আমিরাতের টলারেন্স মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ নারী ম্যাকনামারার যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

18 Oct, 2020

৩২ বছরের ব্রিটিশ নারী ক্যাটলিন ম্যাকনামারা অভিযোগ তুলেছেন আবু ধাবিতে হে সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে গেলে আমিরাতের টলারেন্স মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান মুবারক আল নাহিয়ান তাকে যৌন নির্যাতন করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে আমিরাতের ওই মন্ত্রী ম্যাকনামারাকে তার বাসায় বৈঠকের জন্যে ডাকেন এবং তিনি গেলে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়। ডেইলি মেইল/সানডে টাইমস

আবু ধাবির হে সাহিত্য উৎসবের আয়োজকরা ম্যাকনামারা আমিরাতের মন্ত্রীর কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ম্যাকনামারকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তবে আমিরাতের মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান তার বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন ম্যাকনামারার এধরনের অভিযোগে আমি হতবাক ও মর্মাহত হয়েছি।

শেখ নাহিয়ান আবু ধাবির রাজপরিবারের সদস্য এবং বিশে^র চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী তার সম্পদের পরিমান ৬৪০ বিলিয়ন পাউন্ড। ম্যানচেষ্টার সিটি ফুটবল ক্লাবের মালিকও তিনি।

ম্যাকনামারা আবু ধাবিতে শেখ নাহিয়ানের মন্ত্রণালয়ে ৬ মাসের জন্যে কাজ করতে যান এবং আমিরাতে প্রথম বারের মত হে সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করেন। তবে তিনি আর আমিরাতে ফেরত যেতে চাচ্ছেন না।

টাইমসকে ম্যাকনামারা বলেন আবু ধাবিতে থাকার সময় শেখ নাহিয়ান তাকে টেলিফোনে রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানান। এরপর হঠাৎ তাকে একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ির ড্রাইভার তাকে গন্তব্য সম্পর্কে জানতে নিষেধ করেন। আবু ধাবি শহর থেকে গাড়িটি একটি সেতু পার হয়ে একটি দ্বীপে যায়। আল-গুরম রিসর্টে নিয়ে যাওয়া হয় ম্যাকনামারাকে। সেখানেই শেখ নাহিয়ান তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাতে তাকে জড়িয়ে ধরেন। তাকে সাড়ে ৩ হাজার ডলারের একটি ঘড়ি ও হিরের অলঙ্কারও উপহার দেন। এরপর তারা মদ্যপানও শুরু করেন। সোফাসেটে এক পর্যায়ে শেখ নাহিয়ান ম্যাকনামারাকে স্পর্শ করেন এবং তার ওপর উপগত হওয়ার চেষ্টা করেন। শেখ তাকে চুম্বনও করেন।

এসময় নিজেকে কোনো রকমে ছাড়িয়ে নিয়ে ম্যাকনামারা প্রাসাদ ছেড়ে চলে আসতে চান এবং স্বর্ণের তৈরি লিফ্ট দিয়ে নামার সময় সেখানে শেখ নাহিয়ান তাকে ফের জড়িয়ে ধরেন। এক পর্যায়ে শেখ তার বুকেও হাত দেন। লিফটের ভেতরেই ম্যাকনামারাকে নগ্ন করে ফেলেন শেখ। ম্যাকনামারা নিষেধ করলেও শুরু হয় তার ওপর যৌন নির্যাতন।

এঘটনার পর ম্যাকনামারা দুবাইতে চলে যান। শেখ নাহিয়ান তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হে সাহিত্য উৎসব শুরু হয় এবং ৫ মার্চ ম্যাকনামারা লন্ডনে ফিরে আসেন। এঘটনার পর ম্যাকনামারা তার দীর্ঘদিনের বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। চাকরি হারিয়েছেন।

করোনাভাইরাস লকডাউন শুরু হলে ম্যাকনামারা প্রখ্যাত লেকক ফিলিপ্পি স্যান্ড যিনি মানবাধিকার বিষয়ক ব্যারিস্টার তার সঙ্গে দেখা করেন। ফিলিপ্পি ম্যাকনামারাকে ব্যারোনেস হেলেনা কেনেডি কিসি’র কাছে নিয়ে যান যিনি নারী অধিকারের জন্যে কাজ করেন। টাইমসকে কেনেডি বলেন একজন মন্ত্রী হয়ে যিনি নারীর ওপর যৌন নির্যাতন চালাতে পারেন তার পক্ষে সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজ হওয়া এক বিরাট অপরাধ। আমিরাতের উচিত তাকে বরখাস্ত করা কিন্তু তা কখনো ঘটবে না কারণ তার পরিবারই দেশটির মালিক।

লকডাউন প্রত্যাহারের পর ম্যাকনামারা ব্রিটিশ পুলিশকে বিষয়টি জানান। পূর্ব লন্ডনের স্টার্টফোর্ডে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ফ্যামিলি ইউনিট তার তিন ঘন্টা সাক্ষাতকার নেয়। পুলিশ তার বাসভবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।

সানডে টাইমস’এর পক্ষ থেকে শেখ নাহিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সরাসরি কথা বলেননি তবে লন্ডনে তার আইনজীবীরা এক বিবৃতিতে জানান ঘটনার আট মাস পর এধরনের অভিযোগে শেখ নাহিয়ান বিস্মিত।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ