৩টি ভেন্টিলেটর প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে ওয়ালটন

ভিন্ন তিন মডেলের তিনটি ভেন্টিলেটরের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে দেশীয় প্রযুক্তি কোম্পানি ওয়ালটন। আজ তারা সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে।

আগামীকাল এই ভেন্টিলেটরগুলো তারা ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেবেন বলে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তিনটি ভেন্টিলেটরের মধ্যে দুটি ওয়ালটনের নিজস্ব মডেল আর একটি করা হয়েছে বিশ্বখ্যাত মেডিক্যাল ডিভাইস কোম্পানি মেডিট্রনিক্স-এর নকশা অনুসারে। ডব্লিউপিবি-৫৬০ মডেলের এই ভেন্টিলেটরটি তৈরি করতে মেডিট্রনিক্স-এর প্রযুক্তিগত সহায়তাও পেয়েছে ওয়ালটন।

এর আগে গত ৩১ মার্চ একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মেডিট্রনিক্স তাদের পিবি-৫৬০ মডেলের ভেন্টিলেটরের প্যাটেন্ট, ডিজাইন এবং সোর্স কোড তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।

ভেন্টিলেটরগুলো কোনো হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্যে দেওয়া হবে বা কয়দিন এর ক্লিনিক্যাল টেস্ট চলবে সেটি এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে ওই ক্লিনিক্যাল টেস্টের ওপরেই নির্ভর করছে ভেন্টিলেটরগুলোতে কোনো পরিবর্তন-পরিমার্জন করতে হবে কিনা।

পলক বলেন, ক্লিনিক্যাল টেস্টিংয়ের পরেও আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা কোনো সংস্থার অনুমোদন লাগবে কিনা সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঠিক করবে।

ইতিমধ্যে ভেন্টিলেটরগুলোর উৎপাদনের জন্যে যন্ত্রাংশ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে সেসব যন্ত্রপাতি দেশে এসে পৌঁছাতে মে মাসের শেষ নাগাদ লেগে যাবে বলে জানান ওয়ালটনের ভেন্টিলেটর প্রকল্প-প্রধান প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ।

প্রাথমিক পরিকল্পনা হিসেবে ডব্লিউপিবি-৫৬০ মডেলের কয়েকশ ভেন্টিলেটর তৈরি করা হতে পারে। তবে প্রয়োজন হলে পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার পর্যন্ত ভেন্টিলেটর যাতে তৈরি করা যায় তার প্রস্তুতি থাকছে তাদের, জানিয়েছে ওয়ালটন।

তবে মে মাসের পর দেশের পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তার ওপরেই অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে জানান ওয়ালটনের ভেন্টিলেটর প্রকল্পের উপদেষ্টা প্রকৌশলী লিয়াকত আলী ভুঁইয়া।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছেন, মেডিট্রনিক্সের হায়দ্রাবাদের রিসার্চ অ্যান্ড ডেলেপমেন্ট টিম শুরু থেকেই ওয়ালটন এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে থেকে কাজ করেছে।

ভেন্টিলেটরগুলো গুণগত পরীক্ষায় পাস করবে বলে আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছে ওয়ালটনের একাধিক কর্মকর্তা।

তবে এই প্রযুক্তি পণ্যটির মূল্য কত হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা।

মেডিট্রনিক্স এর সাবেক চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কোম্পানি ওমর ইশরাক বাংলাদেশের সন্তান যিনি এখন প্রসেসর কোম্পানি ইন্টেলের প্রধান, মূলত তার কারণেই বাংলাদেশ মেডিট্রনিক্স-এর ভেন্টিলেটরের প্যাটেন্ট, ডিজাইন এবং সোর্স কোড পায় বাংলাদেশ।

প্রথম দিকে ওয়ালটন ছাড়াও আরএফএল এবং মিনিস্টার ছাড়াও আরও কয়েকটি কোম্পানি এই ভেন্টিলেটর তৈরির বিষয়ে আগ্রহী ছিল। তবে পরে শেষ পর্যন্ত ওয়ালটনই পায় কাজ।

এদিকে মিনিস্টারও তাদের মতো করে ভেন্টিলেটর তৈরি করে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে চীন থেকে একটি ভেন্টিলেটর আমদানি করতে অন্তত সাত লাখ টাকা লাগে। ইউরোপ থেকে আনতে লাগে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা।

ভেন্টিলেটর হলো এমন একটি যন্ত্র যা দিয়ে শ্বাসকষ্টের রোগীদের বিকল্প পন্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখা যায়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ফুসফুস অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক মতো কাজ করে না। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে অনেকই মারা যাচ্ছেন।

শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই এখন ভেন্টিলেটরের ব্যপক চাহিদা। কিন্তু সেই তুলনায় যোগান রয়েছে খুবই কম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মাত্র এক হাজারের মতো মতো ভেন্টিলেটর আছে। আর অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে এই মুহূর্তে যন্ত্রটি আমদানির কোনো সুযোগ নেই।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ