চিত্রনায়িকা তমা ও তাঁর স্বামী হিশাম চিশতির পাল্টাপাল্টি মামলা

যৌতুক, নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করেছেন চিত্রনায়িকা তমা মির্জা। অন্যদিকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেন এই নায়িকার স্বামী হিশাম চিশতী। মামলা দুটি হয়েছে বাড্ডা থানায়।

কয়েক সপ্তাহ আগে দুবাইয়ে তমা মির্জা ও তাঁর কানাডাপ্রবাসী ব্যবসায়ী হিশাম চিশতী দুবাইয়ে হানিমুন করতে যান। সেখানকার বেশ কিছু ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। জানা গেছে, দেশে ফেরার পর থেকে তাঁদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলতে থাকে। ৫ ডিসেম্বর রাতে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়।

এরপরই তমা তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় হাজির হয়ে নারী নির্যাতন মামলা ও সাইবার অপরাধ আইনের আওতায় মামলা করেন। মামলায় একমাত্র আসামি স্বামী হিশাম চিশতী। মামলার এজাহারে তমা মির্জা উল্লেখ করেছেন, বিয়ের পর থেকে তাঁর স্বামী হিশাম চিশতী বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য মারধর করতেন। এ ছাড়া অকারণে গায়ে হাত তুলতেন। এমনকি ফেসবুকে পরিচয় গোপন করে মানহানিকর কথাবার্তা বলতেন। এ ছাড়া হিশাম এই নায়িকার বাবা-মাকে ভয়ভীতি দেখান এবং হত্যার হুমকি দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি প্রকাশের ভয়ভীতি দেখান।

স্বামী হিশাম চিশতির সঙ্গে  তমা মির্জা

স্বামী হিশাম চিশতির সঙ্গে তমা মির্জা

অন্যদিকে তমা মির্জার মামলার পর স্বামী হিশাম চিশতী এই নায়িকাসহ তাঁর শ্বশুর–শাশুড়ি এবং ড্রাইভারের নামে মামলা করেন। হিশামের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মির্জা ফারজানা ইয়াসমিন তমা (তমা মির্জা) ও হিশাম চিশতীর প্রায় দেড় বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে বাবা-মায়ের প্ররোচনায় তমা হিশামের কাছ থেকে মোট ২০ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন। সেই ধারের টাকা ফেরত চাইলে কালক্ষেপণ শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর হিশাম কানাডা থেকে দেশে আসেন। তখন তমাকে তাঁর নিজের বাসায় থাকতে বলেন। কিন্তু নানা অজুহাতে তমা স্বামীর বাসায় না গিয়ে বাবার বাসাতেই থাকেন।

তমা মির্জা

তমা মির্জা

এরপর হিশাম শ্বশুরবাড়িতে গেলে তাঁর সঙ্গে তমাসহ বাড়ির সবাই খারাপ আচরণ শুরু করেন। একপর্যায়ে ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে তমা মির্জা হিশামকে তাঁর বাবার বাড্ডার বাসায় আসতে বলেন। সেই রাতে নানা বিষয়ে আলোচনার পর ধার নেওয়া ২০ লাখ টাকা চাইলে বাসার সদস্যদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় হিশামের। এর একপর্যায়ে বাড়ির সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে হিশামের ওপর আক্রমণ করেন। ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তাঁকে খুন করার চেষ্টা করা হয়।

এ ছাড়া লোহার চেয়ার দিয়ে আঘাত করলে ডান হাতে গুরুতর আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে যান হিশাম। তিনি চিৎকার শুরু করলে বাসার নিচের দারোয়ান ও আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি প্রথম আলোকে জানান, ৫ ডিসেম্বর রাতে তাঁকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আঘাতে আহত হয়ে ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এ কারণে মামলা করতে তাঁর কিছুটা দেরি হয়। হাসপাতালের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র তাঁর কাছে আছে।

মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে থাকা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার কারণে আমরা মোবাইল জব্দ করে ফরেনসিকে পাঠিয়েছি। তাঁরা যে মারামারি করেছেন, সেটার জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট দরকার। আমরা মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সবকিছু হাতে পেলেই জানা যাবে কোন অভিযোগ টিকবে আর কোন অভিযোগ টিকবে না। তখন মামলার অগ্রগতি হবে।’

উপস্থাপিকা ও নায়িকা তমা মির্জা

উপস্থাপিকা ও নায়িকা তমা মির্জা
 

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে এম‌ বি মা‌নিক প‌রিচা‌লিত ‘বলো না তুমি আমার’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ ঘটে তমা মির্জার। ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’, ‘পালাবার পথ নেই’, ‘মানিক রতন দুই ভাই’, ‘ছোট্ট সংসার’ প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। শাহ‌নেওয়‌াজ কাকলী প‌রিচা‌লিত ‘নদীজন’ ছবিতে অভিনয় করে পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চল‌চ্চিত্র পুরস্কার পে‌য়ে‌ছেন তমা মির্জা।

সূত্র:প্রথম আলো

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ