একটি রং নম্বরে ডায়ালের কারণে ফেঁসে গেলো হাজী সেলিম পরিবার!

সেলিমপুত্রের এই ঘটনার পর লেখক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী ফেসবুকে খেদ ও রসিকতার সঙ্গে লিখেছেন: ‘ভাই মাইর দিতে চান, তার জন্য পাবলিক আছে, হেগো পিটান কিচ্ছু হইবো না। উর্দির গায়ে হাত দিলে বিপদ…. এখন ঠেলা সামলান….।’ আফসান চৌধুরীর কথার সারমর্মই হলো এই যে, সেলিম সাহেবের ছেলে ইরফান আসলে রং নম্বরে ডায়াল করেছেন।

ছেলে ইরফান সেলিমের কারণে নতুন করে আলোচনায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম। অতীতে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই এমপি।

অতীত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজী সেলিমের নাম। অন্যায় অনিয়মের পথ ধরেই তার উত্থান। আর নিজের সেই উত্থান আরও এগিয়ে নিতে তিনি রাজনীতিকে ‘মই’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সে কারণে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘ক্ষমতার রাজনীতি’।



১৯৯৬ সালে তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার হাজী সেলিম জাতীয় নির্বাচনে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজ দল বিএনপি তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় যোগ দেন আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয় এবং তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান বিএনপি প্রার্থী নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে।

মূলত ওয়ার্ড কমিশনার থাকার সময় থেকেই রাজধানীর লালবাগ, চকবাজারসহ পুরান ঢাকার একটি বড় অংশ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন হাজী মোহাম্মদ সেলিম। অভিযোগ আছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন তিনি। আর এমপি হওয়ার পর রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্যাডার বাহিনী গঠন করে এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতেন বিতর্কিত এই জনপ্রতিনিধি।

বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে অন্তত ১২০টি মামলা দায়ের করা হয় হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে। খুন, খুনের চেষ্টা, নির্যাতন, চুরি এবং দুর্নীতি ও অবৈধ আয়ের কারণে এসব মামলা দায়ের করা হয়। নিজের বিভিন্ন অপরাধে সবসময় সহায়তা পেয়েছেন স্ত্রী গুলশান আরার। ২০০৮ সালের এপ্রিলে ২৭ কোটি টাকা জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য ১৩ বছরের জেল হয় সেলিমের। আর সেই সম্পদ নিজের কাছে রাখার জন্য ৩ বছরের জেল হয় তার স্ত্রী গুলশান আরার।

ছেলে ইরফান সেলিম এক নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধর করে গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে ১৮ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। ঘটনার রাত থেকেই সস্ত্রীক আত্মগোপনে আছেন হাজী সেলিম।

ক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি আইনের জাল থেকে বের হতেও তিনি ব্যবহার করেছেন রাজনীতিকে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এলেও দলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেননি হাজী সেলিম। তবে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হয়ে নির্বাচন করেন। হারান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে চমক দেখান হাজী সেলিম। ২০১৮ সালে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-৭ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে হারান তিনি।

সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিম পুত্র ইরফান সেলিমকে ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলর’ পদে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানেও ছেলেকে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ বানিয়ে নির্বাচন করিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিজে এমপি হওয়ার প্রভাব খাটিয়ে এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেলেকে বিজয়ী করেছেন হাজী সেলিম।

জনপ্রতিনিধি এই বাপ-বেটার বাড়িতে পাওয়া গেছে ইয়াবার মতো মাদক, মদ ও বিয়ার, গুলিভর্তি পিস্তল, অবৈধ ওয়্যারলেস ডিভাইস এবং ভয়ঙ্কর টর্চার সেল।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে হাজী সেলিমের মদিনা টাওয়ারের এক সাধারণ জুয়েলারি ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, এই চকবাজার এলাকায় সেলিম ও তার পরিবারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই। আমরা তার ভবনে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করি। কিন্তু আমাদের সঙ্গেও তার লোকেরা যে আচরণ করে তা বলার মতো না। শুধু তার ভবনেই না, আশেপাশের মার্কেট আর ভবনের ব্যবসায়ীদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় তার লোকদের। নইলে এই ভবনের অনেককেই ওপরে নিয়ে যাওয়া হতো। এতদিন শুধু গুজব শুনতাম যে ওপরে যাদের নেওয়া হয় তাদের শায়েস্তা করা হয়। আজ জানলাম সেখানে টর্চার সেল রয়েছে। তার বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেটের এসবের আশেপাশে সরকারি সড়কে কেউ গাড়ি পার্ক করতে পারে না, বাইক রাখতে পারে না। আমাদের গ্রাহকেরা এসব মার্কেটে এসে তার লোকদের কাছে হয়রানির শিকার হয়।

বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে হাজী সেলিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার যে বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালিয়েছে, সেই ভবনেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতাবানরা সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে। টর্চার সেলে নিয়ে হাড়গোড় ভেঙে দেয়। চাঁদাবাজি করে। বড় ব্যবসায়ী থেকে ফুটপাতের দোকানদার, কারো নিস্তার নেই। থানায় অভিযোগ করতে যাওয়ারও সাহস হয় না। আবার কেউ গেলেও যে ওই ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করবে—তারও নিশ্চয়তা নেই। অভিযোগ গৃহীত হলেও অপরাধীদের বিচার অনিশ্চিত। উল্টো অভিযোগকারী নিত্য-নতুন হয়রানির মধ্যে পড়তে পারেন।

সুতরাং, নির্যাতিত হয়েও মানুষ চুপ থাকেন। অপমানিত হয়েও তার প্রতিবাদ করেন না। বরং খেয়াল করে দেখেন যে আশপাশে কেউ দেখলো কী না! আর নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে, ‘আল্লায় বিচার করব’।

অথবা নির্যাতিত মানুষগুলো যখন পরস্পর এ নিয়ে কথা বলেন, তখন তারা খুব সাধারণভাবে এই কথা বলেন যে, ‘প্রকৃতির বিচার আছে…।’ তারা এসব বলেন কারণ তাদের নিজেদের কিছু করার নেই। তারা নির্যাতনকারীকে ধরে উল্টো পেটানোর ক্ষমতা রাখেন না। তারা জানেন, ন্যায়বিচার পাওয়া খুব সহজ নয়। অতএব, এসব বলে তারা নিজেদের মনকে বোঝান এবং সত্যি সত্যি প্রকৃতির বিচারের অপেক্ষায় থাকেন।

পুরান ঢাকার প্রভাবশালী এমপি হাজী সেলিমের ছেলে, যিনি নিজেও একজন কাউন্সিলর এবং যার শ্বশুরও একজন এমপি—নৌবাহিনীর একজন অফিসারকে মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার ও সাজা পাওয়ার পর ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ও সোশ্যাল মিডিয়ায়ও অনেকে এই ঘটনাকে ‘প্রকৃতির বিচার’ বলে মন্তব্য করেছেন।

অনেকে বলছেন, এটা আইনের শাসনের উদাহরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, যিনি একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা, ড. সেলিম মাহমুদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার রাষ্ট্রে গুন্ডামি-মাস্তানির সুযোগ নেই’।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘অপরাধীর সামাজিক পরিচয় যাই হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না’। প্রশ্ন হলো, প্রকৃতির এই বিচার পেতে মানুষকে কতদিন এবং কোন ঘটনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো?

পুরান ঢাকার যে এলাকায় হাজী সেলিম ও তার পরিবারের রাজত্ব, সেখানে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা নতুন কোনো সংবাদ নয়। শুধু নির্যাতন নয়, মানুষের সম্পদ দখল এমনকি নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণেও তাদের জুড়ি মেলা ভার। এতসব অন্যায় রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে কোনো অপরাধ করেই এখন পার পাওয়া কঠিন। কারো না কারো মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তা ঠিকই ধরা পড়ে যায়। কিন্তু, পুরান ঢাকার ‘জমিদার’ হিসেবে পরিচিত এই পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো। অর্থাৎ যতক্ষণ না নৌবাহিনীর একজন অফিসারকে হাজী সেলিমের ছেলে ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মারধর করলেন।

এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নটি জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে যে, এই ঘটনাটি যদি নৌবাহিনীর একজন অফিসারের সঙ্গে না হয়ে একজন সাধারণ মানুষ, একজন ব্যবসায়ী, একজন শিক্ষক এমনকি আপাতদৃষ্টিতে ক্ষমতাশালী পেশা হিসেবে পরিচিতি একজন সাংবাদিকের সঙ্গেও ঘটতো, তাহলে হাজী সেলিমের ছেলে গ্রেপ্তার হতেন বা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলখানায় পাঠানো হতো?

বাস্তবতা হলো, হাজী সেলিমের ছেলে যদি রাস্তায় একজন সাধারণ মানুষ, এমনকি সামাজিকভাবে যার একটি পরিচয় রয়েছে, এমন কাউকেও তিনি যদি মারধর করতেন, তাহলে প্রথমত ওই লোক থানায় গিয়ে অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযোগ আমলে নিতো কী না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে ওই ঘটনার কোনো ভিডিও থাকলে এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে ভিন্ন কথা। তখন দেখা যেত সরকারের প্রভাবশালী মহল থেকেই মামলা নেওয়া ও দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ওপর নির্দেশ আসতো।

কিন্তু ভিডিও না থাকলে বা সেটি নিয়ে সামাজিক ও গণমাধ্যমে হৈচৈ না হলে যিনি মার খেয়েছেন, তাকে চুপচাপ মার হজম করে এই সান্ত্বনা খুঁজতে হতো যে, ‘যাক, প্রাণটা তো যায়নি!’ আর তার পরিবার ও সুহৃদরা এই বলে সান্ত্বনা দিতেন যে, ‘প্রকৃতির বিচার আছে’।

মুশকিল হলো, ‘প্রকৃতির বিচার’ হতে গেলে আগে রং নম্বরে ডায়াল করতে হয়। সাধারণ মানুষকে পেটালে তার কোনো আইনি বা প্রাকৃতিক বিচারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু, দিনের পর দিন অন্যায় করে করে অভ্যস্ত মানুষগুলো যখন তার বা তাদের চেয়ে প্রভাবশালী কারো গায়ে হাত দিয়ে বসেন, তখনই তারা আটকে যান এবং সাধারণ মানুষ মনে করেন এটাই বোধ হয় ‘প্রকৃতির শাস্তি’। অথচ প্রকৃতির শাস্তি তো হওয়া উচিত ছিল একজন নিরীহ মানুষ যখন নির্যাতিত হয়েছেন, তখনই। কিন্তু, তা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বিচারালয়ে গিয়েও মানুষ বিচার পাননি।

এর আগে আরেকটি রং নম্বরে ডায়াল হয়েছিল কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে। গত ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা। এই নিয়ে তোলপাড় হলো। বিস্ময়করভাবে দেখা গেল, পুরো সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে, অর্থাৎ ‘ক্রসফায়ারে’ কেউ নিহত হয়নি। গণমাধ্যমের সংবাদ বলছে, প্রায় সাড়ে ১১ বছর পর ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ মুক্ত একটি মাস পেল বাংলাদেশ। তার মানে ‘ক্রসফায়ারমুক্ত’ একটি মাস দেখার জন্য দেশের মানুষকে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার নিহত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো! অথচ বছরের পর বছর ধরে মানুষ ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে বিনা বিচারে হত্যার সমালোচনা করে আসছিলেন।

‘ক্রসফায়ারে’ বিভিন্ন সময়ে অনেক বড় অপরাধী নিহত হলে সাধারণ মানুষ একে বাহবা দিলেও সামগ্রিকভাবে ‘ক্রসফায়ার’ গোটা রাষ্ট্রে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। কারণ একটা পর্যায়ে গিয়ে ‘ক্রসফায়ার’ আর বড় অপরাধী দমনের হাতিয়ার হিসেবে থাকেনি। বরং এটি হয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসৎ লোকের মোটা অঙ্কের পয়সা কামানোর মেশিন। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, খোদ জাতীয় সংসদেই ‘ক্রসফায়ারের’ পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন কোনো কোনো সংসদ সদস্য। অথচ সেই ‘ক্রসফায়ারের’ বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে তাদের অপেক্ষা করতে হলো একজন সেনা অফিসারের মৃত্যু পর্যন্ত। তার আগ পর্যন্ত ‘ক্রসফায়ার’ মোটামুটি বৈধই ছিল।

সুতরাং, বড় ধরনের কোনো অপরাধ বা অপরাধীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র নড়েচড়ে বসলেই এটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে, দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। বরং সেই ঘটনাটি কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটল, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

নৌবাহিনীর একজন অফিসারকে মারধরের অপরাধে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন, এটি অবশ্যই খুশির সংবাদ। কিন্তু, এই সংবাদটি আরও বেশি খুশি ও আনন্দের হবে, যখন একজন রিকশাচালক বা ফুটপাতের দোকানদারকে মারধরের অপরাধেও ওই প্রভাবশালীদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। যদি সেটা না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, রাষ্ট্র আসলে সাধারণ মানুষকে গোণে না, বরং তারা নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে ভয় পায়।

সবশেষ কথা, হাজী সেলিমের ছেলে খুবই প্রভাবশালী। তিনি নিজেও জনপ্রতিনিধি। তিনি যখন কাউকে মারধর করেন, সেটির প্রভাব একরকম। কিন্তু, পাড়ামহল্লায় যে বিশাল মাস্তানচক্র গড়ে উঠেছে, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের নেতা ও পাতিনেতারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেসব ন্যাক্কারজনক আচরণ করে, চাঁদাবাজি করে, মারধর করে, অপমান করে—তার কি কোনো বিচার হয়? এসবের নালিশ করার কোনো জায়গা আছে? স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী কোনো একজন নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তা আমলে নেয় না, যদি না অভিযোগকারী নিজেও কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাবান হন।

সুতরাং, একজন এমপির ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলেই আনন্দে আত্মহারা হওয়ার সুযোগ নেই। বরং আপনার পাড়া-মহল্লায়, চোখের সামনে প্রতিদিন কী ঘটে এবং সেসব ঘটনার বিষয়ে রাষ্ট্র কী আচরণ করে—সেদিকেও নজর রাখুন।

সূত্র- ডেইলি স্টার ও বাংলানিউজ

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ