পাচারের অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ: সুইস ব্যাংকের সাড়া নেই বাংলাদেশের প্রস্তাবে

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছে না সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অধিকাংশ সময় তাদের কাছে তথ্য চেয়েও সব পাওয়া যায়নি। মাত্র দুটি ইস্যুতে সুইস ব্যাংক কিছু তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশকে। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার জন্য বারবার আগ্রহ দেখালেও তারা সাড়া দিচ্ছে না।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। ওই দেশের প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে কারও নাম উল্লেখ নেই।

আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে (অক্টোবরে তৈরি) অর্থ বিদেশে নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাব (যে হিসাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা জমা থাকে ও লেনদেন করা হয়) রূপান্তরযোগ্য করা হয়নি। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া প্রচলিত বিধির বাইরে বিদেশে কোনো অর্থ নেয়া যাবে না।

এদিকে সুইজারল্যান্ডে কোনো অর্থ নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। এছাড়া বিদেশে যারা আয় করেন বা প্রবাসী হিসেবে যারা বিদেশে আছেন তাদের আয় থেকে সঞ্চয়ের অংশ দেশে আনার বিধান রয়েছে। এগুলো দেশে না আনলে পাচার হিসেবে ধরে নেয়া যায়।

এছাড়া রফতানি আয় দেশে না এনে এবং আমদানির ব্যয় বেশি দেখিয়ে সুইজারল্যান্ডে অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব অর্থ ফেরত আনার জন্য ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়। এতে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কার কার টাকা জমা আছে তার তালিকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেয়নি।

এর পরের বছর ২০১৪ সালেও একই ধরনের চিঠি দেয়া হয়েছিল। এতেও সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাড়া দেয়নি। ফলে ওই বছর সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) করার জন্য তৎকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়। এতে সাড়া মেলেনি।

ওই সময়ে বিভাগটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরে এটি বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট নামে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। এরপর থেকে বিএফআইইউ এসব বিষয় দেখভাল করছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সবার আগে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর পদ্ধতিগত ভাবে এগোতে হবে। তাহলে সুফল পাওয়া যাবে। এখন মানি লন্ডারিং আইনের কারণে সুইস ব্যাংকও তথ্য দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারত ও আমেরিকাকে তারা অনেক তথ্য দিয়েছে।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ৬৮টি দেশের সঙ্গে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনাসহ সন্ত্রাসী অর্থায়ন কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে চুক্তি করেছে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারেনি। সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা অর্থের ব্যাপারেও কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।

তবে কয়েক বছর আগে বহুল আলোচিত এক ব্যবসায়ীর নামে সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে তখন বিএফআইইউ থেকে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয় তার নামে কি পরিমাণ অর্থ জমা আছে।

এ বিষয়ে প্রথমে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুসন্ধান করে বাংলাদেশকে জানায়, ওই নামে কোনো ব্যক্তির হিসাব সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে নেই। পরে বিএফআইইউ আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে তার স্ত্রী ও সন্তানের নামে অর্থ আছে কিনা জানতে চায়। এরপরও সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে এসব নামে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোতে কোনো হিসাব নেই।

এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা জানান, সুইস ব্যাংকে কেউ যদি ভিন্ন কোনো দেশের পাসপোর্ট বা বাংলাদেশের বেনামি কোনো পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সুইস ব্যাংকগুলোতে অর্থ জমা রাখেন তবে সেগুলো বের করা কঠিন। এ কারণে হয়তো সুইস ব্যাংকে টাকা জমা থাকলেও তার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি জানান, সুইস ব্যাংক সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য না দিলেও অনেক দেশ এখন বাংলাদেশকে তথ্য দিচ্ছে।

বিএফআইইইউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ড ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে পাচার করা অর্থ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সুইজারল্যান্ড থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে যেসব দেশ বিশেষ করে ভারত ও আমেরিকা কিভাবে সুইজারল্যান্ড থেকে তথ্য পেল সেগুলোর কৌশল সম্পর্কে জেনে সে পথে এগোনোর কথা বলা হয়েছে।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ