মর্টগেজ ডিফারেলে আসছে নতুন নির্দেশনা

লিখেছেন রিয়েল্টর শিহাব উদ্দিন

জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে মর্টগেজ ডিফারেল দীর্ঘায়িত হবার সম্ভাবনার কথা |  মর্টগেজ পরিশোধে অক্ষম বাড়িওয়ালাদের জন্যে হয়তো বছর শেষে  অব্যাহত সুযোগ সুবিধা, সহজ শর্তে ঋণ পরিশোধসহ কতিপয় বিকল্প উপস্থাপন করা হতে পারে। করোনা মহামারীর প্রাক্কালে গত মার্চের মাঝামাঝিতে মর্টগেজ পরিশোধের ব্যাপারে কড়াকড়ি শিথিল করে ডিফারেল সিস্টেম চালু হয়েছিল| ফলে সুবিধাভোগীরা ছয় মাস সময়ের জন্যে মর্টগেজের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় পেয়েছেন।

এই ডিফারেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে  সরকারী মর্টগেজ ইন্সুরেন্স কানাডা মর্টগেজ এন্ড্ হাউজিং কর্পোরেশন (CMHC) বলছে যে মহামারীর প্রাদুর্ভাব এখনো কাটেনি|  প্রাদুর্ভাবের ভুক্তভোগীদেরকে এই সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যেতে সাহায্য করার জন্য নতুন কোনও উপায় খুঁজতে হচ্ছে তাদের। CMHC  ইতিপূর্বে ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে  বিবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে ছয় মাস পর্যন্ত মর্টগেজ স্থগিতকরন, পরিশোধের সময় বৃদ্ধি এবং ঋণ  পুনঃপরিশোধকালীন সময়ে আগের অপরিশোধিত ঋণ পরিশোধের সুযোগ।

কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে যেসব বাড়ির মালিক ইতিমধ্যে মর্টগেজ প্রদানে ছাড় পেয়েছেন,  তাদের সুবিধার্থে এই ডিফারেলের সময়সীমা পার হবার আগেই  CMHC এর পক্ষ থেকে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হচ্ছে। তা না হলে অক্টোবরের আগেই নতুন এবং পুরাতন বাড়ি মালিকদের বিশাল এক ঋণের বোঝা মাথায় চেপে যাবার বিস্তর সম্ভাবনা রয়েছে, যা এই অর্থনৈতিক মন্দাকালীন সময়ে মোটেই কাম্য নয়। বিষয়টিকে আরো দায়িত্বশীল এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করে যথোপযুক্ত একটি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কানাডাবাসীকে এই মহামারী থেকে উত্তরন করতে CMHC গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করতে চাচ্ছে। এই বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে এবং যথাসময়ে তা কানাডাবাসীর সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে CMHC |

CMHC এর এই মন্তব্য তখনই সামনে আসলো যখন কানাডা এমন একটি সময় অতিক্রম করছে, যেখানে বাড়ির মালিকদের পাহাড়সম ঋণের বোঝা নিয়ে মার্চ থেকে চড়া সুদসমেত  ঋণ পরিশোধের কথা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার না হলে তাদের মর্টগেজের এক-পঞ্চমাংশ পর্যন্ত বকেয়া পড়ে যেতে পারে।

ক্রেডিট ইউনিয়নগুলোর সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এই বিশাল ঋণ পরিশোধের বাস্তবসম্মত উপায় ভুক্তভোগীদের সামনে নিয়ে আসা এবং ডিফারেলের সময়সীমা বৃদ্ধি। আশাব্যঞ্জক ব্যাপার হল, CMHC  এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত রয়েছে। তারা ভাবছে এমতাবস্থায় কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে এবং খুব শীঘ্রই তারা একটা সমাধানে পৌছাতে পারবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

কানাডিয়ান ক্রেডিট ইউনিয়ন এসোসিয়েশন CCUA সহ বেশ কয়েকটি বড় শিল্পসংস্থা গত জুন মাসে CMHC এর সাথে পরামর্শ করেছে COVID-19 মহামারীর এই সময়ে মর্টগেজ প্রদানের সময়সীমা বাড়ানো বিষয়ে। এছাড়াও তারা নিবিড়ভাবে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। তাদের মতে বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে ডিফারেলের সময়সীমা বাড়ানোর বিকল্প নেই। Credit union  গুলোর পর্যবেক্ষনের সারমর্ম হচ্ছে, ‘৬ মাসের ডিফারেল সময়সীমা’ ভুক্তভোগীদের সঙ্কট নিরসনে পর্যাপ্ত নয়। তারা এই সময়সীমা আরো বাড়ানোর পক্ষপাতী। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, CMCH ভাবছে চার ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই করোনাকালীন মহামারীতে মর্টগেজ সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব যার মধ্যে আছে মর্টগেজ আদায়ের সার্বিক সময়সীমা বৃদ্ধি, অন্তর্বর্তীকালীন টার্মের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশেষায়িত ঋণ প্রদানের সুযোগ এবং অপরিশোধিত অর্থ  মর্টগেজের সাথে পরিশোধের ব্যবস্থা করা।

 এদিকে CMCH এর একজন মুখপাত্র জানান যে ঋণগ্রহীতাদের সাথে মর্টগেজ সংক্রান্ত স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে খোলাসা  আলোচনা কিঞ্চিত অপরিপক্ষতার পরিচায়ক। পক্ষান্তরে CCUA ধারণা করছে,  ক্রেডিট উনিয়নের মোটামুটি ৮০% মেম্বার ডিফারেলের সময়সীমা বৃদ্ধিকরন এবং পুরো প্রক্রিয়াটাকে ঢেলে সাজানোর পক্ষপাতী।

অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যেও সম্প্রতি তাদের মর্টগেজ ডিফারেলের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে| কানাডাতেও ডিফারেলের বাস্তবায়ন সময়োপযোগী এক পদক্ষেপ হতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ভূমিকা রাখতে হবে, যার মাধ্যমে সরকার বুঝতে পারবে যে ডিফারেলের সময়সীমা বৃদ্ধি করা কতটা যথোপযুক্ত এবং কী হারে বাড়ানো উচিত।

তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে নতুন এই মডেল সবার জন্য এক রকম হবেনা| ডিফারেল সুবিধার শুরুর দিকে ঢালাওভাবে প্রায় সকল আবেদনকারীই মর্টগেজ পিছিয়ে নেবার সুযোগ পেয়েছেন| দ্বিতীয় মেয়াদে এটা অবশ্য পুরোপুরি একইরকম হবে না। বরং সকল আবেদনকারীকেই একটি স্ক্রিনিং মেথডের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে  যাতে যোগ্য এবং অধিকতর সমস্যাগ্রস্ত ঋণগ্রহীতারা তাদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে ভালো অবস্থানে থাকা ঋণগ্রহীতাদের চেয়ে আগে এই সুবিধা ভোগ করবেন|

 

লেখক : প্রকৌশলী শিহাব উদ্দিন, 

রিয়েল এস্টেট ব্রোকার , (৫১৪) ৩৬৮ ৯০০০

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ