জাতীয় মুক্তি ও উত্তরণের পথ

মাহবুবুর রব চৌধুরী, টরেন্টো

দেশের ১৮ কোটি মানুষ একদিকে দারুন আশাবাদী অপর দিকে হতাশার মাঝে। এই বৈপরীত্য নিয়েই আমাদের সমাজ এবং আমাদের জীবন। আশান্বিত ও হতাশ হবার শত সহস্র কারন চারিদিকে হাতের কাছেই আছে। এ বিষয়টি সমাজ ও রাষ্ট্রে একটি নেগেটিভ প্রভাব ফেলছে। উন্নত সভ্য সমাজ ও তার সিস্টেমের প্রতি আমরা বড় আকারে পজেটিভ।
এটি একটি ভালো দিক। গণতন্ত্র সামাজিক সাম্য, বাজার অর্থনীতি, কল্যানকামী- রাষ্ট্রের ধারণা সাধারণ ভাবেই আমরা মেনে নিয়েছি। এ বিষয়ে বিরোধী কোন পক্ষ নাই।
বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই বাংলা ভাষী এবং একই ভাবে উঠে আসা, একটি হোমোজেনিয়াস জন গোষ্ঠী। সামাজিক, অর্থনৈতিক আশা আকাক্ষাও প্রায় একই। এ বিষয়ণ্ডলি অবশ্যই ভালোর দিকে পরিবর্তন আনতে উপযোগী ও সহায়ক।
এই প্রেক্ষাপটেই আমরা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে অনেক অসম্ভবকেও সম্ভব করে ফেলেছি। বাকি পথটুকু পার হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। প্রয়োজন শুধু পজেটিভ চিন্তা ও সঠিক নেতৃত্ব। ধর্মীয়ভাবে আমাদের জনসংখ্যা দেশে ৯২% মুসলমান, ৭% হিন্দু এবং ১% বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য। এই বিন্যাস ও সমাজে এক ধরনের পজেটিভ প্রভাব রেখেছে। উন্নয়ন মুখী পরিবর্তনের ধারায় ধর্মীয় প্রভাবকেও পজেটিভ ভাবে কাজে লাগান সম্ভব। আমাদের দেশের মানুষ মূলত অসাম্প্রদায়িক। শিক্ষা ও গবেষণার ব্যাপক চর্চায় এ অবস্থানকে দ্রুত বিশ্ব মানে উন্নত করা সম্ভব।
সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়েই আমাদের দেশ।
স্বাধীনতার পর আজ ৫০ বছরের ও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এই সময় কালে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও নিজস্ব সম্পদ ও শক্তিতে আমরা যেমন বেশ কিছু দূর এগিয়েছি। তবে একই সঙ্গে এটিও সত্য যেখানে পৌঁছানোর কথা ছিল, সম্ভাবনা ছিল, সেখানে আমরা পৌঁছাতে পারিনি। কারণ বলতে মূলত আইনের শাসনের অভাব। সুশাসন, স্বচ্ছ ও জবাবদিহি সিস্টেমের অভাব মিসম্যানেজমেন্ট বা পুওর ম্যানেজমেন্ট এর কথা বলতে হয়। এ কারনেই আমরা আমাদের শক্তি, সম্পদ ও সম্ভাবনাকে পরিপূর্ন ভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। এই সমস্যার সমাধান অবশ্যই আছে এবং তা অর্জনও খুব একটা কঠিন নয়। সঠিক পরিকল্পনার অভাব, সদিচ্ছার অভাব, অযোগ্যতা, অলসতা। লোভ, লালসাই প্রকৃত সমাধানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় উন্নয়নে সর্ব প্রথম প্রয়োজন দুর্নীতি মুক্ত সিস্টেম। দ্বিতীয়ত এই সিস্টেমকে কার্যকর করতে প্রয়োজন সৎ, নীতিবান, যোগ্য দক্ষ আদর্শ ও মূল্যবোধে উদজীবিত প্রশাসন। একই সঙ্গে সুষ্ঠ ভাবে দেশ পরিচালনায় এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখবার স্বার্থে আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনার তিনটি পৃথক স্থম্ভ বা কাঠামো কে তার পৃথক সত্বা ও স্বাধীনতা সম্পূর্ণ ভাবে বজায় রাখা।
এবং বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিশেষ ভাবে জরুরি, কোনভাবেই যেন সরকার প্রধান প্রকাশ্যে অথবা পর্দার অন্তরালে নিয়োগ ও বরখাস্তে পূর্ন নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারেন সে ব্যবস্থা সুরক্ষিত রাখা।
অনুন্নত গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের সরকার এই পদ্ধতির প্রয়োগে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন। পর্যায় ক্রমে তা স্বেচ্ছা চারিতায় রূপ নেয়। এটি যেন না হয় এবং না হতে পারে তার পরিপূর্ন ব্যবস্থা নেওয়া।
মূল এ দুটি বিষয় ছাড়া দেশে যোগ্য, দক্ষ, সৎ এবং দায়িত্বশীল নাগরিক পেতে প্রয়োজন একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে দেশে একটি ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালু করা জরুরি। সুন্দর, সুষ্ঠ, সফল, পরিবার, সমাজ ও জাতী গঠনে এটি জরুরি। উপযুক্ত অর্থ ভাতা সহ বাধ্যতামূলক মেন্ডেটরি গ্রেট ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্ট কোর্স এ সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
এক: তাই প্রয়োজন দায়িত্বশীল নাগরিক ও সফল পারিবারের সদস্য হিসাবে গড়ে তুলতে অর্থ ভাতা সহ বিয়ের পূর্বে অথবা ২৫ বছর বয়সের সকল ছেলে ও মেয়েকে ২ মাসের বাধ্যতামূলক ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্ট এবং সুনাগরিক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা। সুনাগরিক ও শক্তিশালী জাতীয় জন সম্পদ গঠনে এটি বৈপ্লবিক অবদান রাখবে।
দুই: এই শিক্ষা পূর্ণ মানবিক মূল্য বোধ এবং নীতি নৈতিকতার আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্ব মানের নাগরিক গড়ে তুলবে। এর জন্য জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্ধ রাখতে হবে। এই বিনিয়োগ জাতিকে সময়ে অবশ্যই শত ণ্ডন বড় আকারে ফেরৎ দেবে।
মাহবুবুর রব চৌধুরী, টরন্টো
লেখক পরিচিতি: ইতিহাস গবেষক, রাজনীতি বিশ্লেষক

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ