রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না খালেদা জিয়া

কারাগারে যাওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দলের নির্বাহী কমিটির সভায় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তারেক রহমানকে দলের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় সামনে রেখে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বলা হয়, রায়ে সাজা হলে দল পরিচালনা করবেন তারেক রহমান। তাই খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর থেকে তারেক রহমানই দল পরিচালনা করছেন। কিন্তু কারাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সরকার খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এখনো রাজনীতিতে এক অর্থে নিষ্ক্রিয়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে বাধা নেই বলা হলেও আদতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি নিয়ে ভারছেন না তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।

সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে খালেদা জিয়া ভাবছেন না। মাঝেমধ্যে প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ডেকে পাঠান। এই মুহূর্তে তার একটাই চিন্তাÑ কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। কারণ তিনি শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে কষ্ট সহ্য করছেন। কয়েক দিন আগে শরীরে ব্যথা ছিল। এখন নেই।’ তিনি বলেন, ‘দলের চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের বাইরে কাউকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের সদস্যদের ফিরোজা ভবনে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।’

এদিকে গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সঙ্গে ছিলেন। এর আগে বিএনপি মহাসচিবসহ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে বাসায় গেছেন খালেদা জিয়া। রাতে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম  বলেন, ‘সিরিয়াস কিছু নয়। রুটিন চেকআপের জন্য ম্যাডামকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে কিছু টেস্ট করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরেছেন ম্যাডাম। আজ মঙ্গলবার টেস্টের ফলাফল পাওয়া গেলে সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক স্বজন  বলেন, ‘কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসকরা চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ যাওয়া জরুরি। কিন্তু সরকার অনুমতি দিচ্ছে না।’

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার সক্রিয় হওয়া নিয়ে কিছু দিন ধরেই আলোচান হচ্ছে। আইনমন্ত্রী সম্প্রতি তার রাজনীতিতে বাধা নেই বলে মন্তব্য করার পর এ আলোচনার সূত্রপাত। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি করবেন কি করবেন না, তা নিয়ে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন দল পরিচালনা করছেন। তার নেতৃত্বে দল এখন অনেক শক্তিশালী। সময় হলে চেয়ারপারসন নিজে ও দল সিদ্ধান্ত নেবে তার রাজনীতির বিষয়ে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেলেও অসুস্থ খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না। এমনকি দলের কোনো পর্যায়ের নেতাদের সাক্ষাৎও দিচ্ছেন না। মাঝেমধ্যে প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারকে ডেকে পাঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস কারাভোগের পর গত ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল। এরপর ২০ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় গিয়েছিলেন। এক ঘণ্টা ফিরোজায় ছিলেন মির্জা ফখরুল। দলের মহাসচিবের অসুস্থতার কথা শুনে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।

বহু বছর ধরে খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। নানা শারীরিক জটিলতায় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। প্রায় দুই মাস তিনি সিসিইউতে ছিলেন। ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। এর মধ্যে করোনার টিকা নেওয়ার জন্য খালেদা জিয়া দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান। ১৯ জুলাই করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেন তিনি।

গত বছর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানান চিকিৎসকরা।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রে আছে, চেয়ারপারসন কোনো কারণে সাময়িকভাবে অনুপস্থিত থাকলে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। এটাই গঠনতন্ত্রের বিধান। গঠনতন্ত্রের ৭ ধারার ‘গ’-এর ২ উপধারায় রয়েছে, চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনে তারেকের জন্য সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি সৃষ্টি করা হয়।’

করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে তিনি তার গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন।

দেশ রূপান্তর

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ