কুয়েতের আদালতে এমপি পাপুলের বিচার শুরু

মানব পাচার, অন্যায্য ভিসা বিক্রি, অর্থ পাচার ও ঘুষ লেনদেনের চার অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিচার শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের কোনো এমপিকে এর আগে কখনই বিদেশের মাটিতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। পাপুলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আজ আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে বলে জানিয়েছে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন। কুয়েত ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে এমপি পাপুলের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাপুলের বিষয়ে কুয়েত সরকার বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানায়নি। সে দেশের আদালতে পাপুলের অপরাধ প্রমাণিত হলে এবং কুয়েত সরকার ওই তথ্য আমাদের অবহিত করলে আমরা তার (পাপুল) বিষয়ে সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেব।’

গত ৬ জুন এমপি পাপুলকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন কুয়েতের সরকারি কৌঁসুলিরা। সে সময় তার প্রতিষ্ঠানের এক হিসাবরক্ষকসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ২৪ জুন তাকে ২১ দিনের জন্য কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে এমপি পাপুলসহ ছয়জন এখন কারাগারে আছেন। জামিনে রয়েছেন দুই কুয়েতি এমপি ও একজন পলাতক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাপুলের বিষয়ে নিজ থেকে কোনো তথ্য চাইবে না বাংলাদেশ। কুয়েত সরকার তথ্য জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত ৯ জুলাই সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংসদ পাপুল সম্পর্কে বলেন, ‘দ্বৈত নাগরিক প্রমাণ হলে নিয়ম অনুযায়ী তার (পাপুল) আসন খালি করে দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশেও তদন্ত চলছে।’

এদিকে পাপুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর টুইটারে দেওয়া কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মানব পাচার, অর্থ পাচার ও কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কুয়েতের নাগরিক নন। অভিযুক্ত ব্যক্তি কুয়েতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে যে তথ্য প্রচার হচ্ছে তা সঠিক নয়।’ এ সংক্রান্ত তথ্য প্রচারের সময় সব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সঠিক তথ্য প্রচারের আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনে আনা অভিযোগগুলো হচ্ছে ঘুষ দেওয়া, অর্থ পাচার, মানব পাচার এবং ভিসার অবৈধ লেনদেন। গত ১৫ জুন কুয়েতের আরবি ভাষার দৈনিক আল-কাবাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাপুল তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ ৫০ হাজার দিনার বা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৮ ডলার উপহার দিয়েছিলেন। এর আগে একই পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাপুলের সঙ্গে বিদেশি কর্মীদের পাচারের এসব ঘটনায় কুয়েতের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং কর্মকর্তাও জড়িত আছেন। এ মামলায় কুয়েতের আরও কয়েকজন অভিযুক্ত রয়েছেন, যাদের মধ্যে দেশটির দুজন আইনপ্রণেতাও রয়েছেন।

এমপি পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনিসহ তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর অংশ হিসেবে সেলিনা ও তার বোন এবং লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুদক।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ