে যায়, ফলে আলো দেখতে না পেয়ে অথৈ নদীতে প্রেমিক লিয়েন্ডার পথ হারিয়ে ডুবে মারা যায়। এই খবর যখন হিরো জানতে পারে তখন সেও সেই নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করে।
রুরু-প্রমদ্বরা
প্রমদ্বরার জন্মের পর তার মা অপ্সরা মেনকা তাকে পরিত্যাগ করেন। তখন মহর্ষি স্থূলকেশ প্রমদ্বরাকে লালন-পালন করে বড় করেন। অপ্সরা ঘৃতাচীপুত্র রুরু যুবতী প্রমদ্বরাকে দেখে প্রেমে পড়ে। প্রমদ্বরাও রুরুর প্রেমে ব্যাকুল হয়। দুজনের পরিবার তাদের বিয়ের প্রয়োজন অনুভব করে। কিন্তু বিয়ের আগে প্রমদ্বরা সখিদের সাথে খেলার সময় একটি বিষাক্ত সাপকে পদপিষ্ট করে। সাপের দংশনে প্রমদ্বরার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। এ সংবাদে প্রেমিক রুরু শোকে পাথর। রুরু তখন দেবতাদের উদ্দেশ্যে বিলাপ করে বলে, যদি সে ন্যায় ও সত্যবান হয়ে থাকে তাহলে তার প্রেমিকা জীবিত হোক। তখন দেবতারা জানান, প্রমদ্বরা বাঁচতে পারে যদি তাকে কেউ তার অর্ধেক আয়ু দান করে। তখন রুরু তার প্রিয়তমকে জীবিত করতে নিজের অর্ধেক জীবন দান করে। প্রমদ্বরা জীবিত হলে ধুমধামে তাদের বিয়ে হয়।
অর্ফিয়াস-ইউরিডাইস
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরি, মহা-সিন্ধু উতলা ঘুস্ঘুস, কবি নজরুলের বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় উল্লেখিত এই অর্ফিয়াসই গ্রিকপুরাণের বনদেবী ইউরিডাইসের প্রেমিক ও স্বামী। অর্ফিয়াসের সঙ্গীত প্রতিভায় মানুষ, দেব-দেবী তো বটেই, মুগ্ধ হতো গাছ-পালা ওপাহাড়-পর্বতও। অর্ফিয়াস ইউরিডাইসকে খুব ভালবাসতো। সাপের কামড়ে এক সময় ইউরিডাইসের মৃত্যু হয়। অর্ফিয়াস তার স্ত্রীর মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারে না। স্ত্রীকে ফিরে পেতে সে যমপুরে গিয়ে হাজির হয় এবং বীণা বাজিয়ে দেবতাদের মন জয় করে। দেবতারা ইউরিডাইসকে এক শর্তে জীবিত করতে রাজি হয়। শর্তটি হলো, যমপুর থেকে অর্ফিয়াস মর্তে ফিরবে, তাকে অনুসরণ করে ইউরিডাইসও মর্তে ফিরবে, কিন্তু অর্ফিয়াস পেছন ফিরে স্ত্রীকে দেখতে পারবে না, যদি দেখে তাহলে সে স্ত্রীকে চিরতরে হারাবে। অর্ফিয়াস শর্ত মেনে নেয়, কিন্তু শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়। ঔৎসুক্য বশে অর্ফিয়াস পেছনে না তাকিয়ে থাকতে পারে না, ফলে স্ত্রীকে পেয়েও ছোট্ট ভুলের কারণে আবারও হারাতে হয়। পরে শোকাহত অর্ফিয়াসের উন্মাদ অবস্থায় মৃত্যু হয়।
সতী-মহাদেব
রাজা দক্ষ মহামায়াকে কন্যারূপে পেতে কঠোর তপস্যা শুরু করেন। মহামায়া সন্তুষ্ট হয়ে দক্ষের ইচ্ছাপূরণে সম্মত হলেন। যথাসময়ে মহামায়া দক্ষের কন্যা হয়ে জন্ম নেন। নাম হয় সতী। যুবতী কন্যা সতীকে দক্ষ মহাদেবের সাথে বিয়ে দেয়। সতী-মহাদেব একজন আরেকজনের পরিপূরক। সুখেই তাদের দিন কাটছিল। দক্ষের ধারণা, শ্বশুরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে মহাদেবের ত্রুটি রয়েছে। তাই সে জামাতার ওপর অসন্তুষ্ট হয়। ফলে, দক্ষ কন্যা ও জামাতাকে নিমন্ত্রণ না করেই এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করে। স্বামীর অপমানে সতী ভীষণ আঘাত পায়। সতী যজ্ঞস্থলে গিয়ে হাজির হয়, কন্যার উপস্থিতিতেই দক্ষ মহাদেবনিন্দা শুরু করে। মহাদেবনিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী লজ্জা-অপমানে প্রাণত্যাগ করে। খবর পেয়ে মহাদেব দক্ষপুরীতে এসে দক্ষের মাথা কেটে ফেলেন। কিন্তু ব্রহ্মার অনুরোধে একটি ছাগলের মাথা সংযোজন করে দক্ষকে মহাদেব বাঁচিয়ে তোলেন। সতীশোকে পাগলপারা মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে তা-বনৃত্য শুরু করেন। নৃত্যের কারণে পুরো বিশ্ব ধ্বংস হবার উপক্রম, সৃষ্টিকে বাঁচাতে তখন বিষ্ণু তার চক্র দ্বারা সতীর দেহকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেন। সতীদেহের একান্নটিখ- যেখানে যেখানে পড়ে সেখানে একটি করে মহাপীঠ তৈরি হয়। মহাদেব শান্ত হন। সতী পরবর্তীতে পার্বতী হয়ে জন্ম নিয়ে হিমালয়ে মহাদেবের সাথে সুখে জীবন কাটান।
হাইপারনিস্ট্রা-লিনসিয়াস
৫০ কন্যার পিতা আর্গোসের রাজা ড্যানাউস। এই রাজার ভাই আবার ৫০ পুত্রের জনক। তার ইচ্ছে ড্যানাউসের কন্যাদের সাথে তার পুত্রদের বিয়ে হোক। ড্যানাউস ভাইয়ের ইচ্ছের কোনও মূল্য না দিয়ে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ক্ষোভে ৫০ রাজপুত্র আর্গোস দখল করে ফেলে। ড্যানাউস বাধ্য হয় ভাইপোদের সাথে কন্যাদের বিয়ে দিতে। কিন্তু তিনি কন্যাদের শিখিয়ে দেন বাসর রাতে যেন তারা তাদের স্বামীদের হত্যা করে। হাইপারনিস্ট্রা ছাড়া সবাই বাবার কথা মতো কাজ সারে। কেননা হাইপারনিস্ট্রা মনে প্রাণে লিনসিয়াসকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছিল। লিনসিয়াস সৎ, নিষ্ঠাবান ও বিশ্বস্ত।এমনকি লিনসিয়াস হাইপারনিস্ট্রার ওপর কোনও জবরদস্তিও করেনি। এমন স্বামীকে কীভাবে হত্যা করা যায়? অবাধ্য মেয়ের কীর্তির কথা শুনে রাজা দুজনকেই হত্যা করতে ছুটে আসে, কিন্তু ততক্ষণে হাইপারনিস্ট্রা স্বামীর হাত ধরে পালিয়ে গেছে।
সাবিত্রী-সত্যবান
মন্দ্ররাজ অশ্বপতি কঠোর তপস্যার মাধ্যমে একটি কন্যা অর্জন করে। তার নামই সাবিত্রী। অশ্বপতি যৌবনপ্রাপ্ত হলে পিতা তাকে তার মনের মতো স্বামীর সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে বলে। সাবিত্রী রাজ্যহারা দ্যুমৎসেনপুত্র সত্যবানকে মনে মনে স্বামী হিসাবে গ্রহন করে। সত্যবান গুণবান, রূপবান ও সত্যবাদী কিন্তু স্বল্পায়ু। নারদ জানান, বনবাসী সত্যবান এক বৎসর পরে মারা যাবে। সাবিত্রী তবুও সত্যবানকে বিয়ে করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সত্যবতীর দৃঢ়তার কাছে পিতা অশ্বপতিকে হার মানতে হয়। সাবিত্রী ও সত্যবানের বিয়ে হয়। বনবাসে সাবিত্রীদের জীবন ভালো ভাবেই কাটছিল। সত্যবানের মৃত্যুদিন সাবিত্রী অসুস্থ স্বামীকে কোলে নিয়ে বসে রইল। যমদূত এসে সত্যবানকে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে। যমদূতের নিষেধ সত্ত্বেও ক্রন্দনরত সাবিত্রী যমদূতের পিছু নেয়। কোনও ভাবেই বাকপটু সাবিত্রীকে যমদূত বুঝাতে পারছিলেন না। সাবিত্রীর কথায় সন্তুষ্ট হয়ে যমদূত সাবিত্রীকে স্বামীর প্রাণ ছাড়া একটি বর চাইতে বললেন। বর পূরণ হলেও সাবিত্রী যমের পিছু ছাড়লো না। সাবিত্রীকে থামাতে যমদূত তার মোট ৪টি বর পূরণ করলো। যমদূত তার ওই ৪র্থ বরে এসে ফেঁসে যান। ৪র্থ বর হিসাবে সাবিত্রী সত্যবানের ঔরসে শতপুত্র কামনা করে। সেটাতেও যমদূত ‘তথাস্তু’ বলে দেন। তখন সাবিত্রী বিনয়ের সাথে স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে বলে, নতুবা সাবিত্রী সত্যবানের ঔরসে পুত্রের জননী হবেন কী উপায়ে? তখন যমদূত নিজের কথা রাখতে সত্যবানের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন।
পাইরামিউস-থিস্বি
পাইরামিউস ও থিস্বির ব্যাবিলনীয় প্রেমকাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শেক্সপিয়র তার অমর প্রেমগাঁথা রোমিও-জুলিয়েট লিখে থাকতে পারেন বলে অনেকে মনে করেন। পাইরামিউস ও থিস্বির প্রেম তাদের দুই পরিবার মেনে নিতে পারেনি। প্রেমিক-প্রেমিকা রাতের অন্ধকারে একটি তুঁত গাছের নিচে লুকিয়ে দেখা করতো। একরাতে, থিস্বি তুঁত গাছতলে এসে দেখে একটি সিংহী ঘোরাঘুরি করছে। সে ভয়ে সেখান থেকে সরে আসে। কিন্তু তার শালটি সেখানে পড়ে যায়। সিংহীটির গায়ে শিকারের রক্ত লেগে ছিল, সেই রক্ত কোনও ভাবে ওখানে পড়ে থাকা থিস্বির শালে লাগে। পাইরামিউস একটু পর সেখানে এসে দেখে তার প্রেমিকার রক্তভরা শাল তুঁতগাছের নিচে পড়ে আছে। সে ভাবে থিস্বিকে কোনও হিংস্র জন্তু তুলে নিয়ে গেছে। তখন শোকাহত পাইরামিউস তুঁত গাছের নিচেই আত্মহত্যা করে। প্রেমিকের লাশ দেখে থিস্বিও আত্মহত্যা করে।
দেবযানী-কচ
দেবযানী শুক্রাচার্যের অত্যন্ত প্রিয় কন্যা। শুক্রাচার্য আবার দৈত্যদের গুরু। দেবতারা তাদের মৃত সৈন্যদের জীবিত করতে জানতো না। শুক্রাচার্যের বদৌলতে দৈত্যরা সে কৌশল জানতো। দেবতারা সে কৌশল শিখতে দেবতাগুরু বৃহস্পতিপুত্র কচকে দৈত্যরূপে শুক্রাচার্যের কাছে পাঠান। শুক্রাচার্যের মন জয় করতে কচ দেবযানীকে খুশি করতে লেগে গেলো। এভাবে খেলার ছলেই দেবযানী ও কচের মধ্যকার প্রেম গভীর থেকে গভীরতর হয়ে যায়। মৃতসঞ্জীবনীবিদ্যা শেখার আগেই দৈত্যরা কচের আসল পরিচয় জানতে পেরে তাকে হত্যা করে। কচের আসল পরিচয় জেনেও দেবযানী কচকে ভুলে যেতে পারে না। শোকাতুর দেবযানীর অনুরোধে শুক্রাচার্য কচকে জীবিত করেন। কচকে দৈত্যরা আবার হত্যা করে, এভাবে মোট৩ বার কচকে দৈত্যরা হত্যা করে, কন্যার পীড়াপীড়িতে শুক্রাচার্য প্রতিবারই কচকে জীবিত করে দেন এবং মৃতসঞ্জীবনীবিদ্যা শিখেয়ে দেন। বিদ্যা শিখে কচ বিদায় নেয়। দেবযানী তাকে বিয়ে করতে বললে কচ প্রত্যাখ্যান করে, কেননা গুরুকন্যাকে বিয়ে করা তৎকালে ছিল নিন্দাজনক।
পুরূরবা-উর্বশী
অভিশাপের ফলে অপ্সরা উর্বশী মানুষরূপে জন্ম নেন। যুবতী উর্বশীকে দেখে বুধপুত্র পুরূরবা প্রেমাসাক্ত হয়। দুজন দুজনের প্রেমে মগ্ন। উর্বশীকে ছাড়া পুরূরবার চলে না, উর্বশী কয়েকটি শর্তে পুরূরবাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। এর মধ্যে একটি শর্ত ছিল, উর্বশী যেন কোনও দিন স্বামী পুরূরবাকে বিবস্ত্র না দেখেন। যেদিন দেখবেন সেদিনই তিনি পুরূরবাকে ত্যাগ করবেন। পুরূরবা উর্বশীর সকল শর্ত মেনে নিয়ে বিয়ে করে। সুখেই তাদের দিন কাটছিল। এদিকে স্বর্গের দেবতারা উর্বশীকে ফিরিয়ে আনতে উঠেপড়ে লাগলেন। এক রাতে বিশ্বাবসু উর্বশীর প্রিয় দুটি মেষ চুরি করেন। পুরূরবা মেষদুটি উদ্ধার করতে বিবস্ত্র অবস্থায়ই বিছানা থেকে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চমকালে রাতের অন্ধকার ক্ষণিকের জন্য দূর হয়, সেই ক্ষণকালেই উর্বশী পুরূরবাকে বিবস্ত্র দেখে ফেলেন। শর্তমতে তখনই উর্বশী পুরূরবাকে ত্যাগ করে অদৃশ্য হয়ে যান। শোকাহত পুরূরবা পাগলের মতো উর্বশীর সন্ধানে দেশবিদেশে ঘুরে-বেড়ায়। অনেকদিন পর অবশ্য সে অপ্সরারূপে উর্বশীর দেখা পায়। চরিত্রবান পুরূরবা বর হিসাবে উর্বশীর সাথে পুরো জীবন কাটাতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে দেবতারা তাকে উর্বশীর সাথে স্বর্গলোকে স্থান দেন।
অ্যাকোন্টিয়াস-সাইডিপি
গ্রিকপুরাণ মতে প্রাচীনকালে একজন যুবক বা যুবতী প্রকাশ্যে কাউকে বিয়ে করার ঘোষাণা দিলেই তা হয়ে যেত অনেকটা বিধির বিধান। অর্থাৎ ঘোষনাকারীর জন্য ঘোষিত নামের মানুষটিকে বিয়ে করাটা প্রায় বাধ্যতামূলক হয়ে যেতো। এটাই ছিল নিয়ম। কিওসের বাসিন্দা অ্যাকোন্টিয়াসের সাথে ডিলোসের একটি মেলায় এথন্সের সাইডিপির সাথে প্রথম দেখা। সেই থেকে অ্যাকোন্টিয়াস সাইডিপির প্রেমে ব্যাকুল। কিন্তু কোনও ভাবেই সাইডিপির মন জয় করা যাচ্ছিল না। একদিন সে এক ফন্দি আঁটলো। সে একটি কয়েন সাইডিপির দিকে ছুঁড়ে মারে। কয়েনটি সাইডিপি মাটি থেকে উঠিয়ে দেখে তাতে কিছু লেখা, সে সশব্দে লেখাটি পড়ে, ‘দেবীর শপথ করে বলছি আমি অ্যাকোন্টিয়াসকে বিয়ে করবো।’ প্রতিশ্র“তি রক্ষা করতে সাইডিপিকে প্রেমিক অ্যাকোন্টিয়াসকে বিয়ে করতে হয়। এভাবেই তাদের সুখীজীবনের সূচনা হয়।