নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু, কাঠগড়ায় পুলিশ : সিসিটিভি ফুটেজে গণপিটুনির প্রমাণ নেই

রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে রায়হান উদ্দিন (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। যদিও এই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ গণপিটুনির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। এলাকাবাসীও বলছেন, কাষ্টঘরে গণপিটুনির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই অভিযোগ করা হচ্ছে, পুলিশের নির্যাতনে খুন হয়েছেন রায়হান। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে রোববার ভোরে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা দাবি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

নগরীর কাষ্টঘর এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত। এই এলাকার পুরোটাই ক্লোজ সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতাভূক্ত। এসব ক্যামেরার মনিটর রয়েছে ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিমের কার্যালয়ে। রোববার রাতে মুনিমের কার্যালয়ে গিয়ে শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত কাষ্টঘর এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এসব ফুটেজে কোনো গণপিটুনির ঘটনা দেখা যায়নি। এমনকি এই সময়ে কাষ্টঘর এলাকায় পুলিশের কোনো টহলও দেখা যয়নি।

[১] অবশেষে ভেঙে ফেলা হলো ভবনের ঝুঁকিপুর্ণ অংশ ≣ [১] করোনাকে ভয় নয়, জীবনে এগিয়ে চলার বার্তা অক্ষয়ের ≣ [১] রাজধানীসহ সারাদেশে নৌবাহিনীর জীবাণুনাশক স্প্রে, খাদ্য সহায়তা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে

কাউন্সিলর মুনিম বলেন, আমি সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ওই এলাকার ফুটেজে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি। এছাড়া আমি কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সাথে কথা বলেছি। তারাও এরকম কিছু ঘটেছে বলে শুনেননি।

কাষ্টঘর এলাকার অনন্ত ২০ জন বাসিন্দাদের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা কেউই রাতে বা ভোরের দিকে কোনো্ গণপিটুনির কথা শুনেননি। কোনো চিৎকার চেঁচামেচিও শুনেননি তারা। তবে সকালে কাষ্টঘর পূজামণ্ডপের আশপাশের এলাকায় পুলিশ গিয়ে টহল দেয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

কাষ্টঘর পূজা মণ্ডপের পাশেই বাসা আইনজীবী সুমিত শ্যাম পলের। তিনি বলেন, প্রায় রাতেই এই এলাকায় মাদকসেবীদের চেচামেচি শোনা যায়। পুলিশের বাঁশির শব্দও শোনা যায়। তবে শনিবার রাতে বা রোববার ভোরে এমন কিছু শুনিনি। গণপিটুনির ঘটনা ঘটলে তো চিৎকার শোনা যেতো।

তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে এলাকায় পুলিশ আসে। এসময় তারা জানায়, ভোরে এই এলাকায় গণপিটুনিতে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, রায়হান হত্যার প্রতিবাদে রোববার বিকেলে নগরীর আখালিয়া এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এলাকাবাসীরও অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে খুন হয়েছেন রায়হান।

রোববার রাত ১২টায় সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, কিভাবে রায়হান উদ্দিন মারা গেলেন তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। তবে এখন পর্যন্ত কিছু পাইনি। এখনও আমি বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রয়েছি।

রায়হানের পরিবারের সদস্যরা জানান, নগরের মিরের ময়দান এলাকায় শাহজালাল ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে এক চিকিৎসকের সহকারি হিসেবে কাজ করতেন রায়হান। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাত ১০টার দিকে তিনি অফিস শেষে বাসায় ফেরেন। খাওয়া দাওয়ার পর ১১টার দিকে বাসার সামনের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে বের হন। এরপর তিনি আর বাসায় ফেরেননি তিনি।

রায়হান উদ্দিনের চাচা (যিনি রায়হানের সৎ বাবাও) হাবিবুল্লাহ বলেন, রোববার ভোর ৪টার দিকে একটি অপরিচিত নাম্বার (০১৭৮৩৫৬১১১১) থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হয়। ফোন ধরার পর কথা বলে রায়হান। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে ‘আমারে বাঁচাওরেবা। আমারে বাঁচাও।’ এরপর আমি তার অবস্থান জানতে চাইলে সে জানায়, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছে। এসময় ফাঁড়িতে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে বলে রায়হান।

হাবিবুল্লাহ বলেন, ফোন পেয়ে সাথেসাথেই আমি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যাই। তখন সেখানে অবস্থানরত একজন বলেন, সে (রায়হান) ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন দেখা করা যাবে না।

এরপর পাশ্ববর্তী কুদরতউল্লাহ মসজিদে নামাজ আদায় করে সকালে আবার পুলিশ ফাঁড়িতে যান উল্লেখ করে হাবিবুল্লাহ বলেন, ফাঁড়িতে যাওয়ার পর একজন লোক আমাকে বলেন, ‘আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথাছিলো। টাকা এনেছেন?’ কিছু টাকা এনেছি জানানোর পর তারা আমাকে বসিয়ে রাখেন। এরপর ১০টার দিকে বলেন, ‘আপনার ছেলের শরীর খারাপ করেছিলো। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওসমানী হাসপাতাল গিয়ে তাকে দেখতে পারবেন।’

হাবিবুল্লাহ বলেন, এরপর আমি ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পারি হিমঘরে রায়হানের লাশ পড়ে আছে। পুলিশই নির্যাতন করে রায়হানকে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ তার।

ওসমানী হাসপাতালের নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রায়হানের মরদেহ ওসমানী হাসপাতালে আনা হয়।

এ ব্যাপারে হাবিবুল্লাহকে কল দেওয়া নাম্বারে (০১৭৮৩৫৬১১১১) যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি।

এই নাম্বারটি কার তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।

বন্দরবাজার ফাঁড়ি নগরের কোতোয়ালি মডেল থানার অধীনে। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সেলিম মিঞা ছুটিতে আছেন। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র জানান, ভোরে কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে আহত হন রায়হান। যিনি একাধিক ছিনতাই মামলার আসামি। পুলিশ তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

সূত্র- সিলেটটুডে

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ