বোরকা নিষিদ্ধের দেশ ফ্রান্সে এখন মুখ না ঢাকলেই জরিমানা

ভোরের আলো ডেষ্ক: আইন করে মুসলিম নারীদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করা ইউরোপের দেশ ফ্রান্সের পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর দেশটির নাগরিকরা এখন মুখ ঢেকে চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন! এমনকি মুখোশ না পরে বা মুখ না ঢেকে চলাফেরা করলে ১৫০-১৬৫ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে। তবে বোরকা নিষিদ্ধই থাকছে।

রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রন গত সপ্তাহে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে ফরাসী পতাকার নীল, সাদা এবং লাল ফিতে দিয়ে সজ্জিত একটি নেভির মুখোশ পরেছিলেন। মুখের আচ্ছাদনের নকশাটি দেখে মনে হতে পারে যে তারা স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের আদর্শগুলোর উপর জোর দিয়েছে।

সম্প্রতি বিএফএম টিভির এক জরিপে দেখা গেছে যে, ফ্রান্সের ৯৯ শতাংশ মানুষ মুখোশ পরাকে সমর্থন করেছেন। ফ্রান্সে যে ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে এই সিদ্ধান্ত বদলের পেছনের তার বড় ভুমিকা রয়েছে।

মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক করা হলেও বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে জানিয়ে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছে, কভিড -১৯ মহামারি চলাকালীন সময়েও বোরকা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তবে করোনা মাহামারির কারণে লোকদের মুখ ঢেকে চলতে হবে। এ সময় মুখ না ঢাকা থাকলে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এমন মুখোশ দিয়ে মুখ ডাকতে হবে যেটা ধর্মীয় প্রতিনিধিত্ব করে না। এই আইন লঙ্ঘন করলে ১৫০-১৬৫ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।

২০০৪ সালে, দেশটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় নিরপেক্ষতাকে কারণ দেখিয়ে সব সরকারী বিদ্যালয়ে হিজাব নিষিদ্ধ করেছিল। ২০১০ সালে, জনসাধারণের যে কোনও জায়গায় পুরোপুরি মুখ ঢেকে রাখে এমন বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধ করেছিল, এই যুক্তি দিয়ে যে এই পোশাকগুলো জনগণের সুরক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং সমান নাগরিক অধিকারের একটি সমাজের এটা প্রতিনিধিত্ব করে না।

করোনায় আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ৬ নম্বর অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৬ হাজার ৩১০ জন।

সম্প্রতি ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘প্যারিস ফ্যাশন সপ্তাহ’- এ মডেলরা মুখোশ পরেই অংশগ্রহণ করেন। মডেলদের পরিহিত মুখোশগুলো দেখতে অনেকটাই মুসলিম নারীদের হিজাবের মতোই ছিল।

শুধু ফ্রান্সেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় নারী মডেল থেকে শুরু করে সবাই মুখোশ পরছেন। নিরাপত্তার বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেই তারা এ মুখোশ পরছেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ফ্রান্স যখন প্রথম ‘মুখ ঢাকা পোষাক’ নিষিদ্ধ করে তখন তা ইউরোপে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করে। ইউরোপে ফ্রান্সই ছিল প্রথম দেশ যারা এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়। ফ্রান্সে কেবল বোরকা নয়, মুখ ঢাকা যে কোনো পোশাক, মুখোশ, বালাক্লাভা, হেলমেট বা হুড – যা পরিচয় গোপন রাখতে সহায়তা করে, তা নিষিদ্ধ।

সূত্র- ওয়াশিংটন পোস্ট।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ