যে হত্যায় কেঁপে উঠল ইরান

ভোরের আলো ডেষ্ক: একটি হত্যা ঝড় তুলেছে পুরো ইরানজুড়ে। একজনকে ভালোবাসার অপরাধে ১৪ বছরের বালিকা রমিনা আশরাফিকে হত্যা করেছে তার বাবা! এ ঘটনায় স্তব্ধ ইরানের জনগণ। অনার কিলিংয়ের নামে এমন হত্যা বন্ধে কঠোর আইনের দাবি উঠেছে।

ইরানের বর্তমান আইন অনুযায়ী, অনার কিলিংয়ে বা কোনো ব্যক্তি যদি তার মেয়েকে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তাকে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়ার নিয়ম রয়েছে সেখানে। যদিও অন্যান্য খুনের ক্ষেত্রে সাধারণত অর্থ বা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সে কারণেই আইন পরিবর্তনের দাবিতে আওয়াজ উঠেছে সর্বস্তর থেকে।

রমিনা আশরাফিকে হত্যার দায়ে গত ২৬ মে তার বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি হ্যাশট্যাগে রমিনা আশরাফি ব্যবহার করে নিন্দা জানানো হয়েছে। এসব টুইটে এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়। আজাদেখত নামে একজন টুইট করেন, ‘বস্তাপঁচা ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির কারণেই রমিনাদের মতো মেয়েদের জীবন দিতে হচ্ছে।’ ফাতেমে সুসারি নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী টুইট করেন, ‘ইরানের লাখ লাখ নারীর কণ্ঠস্বর আশরাফি’।

ইরানের সাংবাদিক ও মানবধিকার কর্মী মাসিহ আলিনেজাদ টুইট করেন, ‘যতোদিন পর্যন্ত মেয়েদের প্রতি বৈষম্যমুলক এই আইন থাকবে ততোদিন পর্যন্ত এমন নির্যাতন চলতেই থাকবে।’ দেশটির সংস্কারপন্থী পত্রিকা এবতেকার এক প্রতিবেদনে নারী ও কিশোরীদের সুরক্ষায় দেশটির বিদ্যমান আইনের ব্যর্থতার সমালোচনা করে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব রেসিসটেন্স অব ইরান এর নারী বিষয়ক কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমাদের মধ্যযোগীয় নীতি ও আইনের পরিণতি এই রমিনা। আমাদের আইনই এমন হত্যাকান্ড উৎসাহিত করছে।’ প্রতিষ্ঠানটি জানায়, রমিনার ঘটনার এক সপ্তাহ আগে বালুসিস্তান প্রদেশের সিস্তানে এমন আরেকটি অনার কিলিং হয়েছে। সেই নারীর দুই বছরের একটি সন্তানও ছিলো। তেহরান পুলিশ দাপ্তরিক এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৪ সালে সব হত্যার ২০ শতাংশ ছিলো অনার কিলিং।

ইরানের নারী ও পরিবার বিষয়ক সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান সোসাইটি ফর প্রটেকটিং উইমেনস রাইটস এর সেক্রেটারি শাহিনদখত মোলাবার্দি বলেন, ‘নির্মম হত্যার শিকার রমিনা প্রথম নয় শেষও নয়। যতোদিন বিদ্যমান আইন ও সংস্কৃতি থাকবে ততোদিন এমন হত্যাকান্ড চলবে।’

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এমন হত্যা বন্ধে তিনি কঠোর আইনের আহবান জানিয়েছেন এবং পার্লামেন্টে যতো দ্রুত সম্ভব বিল আনার নির্দেশ দিয়েছেন।  ইরানের আইন বিষয়ক উপমন্ত্রী মাহমুদ আব্বাসি বলেন, ‘যথাযথ বিচারের আওতায় আমরা এ হত্যাকারীকে কঠিন সাজা দেব।’ ইরানের নারী ও পরিবার বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকার বলেন, ‘নারীর নিরাপত্তা নিশ্চেতে আমরা একটি বিল আনার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। পরবর্তী মন্ত্রীসভা বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।’

সাধারণত অনার কিলিং তাকেই করা হয় যাকে মনেকরা হয় পরিবারের জন্য অসম্মান বয়ে এনেছে।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ