তিন দাপুটে কর্মকর্তা এখন কনডেম সেলে নিশ্চুপ

তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম মাসুদ রানা তিনজনই ছিলেন র‌্যাব-১১-এর দাপুটে কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনজনকেই রাখা হয়েছে কারাগারের নির্জন কনডেম সেলে। তাঁদের ঘুমাতে হয় ফ্লোরে। কারাবিধি অনুযায়ী তাঁদের দেওয়া হয়েছে একটি থালা, একটি বাটি, তিনটি কম্বল ও একটি বালিশ। এই তিনজনই নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি। আদালত তাঁদের ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন। এর পর থেকেই তাঁরা কনডেম সেলের বাসিন্দা।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৩০ এপ্রিল ছয়জনের ও ১ মে অন্যজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে এই হত্যার সঙ্গে র‌্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও কমান্ডার এম মাসুদ রানার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে। ওই ঘটনার পর তাঁদের তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী থেকে তাঁদের চাকরি চলে যায়। বিচারে তাঁদের ফাঁসির দণ্ড হয়।

এক কারা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করেছেন। আপিলের রায়ে আদালত যদি তাঁদের ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তি দিয়ে দেন, তাহলে তাঁদেরকে কনডেম সেলে রাখা হবে না। আর যদি রায় বহাল রাখেন, তাহলে তাঁদের ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা করা হবে। এক কারা কর্মকর্তা জানান, কারাবিধি অনুযায়ী কারো ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই তাঁদের কনডেম সেলে রাখা হয়। এই তিনজনের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।

বর্তমানে কাশিমপুর ২ নম্বর কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছেন তারেক সাঈদ ও এম মাসুদ রানা। আর আরিফকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর-১ কারাগারে। তারেক সাঈদকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর শুরুর দিকে তিনি বেশ দাপটের সঙ্গেই কথা বলতেন সবার সঙ্গে। ২০১৬ সালের দিকে বিশেষ সুবিধায় বেশ কিছুদিন তিনি হাসপাতালেও ছিলেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪৩ নম্বর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে ভর্তি ছিলেন তিনি। সেখানে নিয়ম ভেঙে ল্যাপটপ চালাতেন। ব্যবহার করতেন মোবাইল ফোনও। ওই সময় অনেকে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎও করতেন। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সাংবাদ প্রকাশিত হলে তাঁকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

কারা সূত্র জানায়, এখন তাঁদের আর আগের মতো দাপট দেখাতে দেখা যায় না। তিনজনই চুপচাপ থাকছেন। কারাগারের নিয়মানুযায়ী যা যা প্রাপ্য তা-ই পাচ্ছেন। কম্বল দিয়ে সেলের মেঝেতে ঘুমাতে হয় তাঁদের। খাবারও দেওয়া হয় সাধারণ বন্দিদের মতোই। কখনো কখনো জুটে শক্ত রুটি। এসব খেলেও তাঁরা কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান না বলে জানা গেছে।

কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারের জেলার আবু সায়েম কালের কণ্ঠকে জানান, তারেক সাঈদ ও মাসুদ রানা কনডেম সেলে আছেন। কাশিমপুর-১ নম্বর কারাগারের জেলার ঋতেশ চাকমা জানান, তাকে (আরিফ হোসেনকে) কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। একজন বন্দিকে কনডেম সেলে যে নিয়মে রাখা হয় তাকেও একইভাবে রাখা হয়েছে।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ