প্রকৃতির নিজ হাতে অপরুপ সাজে সজ্জিত পরিত্যক্ত কিছু স্থান

লিখেছেন জিকরুল আমিন

পরিত্যক্ত বলতেই প্রথমে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধ্বংসস্তুপে আবৃত থমথমে আবেশে মোড়ানো কোনো এক স্থানের কথা। মানুষের পথচলায় গড়ে ওঠে একেকটি শহর-জনপদ, আবার তা কালের বিবর্তনে বিলীনও হয়ে যায়। আর মানুষের জন্য যখন কোনো স্থান থাকার অনুপযোগী হয়ে যায়, তখন সেটাকে প্রকৃতি আপন করে নেয়। যেখানে মানুষ তার অস্তিত্ব রাখতে ব্যর্থ হয়, প্রকৃতিই সেখানে নিজের অস্তিত্বকে স্থান দিয়ে দেয়। আর সেই স্থানগুলোকে প্রকৃতি নিজের রুপে এমনভাবে সাজিয়ে নেয়, যা মানুষের কল্পনাকেও হার মানায়। অকৃত্রিম সৌন্ধর্যের দীপ্তি প্রকৃতি ছড়িয়ে দেয় মানুষের পরিত্যক্ত স্থানগুলোতে। প্রকৃতির আপন করে নেয়া এমন কয়েকটি সৌন্দর্যঘেরা পরিত্যক্ত স্থান নিয়ে সাজানো আজকের এই লেখা।

হাউটৌয়ান, চীন

Image Courtesy: wanderlust.com

চীনের সাঙহাই থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত এই শহরটি। ১৯৯০ সালের দিকে পারিপার্শ্বিক কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য শহরের প্রায় ২,০০০ বাসিন্দা স্থানটি পরিত্যাগ করে। মূলত শিক্ষা ও খাদ্য সরবরাহজনিত সমস্যার কারণে মানুষ স্থানটি ত্যাগ করে।

সবুজ লতার আচ্ছাদনে আবৃত হয়ে আছে সেখানকার পরিত্যক্ত ভবনগুলো। প্রকৃতি যেন তার নিজস্ব রুপে সাজিয়ে রেখেছে শহরের বাড়িগুলোকে। দেখলে মনে হবে সবুজের সমারোহে সাজানো এক শহর।  বর্তমানে দর্শনার্থীদের জন্য এটি জনপ্রিয় একটি স্থানে পরিণত হয়েছে।

একটুকরো ভাসমান বন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

Image Courtesy: www.reddit.com

এস এস আরফিল্ড নামক এক জাহাজ ১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়ার হোমবুশ উপসাগরে ভেঙে যায় এবং সেখানেই থেকে যায়। আস্তে আস্তে এটি গাছপালায় ভরে যেতে থাকে। প্রায় একশ বছরের পুরোনো এই পরিত্যক্ত জাহাজে প্রকৃতির কৃপায় গড়ে ওঠা বনটি যেন প্রকৃতির স্বাভাবিক ক্ষমতার এক উদাহরণ হয়ে আছে।

পুরোনো দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, সিন্তারা, পর্তুগাল

Image Courtesy: pinterest

পর্তুগালের লিসবনের পাদদেশে অবস্থিত ছোট একটি শহর সিন্তারা। রুপকথার গল্পের মতো অদ্ভুত সুন্দর রঙিন দুর্গে বেষ্টিত শহরটি। যদিও অনেক অংশই এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সেগুলো যেন সৌন্দর্যের এক আভায় নিজেকে আচ্ছাদিত করে আছে, যার আকর্ষণে সেখানে প্রতিবছরই ছুটে যায় দর্শনার্থীরা। চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা ছোট শহরটি যেন এক মনোরম শান্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবুজ মসের আচ্ছাদন দুর্গের ধ্বংসাবশেষগুলোকে যেন এক অপরুপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে রেখেছে।

NewsletterSubscribe to our newsletter and stay updated.

নিউ ওয়ার্ল্ড মল, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

Image Courtesy: wanderlust

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের খাও সান রোডের পাশেই অবস্থিত এই শপিংমলটি। ভবনটি তৈরির পরিকল্পনাজনিত ত্রুটির কারণে শপিং মলটি ১৯৯৭ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। এর কয়েক বছর পরেই প্রকৃতিও শপিংমলটি আপন করে নেয়। গ্রাউন্ড ফ্লোর নির্মাণজনিত ত্রুটির কারণে পানিতে প্লবিত হয়ে যায় আর সেখানেই মাছেরা তাদের নিজেদের রাজ্য তৈরি করে নেয়। ফটোগ্রাফারদের জন্য বর্তমানে এটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।

কলম্যান্সকপ, নামিবিয়া

Image Courtesy: wanderlust

আটলান্টিক উপকূল ঘেষে নামিব মরুভূমির অবস্থান নামিবিয়ার সৌন্দর্যের একটি অংশ হয়ে রয়েছে।  বর্তমানে ভূতের নগরী নামে পরিচিত এই স্থানটি মরুভূমির মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। ১৯০০ সালের দিকে এটি হয়ে উঠেছিল অন্যতম মূল্যবান এক গ্রাম। ডায়মন্ডের খনিকে কেন্দ্র করে এখানে শহরটি গড়ে ওঠে। ১৯৫৬-৬০ এর মাঝামাঝি সময়ে খনি বন্ধ হয়ে গেলে মানুষজন স্থানটি ত্যাগ করে এবং গ্রামটিকে আস্তে আস্তে মরুভূমির বালি গ্রাস করে নিতে থাকে।

ভ্যালি দ্য মুলিন, সরেন্টো, ইতালি

Image Courtesy: wanderlust

বিখ্যাত স্থাপত্য ও চিত্রকর্মের জন্য ইতালির খ্যাতি সারাবিশ্বে। তারই একটি ছাপ রয়ে গেছে সরেন্টোতে অবস্থিত ভ্যালি দ্য মুলিন-এ। আশেপাশের সুন্দর রাস্তা ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের আবহ যেন এক অপরুপ আকর্ষণে পূর্ণতা দান করেছে। এখানের পরিত্যক্ত মিলগুলো প্রায় সাতশ বছরের পুরোনো, যা এখন সবুজ গাছপালায় পূর্ণ হয়ে আছে। বর্তমানে এটি দেশটির অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান

প্রিপায়াত, চেরোনবিল, ইউক্রেন

জনমানবহীন চেরনোবিল; Image Courtesy: kurious

ইতিহাসের আলোচিত চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার কথা অনেকেই জানেন। ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল রাতে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ পারমাণবিক বিস্ফোরণের সাক্ষী হয়ে আছে শহরটি।

বন্যপ্রাণীরা শহরটিতে এখন ঘুরে বেড়ায়; Image Courtesy: highheatkillsbedbugs

দুর্ঘটনার পর খুব দ্রুত শহরের সকল বাসিন্দাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং শহরটিকে কয়েক হাজার বছরের জন্য বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়। এর আশেপাশের প্রায় ৫০ মাইল এলাকার ভেতর কেউ বাস করে না। আর মানুষের বসবাসের অনুপযোগী শহরটি এখন পুরোটাই প্রকৃতির দখলে।পশুপাখি ও বন্যপ্রাণীর এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে শহরটি।

হাশিমা দ্বীপ, নাগাসাকি, জাপান

 Image Courtesy: kyushu

এটি জাপানী ভাষায় ‘গুনাকানজিমা’ বা ‘ব্যাটলশিপ আইল্যান্ড’ নামে পরিচিত। ষোল একরের এই দ্বীপটি একসময় খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত হতো। কয়লা শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হয়, যা এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ১৮৮৭ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এখানে খনির কাজ চলমান ছিল। পরবর্তীতে নাগাসাকি কর্তৃপক্ষ খনির কাজ বন্ধ করে দিলে এখানে অবস্থানরত সকলে স্থানটি ত্যাগ করে। ২০১৫ সালে স্থানটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। টাইফুনের হাত থেকে বাঁচার জন্য এখানে সবচেয়ে বড় কনক্রিট স্টোরেজ ভবন গড়ে ওঠে। দ্বীপটিতে প্রায় ৬,০০০ লোকের বসবাস ছিল।

ট্রেন গ্রেভইয়ার্ড, বলিভিয়া

 Image Courtesy: atlasobscura

বলিভিয়ার ইউনি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানটি। প্রায় ১০০টির মতো ট্রেন এই স্থানটিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। রৌদ্র-তপ্ত ও লবণাক্ত আবহাওয়ার এই স্থানটি এখন ফটোগ্রাফারদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়াও হাঙ্গেরি, আলাস্কাতেও এরকম ট্রেন গ্রেভইয়ার্ড রয়েছে।

টানেল অফ লাভ, ইউক্রেন

 Image Courtesy: wallpapersafari

ইউক্রেনের পশ্চিমে ক্লেভানে অবস্থিত সবুজ সারি লতানো গাছ দিয়ে সাজানো প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পরিত্যক্ত রেলপথটি টানেল অফ লাভ নামে পরিচিত। টানেলকে ঘিরে রাখা সবুজ লতানো গাছ এক অপরুপ সৌন্দর্যের আবহ সৃষ্টি করে। প্রিয়জনকে নিয়ে এই সৌন্দর্যের মাঝে রোমান্টিক মুহুর্ত কাটানোর জন্য জায়গাটি অনেক জনপ্রিয়। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে টানেলের লতাগুলোও রুপ পরিবর্তন করতে থাকে, যেন রঙিন মোড়কে স্থানটিকে সাজিয়ে নেয়।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ