মন্দা বাজারে রিয়েল এস্টেটেই  বিনিয়োগ নিরাপদ

লিখেছেন রিয়েল্টর শিহাব উদ্দিন

বিনিয়োগ ক্ষেত্রের প্রাচুর্যতা আধুনিক বাজার ব্যবস্থার এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। লোভনীয় মুনাফার হাতছানি উপেক্ষা করে সঠিক সঠিকভাবে পোর্টফোলিও ম্যানেজ করা যেকোন বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত| বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস জনিত মহামারীর প্রাদুর্ভাবে সর্বস্তরের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।  পোড় খাওয়া ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নতুন বিনিয়োগে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাসবার মনেই ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে। 

শত অনিশ্চয়তার মাঝেও কিছুটা হলেও নির্ভার আছেন রিয়েল এস্টেটে নিয়োগকারীরা।  অন্য অনেক ব্যবসার ক্ষেত্রে বর্তমানে বৈশ্বিক যে মন্দার প্রভাব দেখা যাচ্ছে, রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে এখনো সেরকম পরিলক্ষিত হয়নি|  মন্দাকালীন সময়ে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের কার্যকারিতা আপাতদৃষ্টিতে কতটা ফলপ্রসূ তা সহজে আন্দাজ করতে পারা না গেলেও, যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর উপযোগিতা অনুধাবন করা সম্ভব। বিজনেস এনালিস্টদের মতে অর্থনীতির এই শ্লথগতি চলা কালীন সময়ই হচ্ছে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করার মোক্ষম সময়।

স্টক মার্কেট যেখানে বর্তমান অস্থিতিশীল অর্থনীতির সাথে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ এখনো অক্ষত। বিশেষতঃ যারা এই মন্দাকালীন সময়ে লোকসান এড়িয়ে লাভের মুখ দেখতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য রিয়েল এস্টেট আকর্ষণীয় এক বিকল্প। আয়ের এক সম্পূরক উৎস হিসেবে রিয়েল এস্টেটের রয়েছে ভালো সম্ভাবনা।

সাধারণত: কতিপয় ভুল ধারণা থেকে সৃষ্ট আতঙ্কে অনেক বিনিয়োগকারী হাউজিং মার্কেটে বিনিয়োগ করতে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে থাকেন। বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া বেশকটি অর্থনৈতিক মন্দার নেপথ্যে রিয়েল এস্টেট মার্কেটের ভূতুড়ে স্ফীতিকেই দায়ী করা হয়। এহেন পরিস্থিতিতে অনেকের মনেই ভয় কাজ করে যে এরকম অপ্রত্যাশিত স্ফীতির পুনরাবির্ভাবের কারণে লোকসান গুনতে হয় কিনা। প্রকৃতপক্ষে, অতীতের উল্লেখযোগ্য পাঁচটি মন্দার তিনটাতেই রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির মূল্য উর্ধ্বমুখীই ছিল, যা অবশ্যই আজকের মন্দা-পরিস্থিতির সাথে মানানসই এবং আশাব্যঞ্জক। 

এটা অনেকটা “No Brainer” যে মন্দাকালীন সময় হচ্ছে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের জন্য মোক্ষম সময়। নতুন বিনিয়োগকারী, যারা স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করবেন, নাকি রিয়েল এস্টেটে টাকা খাটাবেন এই দোটানায় ভুগছেন, তাদের সুবিধার্থে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের তিনটি সুফল নিয়ে আলোচনা করা হল।

টেকসই আয়ের নিশ্চয়তা: 

আপনি যদি একটা নিয়মিত নির্দিষ্ট আয়ের উৎস হাতে রাখার জন্যে বিনিয়োগ করতে চান, তবে রিয়েল এস্টেটের চেয়ে ভালো বিকল্প আপনার হাতে নেই। সেটা হতে পারে নিজের মালিকানাধীন ইনভেস্টমেন্ট অথবা রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টে (REIT) বিনিয়োগ| এক্ষেত্রে খুব বেশি পুঁজি বা পূর্ব অভিজ্ঞতার দরকার হয় না, উপরন্তু ঝুঁকিমুক্ত থেকে ভালোই রিটার্ন পাওয়া যায়।

নিজের মালিকানাধীন রিয়েল এস্টেটে সরাসরি সম্পত্তির মালিকানা থেকে যেখানে আপনি ভাড়ায় খাটিয়ে নির্ভরযোগ্য উপার্জন করার সুযোগ পাচ্ছেন,  সেখানে REIT-থেকে পাচ্ছেন খাটানো অর্থের লভ্যাংশ (Dividend) | 

উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে মন্দাকালীন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নির্দিষ্ট একটা এমাউন্টের আয়ের প্রবাহ ধরে রাখার সুবিধা। উপার্জনের উপর এই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ আপনি স্টক মার্কেট বা অন্য কোথাও আশা করতে পারেন না। 

স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অনন্য:

স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে আশানুরূপ লাভ করতে চাইলে অন্য অনেক নিয়ামকের পাশাপাশি বাজারের স্থিতিশীলতার দিকেও আপনাকে তাকিয়ে থাকতে হবে, কেননা স্টক মার্কেটে বাজারের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর পাশাপাশি বাহ্যিক আরো অনেক কিছু বিনিয়োগকারীর ভাগ্যের চাকা নিয়ন্ত্রণ করে। সবকিছু ঠিক থাকার পরেও বাজারে অদৃশ্য শক্তির প্রভাবের কারণে আপনাকে বড়সড় লোকসান গুনতে হতে পারেপক্ষান্তরে, রিয়েল এস্টেট মার্কেট বাহ্যিক প্রভাবকের দ্বারা এতো সহজে নিয়ন্ত্রিত হয় না। 

আবাসন বাজারের এহেন স্থিতিশীলতা আপনার বিনিয়োগকে করে সুরক্ষিত। স্বাভাবিক সময়ে কিংবা মন্দাকালীন সময়ে, রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ থেকে বিনিয়োগকারীর প্রাপ্ত আয়ে খুব একটা পরিবর্তন হয়না,  যেহেতু আপনার প্রপার্টির সেবা গ্রহণের জন্যে কোন না কোন ক্রেতা থাকছেই। এটি এমন এক চাহিদা যা মন্দার ওপর কোনক্রমেই নির্ভরশীল নয়, সুতরাং লোকসানের আশঙ্কা থেকে আপনি থাকছেন সুরক্ষিত।

এটা ঠিক, বাহ্যিক প্রভাব রিয়েল এস্টেটের ওপর প্রত্যক্ষভাবে না পড়লেও একেবারেই যে পড়ে না, তা কিন্তু নয়। ২০০৮ সালের বিশাল অর্থনৈতিক অচলাবস্থার বেলায় যেটা দেখা গিয়েছিল। ঐ সময়ে একক বাড়িওয়ালাদের বেশ ভালোই ক্ষয়ক্ষতি পোহাতে হয়েছিল।তবে ঐসময়, অন্য ধরণের রিয়েল এস্টেট যেমন  স্টোরেজ মাল্টিফ্যামিলি হাউজিংয়ের মতো প্রপার্টিগুলো সাধারণত অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় বেশি দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছিল। 

তবে বাণিজ্যিক ভবন কিংবা অফিস স্পেসের ক্ষেত্রে এই কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। মন্দা অবস্থায় এই ধরণের প্রপার্টিতে বিনিয়োগে ঝুঁকির পরিমাণই বেশি, কেননা এইধরণের প্রপার্টির সেবাগ্রাহকদের কার্যক্রম মন্দার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। অর্থনীতি যতই খারাপের দিকে যাবে, এই খাতে আয়ের পরিমাণ ততই সঙ্কুচিত হবে।

স্টক কিংবা বন্ডের চেয়ে রিয়েল এস্টেট অধিক মুনাফাধারী:

কোন কিছু অতীতে সাফল্যের সাথে কাজ করলেও এটা যে সার্বক্ষণিকভাবে বজায় থাকবে, তা দাবী করা ঠিক না। তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যাবে  যে, পূর্বের প্রায় সকল অর্থনৈতিক মন্দার ক্ষেত্রেই রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বিনিয়োগকারীদের পক্ষে দারুণ দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে। মন্দাবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়| এক্ষেত্রে স্টক বা বন্ডের চেয়ে রিয়েল এস্টেট ভালো পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে|

সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করা যায় যে, বর্তমানের সঙ্কটকালীন  মুহূর্তে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব। 

একজন বিনিয়োগকারী কতটা বিচক্ষণতার সাথে কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন, তার ওপর নির্ভর করে তিনি বিনিয়োগের ওপর কী পরিমাণ রিটার্ণ লাভ করবেন। বিশাল অঙ্কের রিটার্ন লাভের আশা পরিত্যাগ করে বাস্তবমুখী হতে হবে| ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে৷ গৎবাঁধা ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বাজার বিশ্লেষন করে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। সার্বিক ঝুঁকি আর আপনার ব্যয় করার সামর্থ্য বিবেচনা করে সেরা বিনিয়োগটাই আপনাকে বেছে নিতে হবে। সামগ্রিক পর্যালোচনা শেষে এই সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে যে, বর্তমান বাজারে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগই সেরা বিনিয়োগ। 

 

 

লেখক : প্রকৌশলী শিহাব উদ্দিন, 

রিয়েল এস্টেট ব্রোকার , (৫১৪) ৩৬৮ ৯০০০

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ