যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ প্রেমিকের গুলিতে বাঙালি তরুণী নিহত

সুবীর কাস্মীর পেরেরা, মেরিল্যান্ড থেকে

আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের গুলিতে বাঙালি তরুণী নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে এই ঘটনা ঘটে। সিনথিয়া কস্তা (২২) নামের এই তরুণী তার কৃষ্ণাঙ্গ প্রেমিক ডেরিক ম্যান-এর সাথে দেখা করতে গেলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার ইন্ডিয়ানা পুলিশ ফোন করে সিনথিয়ার বাবা এন্ড্রু ডি’কস্তাকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। সিনথিয়া তার বাবা এন্ড্রু ডি’কস্তা ও মা সিসিলিয়া কস্তা মেরিল্যান্ডের সিলভার স্প্রিং শহরে নিজ বাড়িতে বসবাস করতো। এই ঘটনা মেট্রো ওয়াশিংটনের বাঙালিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ঘটনার পর নিহতের বাড়িতে কমিউনিটির মানুষ ছুটে আসে। সিনথিয়াকে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার মা কিছুক্ষণ পর পর কান্না করে মেয়ের কথা বলছেন সবাইকে। সিনথিয়ার নানী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার বাবা অঝোরে কেঁদে চলেছেন মেয়ে হারানো বেদনায়।

নিহতের মা সিসিলিয়া জানান, সিনথিয়া চাকরি সুবাদে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি সম্মেলনে গেলে ডেরিক নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের দেখা হয়। প্রথম দেখতে ডেরিক সিনথিয়া ভালো লাগলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সিনথিয়া বিষয়টি নিয়ে মা বাবার সাথে আলাপ করে। তারা যুবকে দেখতে চাইলে সে ওই যুবককে বাসায় নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীতে কর্মরত সুঠাম দেহের ডেরিকের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে না চাইলে সিনথিয়া নিজের তাগিদে ওই যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। যুবক ভার্জিনিয়ায় থাকতে সিনথিয়া প্রায় যুবকের বাড়ি চলে যেত। এক সময় যুবকের সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে সিনথিয়া ছয় মাস পূর্বে মা বাবার কাছে চলে আসেন। মা কারণ জানতে চাইলে সিনথিয়া জানান, ওই যুবক সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়েছে এবং তাকে ইন্ডিয়ানা নিজ বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে মেরিল্যান্ড ছাড়তে চায় না। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্যের কারণে সে চলে আসে ছয় মাস পূর্বে।

গত ১৩ জানুয়ারি সিনথিয়া নিজে ড্রাইভ করে ইন্ডিয়ানা যুবকের সাথে দেখা করতে যায় মা বাবার বাধা উপেক্ষা করে। সিনথিয়া ইন্ডিয়া থেকে তার মার সাথে প্রতিদিন টেলিফোনে বলতো সব ঠিক আছে। গত শুক্রবার বিকেলে ইন্ডিয়ানা পুলিশ সিনথিয়ার বাবাকে বলে, তার মেয়ে গুলিতে নিহত হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। প্রথমে ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়ে চেয়েছিলো। পরে ময়না তদন্তে দেখা গেছে তাকে পিছন থেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করলে পিছন থেকে কিভাবে গুলি করা সম্ভব? পুলিশ সন্দেহভাজন যুবককে জেরা করলে সে খুঁজের কথা স্বীকার করে। মৃতদেহ এখনো ইনিডিয়ানা মর্গে রয়েছে।

এই ঘটনায় ওয়াশিংটন বাঙালি পাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় বিভিন্ন পেশার মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

মেট্রো ওয়াশিংটনে দীর্ঘদিন করে সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাবলু গমেজ। তিনি তার টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজের জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বর্তমান ও আগামী অভিভাবকদের উচিত নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়বস্তু সন্তানদের সামনে তুলে তুলে ধরা যা পূর্বে ছিল না। পিতামাতাকে বর্তমান প্রজন্মের মিশ্র সংস্কৃতি এবং সন্তানদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব ওপর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সন্তানরা যেন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেতে পারে সে দিকে উৎসাহ দিতে হবে।

বাংলাদেশ খ্রিষ্টান কমিউনিটি সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিটি নেতা বাবলু ডি’কস্তা বলেন, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তবে এই ঘটনা থেকে পিতামাতারা শিক্ষা নিতে পারে।

রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লী প্রবাসী কল্যাণ সমিতির প্রেসিডেন্ট সুবাস আব্রাহাম ডি’কস্তা বলেন, পিতামাতাকে আরও সচেতন হতে হবে। ছেলে-মেয়ে কোথায় যায়, তার বন্ধুরা কেমন পরিবেশের এই বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। সন্তানদের বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট, মোবাইল এবং ট্যাব ব্যবহার থেকে দূরে রাখতে হবে। সর্বোপরি সন্তানকে নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে। আদর্শ পরিবার ঘটনা পিতামাতার ভূমিকা অনেক। সুন্দর পরিবার গঠনে পিতামাতার ভূমিকা কি কি তা জানতে হবে। তিনি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ